আলোচনা: অর্থ মন্ত্রকের বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
করোনার ধাক্কায় দেশের বিধ্বস্ত পর্যটন শিল্প নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। আশ্বাস দিলেন, সুরাহার রাস্তা খোঁজার। একই দিনে সারা বিশ্বের পর্যটন শিল্পের বিবর্ণ ছবি তুলে ধরল রাষ্ট্রপুঞ্জও। শুধু অতিমারির তাণ্ডবে এই ক্ষেত্রের বিপুল সংখ্যক কাজ সঙ্কটের মুখে বলে তাদের দাবি।
মঙ্গলবার বণিকসভা সিআইআইয়ের সঙ্গে বৈঠকে নির্মলা বলেন, “পর্যটন, হোটেল-রেস্তরাঁ, বিমান পরিবহণ, আবাসনের মতো কিছু ক্ষেত্রে তুলনায় বেশি ধাক্কা লেগেছে।’’ আর এই সমস্ত ক্ষেত্র অর্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রেও বিপুল প্রভাব ফেলে বলে মানছেন তিনি। কারণ, পর্যটন, বিমান পরিষেবা, হোটেল-রেস্তরাঁর মতো ক্ষেত্র পরস্পরের সঙ্গে জড়িত। এই সমস্ত ক্ষেত্রের উপরে আবার নির্ভরশীল আরও অনেক শিল্প। সব মিলিয়ে, এর সঙ্গে জড়িত বহু মানুষের রুজি-রুটি। শিল্পমহলের উদ্বেগ কমাতে অর্থমন্ত্রীর আশ্বাস, হোটেল, ব্যাঙ্কোয়েট ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে যে সব নিয়ম-বিধি মেনে চলতে হয়, তাতে কিছু ছাড় বা রদবদলের সুযোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে কেন্দ্র।
করোনার জেরে দেশে শুধু পর্যটন শিল্পেই ২ থেকে ৫.৫ কোটি কাজ গিয়েছে বলে কবুল করেছে কেন্দ্র। মেনেছে যে, অবস্থা তথৈবচ বিমান পরিবহণ শিল্পেরও। সূত্রের খবর, ১৭ অগস্ট পর্যটন, পরিবহণ এবং বিমান পরিষেবা সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পর্যটনসচিব যোগেন্দ্র ত্রিপাঠী জানিয়েছেন, অতিমারিতে বিধ্বস্ত পর্যটন শিল্পেই শুধু কাজ খুইয়েছেন ২ থেকে ৫.৫ কোটি জন। রাজস্ব ক্ষতির অঙ্ক ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা। বিমান পরিবহণের বেহাল দশার কথা মেনেছেন ওই মন্ত্রকের সচিব পি এস খরোলাও।
আরও পড়ুন: নীরব-পত্নীর বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস ইন্টারপোলের
এর আগে লকডাউন চলাকালীনই সিআইআইয়ের পূর্বাভাস ছিল, করোনার জেরে ভারতের পর্যটন শিল্পের ক্ষতির অঙ্ক দাঁড়াবে অন্তত ৫ লক্ষ কোটি টাকা। শুধু ব্র্যান্ডেড হোটেল, টুর অপারেটর, ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলিরই সম্ভাব্য ক্ষতির অঙ্ক ১.৫৮ লক্ষ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে কাজ খোয়াতে পারেন ৪-৫ কোটি মানুষ। এমন শঙ্কার পূর্বাভাসের এত দিন পরেও সরকার কেন ওই শিল্পের পাশে এখনও সেই ভাবে দাঁড়ায়নি, সেই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য স্পষ্ট নয়।
তবে পর্যটনের এমন বেহাল দশা যে সারা বিশ্বেই, এ দিন রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিসংখ্যানে তা স্পষ্ট। এ দিন ওই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সেক্রেটারি জেনারেল আন্তোনিয়ো গুতেরেস বলেন, “পৃথিবীতে প্রতি ১০টির একটি কাজের সুযোগ তৈরি হয় পর্যটনের হাত ধরে। অতিমারির জেরে শুধু গত ৫ মাসে ওই ক্ষেত্রে ক্ষতির অঙ্ক ৩২ হাজার কোটি ডলার। সঙ্কটের মুখে অসংখ্য লোকের কাজ।” তাঁর মতে, সারা দুনিয়ার জন্য এই ধাক্কা দুশ্চিন্তার তো বটেই, কিন্তু আরও বেশি করে তা সমস্যায় ফেলছে উন্নয়নশীল দেশগুলির অর্থনীতিকে। নির্মলার উদ্বেগেও সে কথা খানিকটা স্পষ্ট।