টিকাকরণের হার নিয়ে উদ্বেগ অব্যাহত। —ফাইল চিত্র।
আগেভাগে প্রাপ্তবয়স্কদের টিকাকরণের ঘোষণা হয়ে গেলেও, বেশির ভাগ রাজ্যে তা শুরুই করা যায়নি। যদিও ঘাটতির কথা বরাবর অস্বীকারই করে আসছে কেন্দ্র। কিন্তু এ বার তাদের পরিসংখ্যানেই দেশে টিকাকরণের বাস্তবচিত্র সামনে এল। তাতে দেখা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশের মতো বড় রাজ্যগুলিতে জনসংখ্যার অর্ধেককে এখনও একটি করে টিকাও দিয়ে উঠতে পারেনি কেন্দ্র।
২০২১ সালে দেশের মোট জনসংখ্যার ৩৩ শতাংশকে টিকা দিতেও ভারতকে হিমশিম খেতে হতে পারে বলে সম্প্রতিই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ)। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে, সেই আশঙ্কাই নতুন করে মাথাচাড়া দিচ্ছে।
কেন্দ্রের তরফে যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে রাজ্যভিত্তিক মোট জনসংখ্যার কত শতাংশ অন্তত একটি করে টিকা পেয়েছে, তার হিসেব দেওয়া রয়েছে। সেই তালিকায় একেবারে নীচে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশকে অন্যদের তুলনায় বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে বলে শুরু থেকেই অভিযোগ তুলে আসছে বিরোধীরা। উত্তরপ্রদেশ সরকারও সম্প্রতি বিদেশ থেকে টিকা কিনতে উদ্যত হয়েছে।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কিন্তু কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, রাজ্যের মোট জনসংখ্যা যেখানে ২০ কোটি ৪২ লক্ষ, সেখানে টিকা পেয়েছেন মাত্র ১৩.৪০ শতাংশ। অর্থাৎ একটি করে টিকা পেয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ১৭ লক্ষের কাছাকাছি। একই ভাবে, ১০ কোটি জনসংখ্যার পশ্চিমবঙ্গে একটি করে হলেও টিকা পেয়েছেন মাত্র ৯৭ লক্ষ মানুষ, যা মোট জনসংখ্যার মাত্র ৯.৭১ শতাংশ।
সংক্রমণ এবং মৃত্যুর নিরিখে বরাবরই দেশের মধ্যে শীর্ষে মহারাষ্ট্র। টিকা এবং ওষুধের জোগান নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সরাসরি সঙ্ঘাতেও জড়িয়েছে তারা। সেখানে একটি করে হলেও টিকা পেয়েছেন ১ কোটি ৫৩ লক্ষ মানুষ। মহারাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যা যেখানে ১১ কোটি ৪২ লক্ষ, সেখানে মাত্র ১৩.৪০ শতাংশই একটি করে হলেও টিকা পেয়েছেন। ১ কোটি ৯০ লক্ষ জনসংখ্যার দিল্লিতে একটি করে টিকা হলেও টিকা পেয়েছেন ৩৯ লক্ষ মানুষ, যা মোট জনসংখ্যার ২০.৪৫ শতাংশ।
কোভিডের প্রকোপে দিল্লির মতো গুজরাতেও শবমিছিল দেখা গিয়েছিল। সেখানে একটি করে হলেও টিকা পেয়েছেন ১ কোটি ১ লক্ষ মানুষ, যা রাজ্যের ৬ কোটি ২৭ লক্ষ জনসংখ্যার ১৬.৯৫ শতাংশ। কর্নাটকের মোট জনসংখ্যা ৬ কোটি ৪১ লক্ষ। এর মধ্যে একটি করে হলেও টিকা পেয়েছেন ৭২ লক্ষ, যা রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ১৪.৪৩ শতাংশ।
তবে বড় রাজ্যগুলিতে টিকাকরণের বাস্তব চিত্র যেখানে উদ্বেগজনক, সেখানে লাদাখ এবং লক্ষদ্বীপের পরিস্থিতি খানিকটা হলেও সন্তোষজনক। যদিও সেটা জনসংখ্যার তারতম্যই এর প্রধান কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী, একটি করে হলেও টিকার পাওয়ার নিরিখে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে লক্ষদ্বীপই। সেখানকার মোট জনসংখ্যা যেখানে ৬৪ হাজার ৪২৯, সেখানে ২৩ হাজার মানুষ একটি করে হলেও টিকা পেয়েছেন। অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ৩৫.৮০ শতাংশ একটি করে হলেও টিকা পেয়েছে সেখানে। ২ লক্ষ ৭৪ হাজার জনসংখ্যার লাদাখে ৩২.৭০ শতাংশ একটি করে হলেও টিকা পেয়েছেন। সবমিলিয়ে সেখানে ৮৯ হাজার ৬০০ মানুষ একটি করে হলেও টিকা পেয়েছেন।