সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বে বিরোধীদের বৈঠক।
সরকার দরিদ্র মানুষের প্রতি একেবারেই সমব্যথী নয়। বরং সংস্কারের নামে রাষ্ট্রায়াত্ত সংস্থাগুলি বেচে দেওয়া হচ্ছে। করোনা-সহ একাধিক ইস্যুতে বিরোধীদের নিয়ে শুক্রবার বৈঠকে বসেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। সেখানেই এমন মন্তব্য করেন তিনি।
এ দিন সনিয়া বলেন, ‘‘২১ দিনে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই শেষ হবে বলে শুরুতে আশা জাগিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তাঁর হিসাব যে ভুল ছিল, তা প্রমাণিত। বরং টীকা আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত ভাইরাস থাকবে বলেই মনে হচ্ছে। লকডাউনের বিধিনিষেধ জারি করা নিয়েও সরকার অনিশ্চিত ছিল বলে মনে হচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে কী ভাবে বেরনো যায়, তারও সঠিক পরিকল্পনা নেই সরকারের কাছে।’’
পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি সরকারে উদাসীন বলে এর আগেও একাধিক বার মন্তব্য করেছেন সনিয়া। দরিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারী ১৩ কোটি পরিবার, ভাগচাষি, ভূমিহীন কৃষিশ্রমিকদের নিয়েও এই সরকার একেবারেই চিন্তিত নয় বলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন তিনি। সনিয়া বলেন, ‘‘এটা অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয় যে, বর্তমান সরকারের কাছে কোনও সমাধান নেই। তবে সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলে, দরিদ্র মানুষের প্রতি একেবারেই সমব্যথী নয় এই সরকার। বরং লোক দেখানো সংস্কারের নামে রাষ্ট্রায়াত্ত সংস্থাগুলিকে বেচে দিয়ে অ্যাডভেঞ্চারে মেতেছে তারা।’’ করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রধানমন্ত্রী যে ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, সেটা একটা বড় মস্করা বলেও দাবি করেন সনিয়া।
আরও পড়ুন: রাজ্যকে ১ হাজার কোটি টাকার সাহায্য, প্রতিশ্রুতি মোদীর
নোভেল করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা করছে না বলে ইতিমধ্যেই অভিযোগ করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কংগ্রেস শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও একই অভিযোগ করেছেন। সেই সমস্ত অভিযোগ ছাড়াও, পরিযায়ী শ্রমিকদের পুনর্বাসন, কেন্দ্রের অর্থনৈতিক প্যাকেজ, অতিমারি সামাল দিতে রাজ্যগুলির হাতে টাকা তুলে দেওয়ার মতো বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করতেই এ দিন ১৮টি ছোট-বড় বিরোধী দলকে নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন সনিয়া গাঁধী।
চলতি সপ্তাহের শুরুতেই সকলকে বৈঠকে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তা সত্ত্বেও এ দিনের বৈঠকে যোগ দেননি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল, বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) নেত্রী মায়াবতী এবং সমাজবাদী পার্টি (এসপি) প্রধান অখিলেশ যাদব। এমনকি বৈঠকে কোনও প্রতিনিধিও পাঠানিন তাঁরা। বৈঠকে যোগ না দেওয়ার আসল কারণ যদিও খোলসা করেননি তিন জনের কেউই। তবে কংগ্রেসের তাঁদের রাজনৈতিক মতভেদের কথা কারও অজানা নয়। সেই কারণেই বিজেপি বিরোধী হলেও, সনিয়ার নেতৃত্বে ওই বৈঠক থেকে তাঁরা সরে দাঁড়িয়েছেন বলে জল্পনা রাজনৈতিক মহলে।
আরও পড়ুন: অর্থনীতি চাঙ্গা করতে ফের রেপো রেট কমাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক
তাঁদের ছাড়াই এ দিন দুপুর ৩টে নাগাদ ভিডিয়ো কলিং অ্যাপ জুমের মাধ্যমে বৈঠক শুরু হয়। এ দিনের বৈঠকে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আমপান পরিস্থিতি পরিদর্শনের পর নবান্নে ফিরে বৈঠকে যোগ দেন তিনি। তবে মমতা আগাগোড়া বৈঠকে থাকতে না পারলেও, তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন তাঁর হয়ে সেখানে প্রতিনিধিত্ব করেন। কোভিড-১৯ এর পাশাপাশি, ঘূর্ণিঝড় আমপান (প্রকৃত উচ্চারণ উম পুন)-এর জেরে বাংলায় ত্রাণ ও পুনর্গঠনের প্রসঙ্গ তোলেন তিনি।
বিজেপির সঙ্গে সাড়ে তিন দশকের জোটে ইতি টেনে মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনকারী শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরেও এ দিনের বৈঠকে ছিলেন। বিরোধী শিবিরের সঙ্গে এটাই প্রথম বৈঠক উদ্ভবের। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডিএমকে প্রধান এমকে স্ট্যালিন, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা এবং অন্যান্য ইউপিএ শরিকরা। শুরুতে বৈঠকে যাওয়া নিয়ে ইতস্তত করলেও, বৈঠকে ছিলেন এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারও। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়াও বৈঠকে যোগ দেন।