Coronavirus

ভাবাচ্ছে টিকা কেনার খরচ

কেন্দ্র যে-হেতু গোটা দেশে  বিনামূল্যে এই টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাই বিদেশ থেকে তা কেনা হলে আর্থিক ব্যয়ভারের কথাও মাথায় রাখা হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২০ ০৪:৪০
Share:

প্রতীকী ছবি।

টিকা-কূটনীতি এবং তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা আর্থিক ব্যয়ভারের খতিয়ান। দেশ জুড়ে কোভিড মোকাবিলার পাশাপাশি আপাতত এই বিষয় দু’টি নিয়ে এখন রাতের তেল পোড়াচ্ছে সাউথ ব্লক। স্থির হয়েছে, বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা আগামী সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে কর্মরত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দূতদের সঙ্গে সম্ভাব্য টিকা পরিস্থিতি এবং কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় মোদী সরকারের ভূমিকা নিয়ে বৈঠকে করবেন। বৈঠকে থাকবেন টিকাদানের প্রশাসনিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞরাও।

Advertisement

প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, চিন থেকে কোনও মতেই প্রতিষেধক কেনা হবে না। আবার অন্যান্য দেশ থেকে তা কেনার খরচও বিপুল। পাশাপাশি মাথায় রাখতে হচ্ছে, বিপুল পরিমাণ টিকা একা উৎপাদন করাটা ভারতের পক্ষে অত্যন্ত কঠিন। এ সব কারণেই আন্তর্জাতিক স্তরে যোগাযোগ রেখে এগোতে চাইছে ভারত।

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, রাষ্ট্রদূতদের অদূর ভবিষ্যতে টিকা গবেষণা ও সম্ভাব্য উৎপাদন কেন্দ্রগুলিতেও নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। যে সব দেশ ভারতের সঙ্গে যৌথ ভাবে টিকা উৎপাদনে অংশ নিতে চায়, তাদের বার্তা দেওয়া হবে ওই বৈঠকে। অন্য দেশ থেকে টিকা কেনার ব্যাপারেও ভারতের ভাবনাচিন্তা জানানো হবে রাষ্ট্রদূতদের।

Advertisement

কেন্দ্র যে-হেতু গোটা দেশে বিনামূল্যে এই টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাই বিদেশ থেকে তা কেনা হলে আর্থিক ব্যয়ভারের কথাও মাথায় রাখা হচ্ছে। বিভিন্ন সূত্রে বলা হচ্ছে, জন প্রতি টিকার দাম পড়তে পারে ৪৫০ টাকা থেকে ৫৫০০ টাকা পর্যন্ত। সূত্রের খবর, মার্কিন সংস্থা ‘মডার্না’ খুব শীঘ্রই বাজারে টিকা আনার দাবি করলেও তা কিনতে ভারতীয় মুদ্রায় যা দাম পড়বে (জন প্রতি প্রায় ৫ হাজার টাকা), তাতে কপালে ভাঁজ পড়ছে মোদী সরকারের। অক্সফোর্ডের টিকার দাম অবশ্য দেখা যাচ্ছে তুলনামূলক ভাবে অনেকটা কম। কিন্তু কত দিনে তা পাওয়া যাবে তা এখনও অনিশ্চিত।

ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান আদর পুণাওয়ালা দু’দিন আগে জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে কোভিডের প্রতিষেধক মিলবে বলে তাঁদের আশা। তবে সেপ্টেম্বরেই তিনি জানিয়েছিলেন, সব দেশবাসীকে প্রতিষেধক দিতে হলে অন্তত ৮০ হাজার কোটি টাকার ব্যবস্থা রাখতে হবে সরকারকে। আজ পুণাওয়ালা বলেছেন, “সরকারের সঙ্গে শীর্ষ স্তরে আলোচনা চলছে। টিকার দাম ঠিক কত পড়বে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। তবে এটা বলতে পারি, কয়েকশো টাকা হতে পারে দাম।”

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত সিদ্ধান্ত, খরচে কম পড়লেও কোনও অবস্থাতেই চিন থেকে টিকা নেওয়া হবে না। সেই দেশের সঙ্গে অনাস্থার এবং সংঘর্ষের বাতাবারণ এখন তুঙ্গে। পূর্ব-লাদাখে ভারতীয় ভূখণ্ডের অনেকটাই দখল করে বসে রয়েছে চিনা সেনা। এই অবস্থায় কোভিড নিয়ে চিনের সঙ্গে সহযোগিতার পথে হাঁটলে, ঘরে-বাইরে ভুল সঙ্কেত যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া, চিনের টিকা সম্পর্কে আস্থারও অভাব রয়েছে ভারতের বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।

সরকারি সূত্রে আজ জানানো হয়েছে, দেশ জুড়ে টিকা দেওয়ার কাজ সারতে এক বছরেরও বেশি সময় লাগবে। সূত্রের খবর, অন্য দেশকেও নিজেদের আবিষ্কৃত টিকা সরবরাহের বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রের। প্রাথমিক অগ্রাধিকার দেওয়া হবে সার্ক দেশগুলিকে। তাদের বিনামূল্যে প্রতিষেধক জোগাতে চায় ভারত। সেই তালিকায় অবশ্যই বাদ থাকবে পাকিস্তান। তারা টিকার জন্য নির্ভর করে রয়েছে চিনের উপরে। কিছু রাষ্ট্রকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাদের কম দামে টিকা বিক্রি করবে ভারত। এর পরে থাকবে প্রথম বিশ্বের দেশগুলি, যাদের পুরো দামে বিক্রি করা হবে, সরবরাহের নিশ্চয়তা-সহ। কোন দেশকে কী ভাবে টিকা সরবরাহ করা হবে তা নির্ভর করবে সেই দেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত সম্পর্কের উপরে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement