ফাইল চিত্র
প্রশ্নের উত্তর না-দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন। যুক্তি ও তথ্যের মাধ্যমে দোষ খণ্ডনের পরিবর্তে পাল্টা দোষারোপ। পিএম কেয়ার্স তহবিল ঘিরে শনিবারও উত্তপ্ত রাজনৈতিক তরজার সাক্ষী থাকল লোকসভা।শুক্রবার লোকসভায় বিরোধীদের গোড়া থেকেই প্রশ্ন ছিল, প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিল (পিএমএনআরএফ) থাকতেও নতুন করে পিএম কেয়ার্স তহবিল তৈরির প্রয়োজন পড়ল কেন? যে তহবিলে প্রধানমন্ত্রী পদের নাম উল্লেখ করে টাকা জমা নেওয়া হয়, তার জন্য দেওয়া হয় করছাড়ের সুবিধা, তার খুঁটিনাটি সিএজি-র সামনে মেলে ধরতে অসুবিধা কোথায়? কেনই বা আপত্তি তথ্যের অধিকারে সেই সম্পর্কে প্রশ্নে? কিন্তু সেই সমস্ত প্রশ্ন এড়িয়ে গত কাল উল্টে পিএমএনআরএফ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। ওই তহবিলের টাকার অপব্যবহারের সঙ্গে গাঁধী পরিবারের নাম জড়িয়ে দিয়ে কংগ্রেস শিবিরকে তাতিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, এক দিক থেকে বিজেপির ওই কৌশল অনেকটাই সফল। কারণ, পিএম কেয়ার্সের বিষয়ে মূল প্রশ্ন ও প্রসঙ্গ থেকে সরে গিয়ে শেষমেশ ওই আলোচনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল নিখাদ রাজনৈতিক তরজা।
শনিবারও কার্যত সেই একই ছবি বহাল রইল লোকসভায়। বিরোধীরা বার বার প্রশ্ন তুললেন, যে তহবিলে প্রধানমন্ত্রী পদের নাম করে টাকা তোলা হবে, সেখানে এত অস্বচ্ছতা কেন? অনুরাগের যুক্তি, পিএমএনআরএফ তহবিলে স্থায়ী সদস্য কংগ্রেস সভাপতি কেন, আগে সেই প্রশ্নের উত্তর দিন বিরোধীরা। নাম না-নিয়েও গাঁধী পরিবারকে এই বিষয়ে এ দিন নাগাড়ে আক্রমণ করেছেন তিনি। কেন ওই তহবিলের টাকা গাঁধী পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামাঙ্কিত অছি পরিষদে দেওয়া হত, কোন যুক্তিতে বাজেটে ওই সমস্ত ট্রাস্টে বরাদ্দ করতেন অর্থমন্ত্রী, সেই প্রশ্ন উঠেছে। এই প্রসঙ্গে নাম টেনে এনেছেন রাজীব গাঁধী ফাউন্ডেশন থেকে শুরু করে ত্রিমূর্তি ভবনের। জানতে চেয়েছেন, পিএমএনআরএফ তৈরির পরে তা নথিভুক্ত করা হয়নি কেন? কেনই বা ১৯৮৫ সালের পরে আর কোনও বৈঠক হয়নি সেখানে? সন্ত্রাসবাদী কাজে মদতে অভিযুক্ত জ়াকির নায়েকের টাকা কী ভাবে রাজীব গাঁধীর নামাঙ্কিত ট্রাস্ট নিয়েছিল, চিন থেকে কেন এসেছিল ৩ লক্ষ ডলারের অনুদান, প্রশ্ন তুলেছেন সেই সমস্ত বিষয়েও।
জবাবে কিছুটা দিশাহীন দেখিয়েছে কংগ্রেসকে। লোকসভায় দলনেতা অধীর চৌধুরী কখনও বলেছেন, সংসদে সনিয়া গাঁধীর অনুপস্থিতিতে তাঁর সমালোচনা করা যুক্তিযুক্ত নয়। আবার কখনও পড়ে শুনিয়েছেন প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু সম্পর্কে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর দরাজ প্রশংসা। জিজ্ঞাসা করেছেন, এই নেহরুর পিএমএনআরএফ ফান্ডে দুর্নীতির অভিযোগ তুললে অটলজির আত্মাও শান্তি পাবে কি? তিনি অনুরাগকে যে সম্বোধন গতকাল করেছিলেন, তা নিয়ে এ দিনও চাপানউতোর হয়েছে লোকসভায়। শেষ পর্যন্ত তা বাদ গিয়েছে রেকর্ড থেকে। জবাবি বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন দাবি করেন, তথ্যের অধিকার থেকে শুরু করে করছাড়ের মতো বিভিন্ন বিষয়ে পিএম কেয়ার্সের সঙ্গে পিএমএনআরএফের ফারাক নেই। বরং প্রথমটির পরিচালন-বন্দোবস্তে বেশি স্বচ্ছ। কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব সেখানে নেই। একই সঙ্গে বলেন, মুখ্যমন্ত্রীদের জন্য পিএম কেয়ার্সের মতো ত্রাণ তহবিল তৈরির সম্ভাবনা অঙ্কুরে বিনাশ করে গিয়েছে ইউপিএ সরকারই।
কিন্তু দিনের শেষে রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, বিরোধীর কাজ প্রশ্ন তোলা। উত্তর দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু কৌশলে পিএম কেয়ার্সের বিষয়ে উত্তর দেওয়ার পরিবর্তে লোকসভায় বার বার শুধু পুরনো তহবিল নিয়ে প্রশ্ন তুলে চলেছে সরকারি বেঞ্চ। যদি আগের তহবিলে গরমিল থাকে, তবে তা নতুনটিরও অস্বচ্ছতার যুক্তিযুক্ত কারণ হতে পারে কি? নির্মলা অবশ্য একাধিক বার অধীরকে স্পষ্ট বলেছেন, অনুরাগের প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর না-দেওয়া পর্যন্ত পিএম কেয়ার্স সম্পর্কে প্রশ্ন তোলার নৈতিক অধিকারই কংগ্রেসের নেই।