দিল্লির লোক নায়ক জয় প্রকাশ হাসপাতালে চলছে এক করোনা রোগীর চিকিৎসা।—ছবি রয়টার্স।
চড়চড় করে চড়ছিল সংক্রমণের রেখাচিত্র। অনুমান করা হয়েছিল, স্রেফ জুলাইয়ে দিল্লিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হবে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ লক্ষ। আজ জুলাইয়ের শেষ পর্বে এসে সেই সংক্রমণ দাঁড়িয়েছে ১.২৫ লক্ষে।
কী সেই পদ্ধতি যা মেনে সাফল্য পেল রাজধানী? স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, অর্থনীতির স্বাভাবিক গতি ফেরাতে যে রাজ্যগুলিতে সবার আগে লকডাউনের নিয়ম শিথিল করা হয়, তার অন্যতম ছিল দিল্লি। সেই কারণে মে ও জুনে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে সংক্রমণ। জুনের শুরুতে সংক্রমণের হার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জুলাইয়ে সংক্রমণ পৌঁছবে সাড়ে পাঁচ লক্ষের কাছাকাছি। পরিস্থিতি সামলাতে প্রথমেই চিহ্নিত করা হয় দিল্লিতে সংক্রমণ ছড়ানোর সুপার স্প্রেডারদের। এঁরা ছিলেন, ঠেলাওয়ালা, আনাজ বিক্রেতা, দোকানদার ও অটো চালক। শুরুতেই এঁদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত হয়।
দিল্লির স্বাস্থ্য দফতরের মতে, পরীক্ষায় ধরা পড়ে, ঠেলার মাধ্যমে আনাজ বিক্রেতা কিংবা বাজারে বসে থাকা আনাজ বিক্রেতাদের অধিকাংশ করোনা সংক্রমিত। যাঁদের একটি বড় অংশই ছিলেন উপসর্গহীন। ফলে অজান্তেই সংক্রমণ ছড়িয়ে গিয়েছেন তাঁরা। এই ধরনের উপসর্গহীনদের চিহ্নিত করে নিভৃতবাসে পাঠানো হয়। ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা করা হয় ঘিঞ্জি এলাকার দোকানদারদের। সূত্রের মতে, দিল্লিতে করোনা সংক্রমণের অন্যতম কারণ অটোচালকেরাও। মেট্রো বন্ধ। বাস চলছে নামমাত্র। এই পরিস্থিতিতে কর্মস্থলে পৌঁছতে অন্যতম ভরসা অটো। স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, নিয়ম করে আটোচালকদের পরীক্ষা করা হয়েছে। একই ভাবে পরীক্ষা হয়েছে সরকারি বাসের চালক ও কনডাক্টরদেরও।
আরও পড়ুন: গোষ্ঠী সংক্রমণে কেন্দ্রের ‘আপত্তি’র পিছনে দুই অঙ্ক
দিল্লির পরিস্থিতি যে এক সময়ে উদ্বেগজনক ছিল, তা মানছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) রাজেশ ভূষণ। তাঁর কথায়, ‘‘পরিস্থিতি সামলাতে নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বিনোদ পল, এমসের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া, ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল-এর ডিরেক্টর সুজিতকুমার সিংহ, দিল্লির স্বাস্থ্যসচিবকে নিয়ে একটি দল গড়া হয়। ঠিক হয়, সুপার স্প্রেডারদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি পরীক্ষার সংখ্যা ফি-দিন বাড়ানো হবে। ফলে দিল্লিতে জুনে যত পরীক্ষা হত, এখন তার দ্বিগুণ পরীক্ষা হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: দেশে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা পেরোল ১২ লক্ষ
রাজেশ আরও বলেন, ‘‘সংক্রমণ ঠেকাতে বাড়ি বাড়ি ঘুরে পরীক্ষা, উপসর্গ রয়েছে এমন রোগীদের হাসপাতালে পাঠানো, উপসর্গহীনদের বাড়িতে না-রেখে নিভৃতবাসে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া, হটস্পট ও কনটেনমেন্ট জ়োনে কড়া পাহারার ব্যবস্থা হয়। সেখানে প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে সংক্রমিত বা কারও সর্দি-কাশির উপসর্গ রয়েছে কি না, সেই সমীক্ষা করা হয়। সর্দি-কাশির উপসর্গ থাকলেই করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। নীতি আয়োগের সদস্য বিনোদ পলের কথায়, ‘‘সংক্রমিত এলাকায় কড়া নজরদারি ও পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ালেই সংক্রমণ কমবে। এই নীতি দিল্লির মতো সব রাজ্যের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।’’ একই সঙ্গে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার উপরেও জোর দিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।