প্রতীকী ছবি।
বেসরকারি হাসপাতালে করোনা প্রতিষেধক নিতে আসছেন না আম জনতা। ফলে সেখানে জমে থাকছে প্রতিষেধক। এ দিকে ভিড় বাড়ছে সরকারি টিকাকেন্দ্রে। গত দেড়-দু’মাসের এই প্রবণতা দেখে টিকা বণ্টন নীতিতে পরিবর্তন আনার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করল কেন্দ্র। বেসরকারি হাসপাতালগুলি থেকে অব্যবহৃত টিকা নির্দিষ্ট সময় পরে ওই কেন্দ্রের হাতে ফেরত যায়। কেন্দ্র তখন তা রাজ্যগুলিতে পাঠায়। এতে সময় নষ্ট হচ্ছে। চাহিদা মতো জোগান দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না সরকারি হাসপাতালগুলিতে।
এই পরিস্থিতিতে প্রতিষেধক সংস্থাগুলিকে তাদের উৎপাদিত টিকার ২৫ শতাংশ বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে দেওয়ার যে বাধ্যতামূলক শর্ত কেন্দ্র দিয়েছিল, তা পুনর্মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার কথা জানালেও, নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বিনোদ পল অবশ্য দাবি করেছেন, সরকার এমন কিছু ভাবছে না। সরকারের দুই শীর্ষ সূত্র কেন পুরোপুরি উল্টো কথা বলায় এ দিন সরকারি সূত্রে তার ব্যাখ্যা দিতে হয়েছে। তাতে স্পষ্ট, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংসদে ঠিক তথ্যই দিয়েছেন।
বর্তমান ব্যবস্থায় মোট উৎপাদনের ৭৫ শতাংশ টিকা কেন্দ্রকে বিক্রি করতে বাধ্য প্রতিষেধক সংস্থাগুলি। কেন্দ্র সেই প্রতিষেধক চাহিদার ভিত্তিতে রাজ্যগুলিতে পাঠিয়ে থাকে। বাকি ২৫ শতাংশ প্রতিষেধক এত দিন বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে বিক্রি করতে পারত সংস্থাগুলি। কিন্তু দেখা গিয়েছে, বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো ২৫ শতাংশ টিকার ৭-৯ শতাংশ খরচ হয়েছে। বাকি ১৬-১৮ শতাংশ টিকা অব্যবহৃত পড়ে রয়েছে। যে কারণে সম্প্রতি একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে দাবি তোলেন, রাজ্যের হাতে টিকা নেই। অথচ বেসরকারি হাসপাতালে দীর্ঘ সময় ধরে অব্যবহৃত টিকা পড়ে
থাকছে। তাই হাসপাতালগুলির জন্য ওই ২৫ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা তুলে দিয়ে ওই বাড়তি টিকা তাদের হাতে তুলে দেওয়ার অনুরোধ জানায় রাজ্যগুলি। কেন্দ্রও মেনে নিয়েছে, দেশে যখন টিকার চাহিদা রয়েছে, তখন এ ভাবে বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিষেধক ফেলে রাখা অর্থহীন। তাই নীতিতে পরিবর্তনের বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকে।
এই আবহে গত কাল রাজ্যসভায় বিজেপি সাংসদ সুশীল মোদী জানতে চেয়েছিলেন, সরকার কি বেসরকারি হাসপাতালগুলির ২৫ শতাংশ কোটা কমিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছে? জবাবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বীকার করে নেন, এটা ঠিক যে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে করোনা প্রতিষেধক অব্যবহৃত পড়ে থাকছে। গত মাসে বেসরকারি হাসপাতালগুলি প্রাপ্ত টিকার মাত্র ৭-৯ শতাংশ খরচ করতে সক্ষম হয়েছে। তাই ওই কোটা ব্যবস্থা আগামী দিনে চালু থাকবে কি না তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে উৎপাদনের ২৫ শতাংশ টিকা বেসরকারি হাসপাতালকে পাঠাতেই হবে বলে বাধ্যতামূলক শর্তটি তুলে দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। পরিবর্তে বেসরকারি হাসপাতালগুলির কত চাহিদা রয়েছে তা আগে থেকে জেনে নিয়ে তাদের সেই পরিমাণ প্রতিষেধক সরবরাহ করুক সংস্থাগুলি। এতে অপচয় কমবে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজ্যসভায় এই দাবি করলেও, গত কাল স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সাংবাদিক বৈঠকে বিনোদ পল দাবি করেন, হাসপাতালগুলির ২৫ শতাংশ কোটা কমিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সরকার কিছু ভাবছে না। দুই পক্ষের ওই মতপার্থক্য তৈরি হওয়ায় আজ ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়, বেসরকারি হাসপাতালে যে টিকা যায় তা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খরচ না হলে কেন্দ্রের কাছেই ফেরত চলে আসে। যা পরে রাজ্যগুলিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় সময় বেশি লাগে। ওই শর্ত তুলে দেওয়া হলে ওই সময় বাঁচানো সম্ভব হবে।