—প্রতীকী চিত্র।
দ্বিতীয় পর্যায়ে মানব দেহের উপর কোভিড-১৯ ভাইরাসের সম্ভাব্য প্রতিষেধকের পরীক্ষা শুরু হল ভারতে। ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা জাইডাস ক্যাডিলার তরফে মোট দু’টি ধাপে এই পরীক্ষা করা হবে। তাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১ হাজারের বেশি মানুষ অংশ নেবেন। তাঁদের উপর জাইকোভ-ডি টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হবে। দেখা হবে, এই টিকা আদৌ মানবদেহের জন্য নিরাপদ কিনা এবং নোভেল করোনার বিরুদ্ধে তা কতটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।
চলতি মাসের শুরুতে ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার (ডিসিজিআই)কাছ থেকে জাইকোভ-ডি টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমোদন জোগাড় করে জাইডাস ক্যাডিলা। ইতিমধ্যেই এই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে বুধবার ঘোষণা করে তারা। ক্লিনিকাল ট্রায়াল রেজিস্ট্রি-ইন্ডিয়ার (সিটিআরআই) জানিয়েছে, ইনক্লুশন এবং এক্সক্লুশন, মানবদেহে টিকা পরীক্ষার জন্য এই দু’টি মানদণ্ড ঠিক করা হয়েছে।
ইনক্লুশনের ক্ষেত্রে দু’ভাবে পরীক্ষাটি চালানো হবে। প্রথম পর্যায়ে ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী পুরুষ এবং মহিলাদের উপর এই টিকা প্রয়োগ করা হবে। তবে গর্ভবতী নারী ও সদ্য মা হয়েছেন যাঁরা, তাঁদের এই পরীক্ষার বাইরে রাখা হয়েছে। আর দ্বিতীয় পর্যায়ে ১২ বা তার চেয়ে বেশি বয়সী ছেলেমেয়েদের উপর এই টিকা প্রয়োগ করা হবে। দু’ক্ষেত্রেই পরিবার ও অভিভাবকদের সম্মতি পেলে তবেই তাঁদের নিয়ে পরীক্ষা এগোবে। প্রথম পর্যায়ে ৮৪ দিন পর্যন্ত মানবশরীরের পক্ষে জাইকোভ-ডি টিকা আদৌ নিরাপদ কিনা, তা দেখা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২২৪ দিন পর্যন্ত দেখা হবে, এই ভাইরাস কোভিডের বিরুদ্ধে কতটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।
আরও পড়ুন: গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ২৯৪২৯, দেশে মোট মৃত্যু ২৪ হাজার ছাড়াল
আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনায় মৃত্যু হাজার ছুঁল, সংক্রমণের হার বেড়ে ১৪
এক্সক্লুশনের ক্ষেত্রে যাঁদের নিয়ে পরীক্ষা চালানো হবে, তাঁদের কারও জ্বর, গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা বা পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য নাম নথিভুক্ত করার চার সপ্তাহের মধ্যে কোনও সংক্রমণ হওয়া চলবে না। কোনও সময় যদি কেউ করোনা আক্রান্ত হয়ে থাকেন বা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এসে থাকেন, অথবা কারও শরীরে যদি কোভিডের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি এবং অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি মেলে, তাঁদের পরীক্ষার অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। এর আগে কোভিড প্রতিষেধক সংক্রান্ত কোনও পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকলে, হেপাটাইটিস সি-তে আক্রান্ত হলে, নিয়মিত ধূমপান করার অভ্যেস থাকলে (দিনে ১০টা সিগারেট), কখনও কোনও টিকা নেওয়ার পর শরীরে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়ে থাকলে, তাঁদেরও এই পরীক্ষা থেকে বাদ দেওয়া হবে।
গত বছরের শেষ দিকে চিনেই প্রথম হানা দেয় নোভেল করোনাভাইরাস। অল্পদিনের মধ্যেই গোটা বিশ্বে তা মহামারির আকার ধারণ করে। ১৫ জুলাই পর্যন্ত বিশ্বে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এসে ঠেকেছে ১ কোটি ৩৩ লক্ষ ৬০ হাজারে। ৫ লক্ষ ৭৯ হাজার ৫৪৬-এ এসে ঠেকেছে মৃত্যুসংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ব জুড়েই করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গবেষকরা। ভারতেও একাধিক সংস্থার তরফে প্রতিষেধক তৈরির চেষ্টা চলছে। এর আগে, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভারত বায়োটেক করোনার প্রতিষেধক কোভ্যাক্সিন তৈরি করেছিল। পরীক্ষামূলক ভাবে মানবশরীরে তারাও এই প্রতিষেধক প্রয়োগে অনুমতি পেয়েছে।