দ্বিতীয় সংক্রমণেও ভাবাচ্ছে মৃদু উপসর্গ ও উপসর্গহীনতা

প্রথম বার সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার সাড়ে চার মাস পরে কী কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ফের আক্রান্ত হলেন, আপাতত তারই কারণ অনুসন্ধান চলছে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৩৭
Share:

—ফাইল চিত্র।

করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গের রোগীরাই ছিলেন চিন্তার প্রধান কারণ। এ নিয়ে বিস্তর আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু পুনরায় সংক্রমণের ক্ষেত্রেও কি সেই উপসর্গহী‌নতা বা মৃদু উপসর্গ সংক্রমণের নতুন চরিত্র হিসেবে সামনে আসছে? আন্তর্জাতিক গবেষক মহলকে এখন ভাবাচ্ছে এই প্রশ্ন।

Advertisement

গত মাসের শেষেই হংকং-এ এক জন রোগীর ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেছে। যাকে বিশ্বের ‘ডকুমেন্টেড’ প্রথম পুনরায় সংক্রমণের ঘটনা হিসেবে ধরা হচ্ছে। প্রথম বার সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার সাড়ে চার মাস পরে কী কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ফের আক্রান্ত হলেন, আপাতত তারই কারণ অনুসন্ধান চলছে। অবশ্য শুধু হংকংই নয়, আমেরিকা-সহ একাধিক জায়গা থেকেও পুনরায় সংক্রমণের ঘটনা নথিভুক্ত হচ্ছে। আমেরিকার রোগীর ক্ষেত্রে উপসর্গের ধরন অবশ্য ‘সিভিয়র’ ছিল। কোভিডে পুনরায় সংক্রমণ নিয়ে এত দিন ধোঁয়াশা ছিল। প্রথম বারের সংক্রমণ থেকে পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি, এমন রোগীদেরই ভুলবশত পুনরায় সংক্রমিত হিসেবে ধরা হচ্ছিল। বা নমুনা পরীক্ষার ভুল ফলাফলেই দ্বিতীয় বার সংক্রমিত বলা হচ্ছিল। কিন্তু হংকং এবং আমেরিকার দুই ব্যক্তির পুনরায় সংক্রমণের ঘটনার বিশ্লেষণের পরে তেমনটা আর দাবি করা যাচ্ছে না বলেই জানাচ্ছেন গবেষকেরা।

‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস’ (এমস) পুরো ঘটনাপ্রবাহের উপরে নজর রাখছে বলে সূত্রের খবর। এমসের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘পুনরায় সংক্রমণের খবর শুধু বিদেশে নয়, এ দেশেও বেশ কিছু শোনা যাচ্ছে। হংকং ও আমেরিকার পুনরায় সংক্রমণের ঘটনা তো ডকুমেন্টেড। ফলে বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।’’ চণ্ডীগড়ের ‘পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর যোগেশ চাওলা জানাচ্ছেন, পুনরায় সংক্রমণ ও সার্স কোভ-২-এর বিরুদ্ধে শরীরে অ্যান্টিবডি কত দিন থাকছে, এই দু’টি বিষয় ওতপ্রোত জড়িত। তাঁর কথায়, ‘‘শরীরে অ্যান্টিবডি কত দিন থাকছে, তার উপরে ভ্যাকসিন গবেষণা নির্ভর করছে। কিন্তু সেটাই তো এখনও স্পষ্ট হয়নি।’’

Advertisement

গবেষকদের বক্তব্য, শুরু থেকেই সার্স কোভ-২ সংক্রমণের উপসর্গহীনতা মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেটা এত দিন সীমাবদ্ধ ছিল প্রথম বার সংক্রমণের ক্ষেত্রে। কিন্তু দ্বিতীয় বার সংক্রমণেও উপসর্গহীনতা বা মৃদু উপসর্গের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় পরিস্থিতি তুলনামূলক ভাবে জটিল হয়ে উঠেছে। সে ক্ষেত্রে কত জন প্রকৃত সুস্থ হয়ে উঠছেন। এবং সুস্থ হয়ে ওঠার কত দিন পরে আবার সংক্রমিত হচ্ছেন, এই প্রশ্নগুলি অবধারিত ভাবে এসে যাচ্ছে। ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল নির্মল গঙ্গোপাধ্যায়ের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘অ্যান্টিবডি শরীরে কত দিন থাকে, তা বলার সময় এখনও আসেনি। কারণ, ফেজ় থ্রি ট্রায়াল সম্পূর্ণ হয়নি। সেটা সম্পূর্ণ না হলে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে এখনই কিছু বলা যাবে না।’’

এ দিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পুনরায় সংক্রমণের ঘটনাকে বেশি গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, শুধুমাত্র বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিত্তিতে পুনরায় সংক্রমণ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যাবে না। কোভিড সংক্রান্ত আলোচনা, ‘সায়েন্স ইন ফাইভ’-এ ওই সংস্থার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বিশ্বে কত জন আক্রান্তের মধ্যে কত জন পুনরায় সংক্রমিত হচ্ছেন, তা দেখতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড ১৯ গবেষণাকারী দলের টেকনিক্যাল লিড মারিয়া ভ্যান খেরখোভ জানাচ্ছেন, যখন কারও শরীরে প্রতিরোধী শক্তি তৈরি হয়, তখন অ্যান্টিবডি বেশ কিছু দিন শরীরে থাকে। যা পুনরায় সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচায়। তাঁর কথায়, ‘‘কত দিন এই অ্যান্টিবডি শরীরে থাকছে, তার সম্পূর্ণ চিত্র এখনও আমাদের কাছে নেই। শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পুনরায় সংক্রমণ থেকে বাঁচাবে, ফলে কত দিন সে শরীরে থাকছে, সেটা বোঝারই চেষ্টা চলছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement