Coronavirus

লকডাউনে লাভ কতটা, বুঝতে আরও ১০ দিন

যাঁদের মধ্যে অনেকেই সংক্রমিত হলেও তাঁদের দেহে তখনও উপসর্গ দেখা যায়নি। সেই সংখ্যা ঠিক কত, তা আগামী এক সপ্তাহ থেকে দশ দিনের মধ্যে বোঝা যাবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২০ ০৩:৫৩
Share:

কোয়রান্টিন সেন্টার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কতটা ছড়াচ্ছে, তা বুঝতে আগামী সাত থেকে দশ দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, করোনা সংক্রমিত রোগীর উপসর্গ সংক্রমণের পাঁচ থেকে দশ দিনের মধ্যে ফুটে ওঠে। সে ক্ষেত্রে গত রবিবার জনতা কার্ফুর দিন থেকে দেশবাসীর একটা বড় অংশ ঘরবন্দি। যাঁদের মধ্যে অনেকেই সংক্রমিত হলেও তাঁদের দেহে তখনও উপসর্গ দেখা যায়নি। সেই সংখ্যা ঠিক কত, তা আগামী এক সপ্তাহ থেকে দশ দিনের মধ্যে বোঝা যাবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। লকডাউনের মাধ্যমে ভারত করোনা সংক্রমণ রুখতে আদৌ সাফল্য পেল কি না, তা-ও ওই সময়ের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, ভারত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে করোনা ভাইরাসের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া করোনা পরীক্ষার জন্য দেশীয় প্রযুক্তিতে কিট বানানোর কাজও দ্রুত গতিতে চলছে বলে দাবি স্বাস্থ্য মন্ত্রকের।
কেন আগামী কয়েক দিন গুরুত্বপূর্ণ, তার ব্যাখ্যায় এমস-এর চিকিৎসক প্রসূন চট্টোপাধ্যায় জানান, আমাদের আশেপাশে অনেক ব্যক্তিই ওই ভাইরাসে আক্রান্ত বা রোগটির ক্যারিয়ার। কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় তাঁদের দেহে উপসর্গ দেখা যায়নি। সেই ব্যক্তিরা অজান্তেই গত দুসপ্তাহে যাঁদের সংক্রমিত করেছেন, তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে উপসর্গ ফুটে ওঠার কথা। কেন না ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে করোনা আক্রান্তদের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে সাত থেকে দশ দিনের মাথায়। তাই রক্ত পরীক্ষাও পাঁচ থেকে বারো দিনের মাথায় করতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে ২১ দিন লকডাউনের নিয়ম মানলে ওই সংক্রমণ অনেকটাই রোখা যাবে বলে মত প্রসূনবাবু-সহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের মতে, করোনা ভাইরাস রোখার প্রশ্নে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল গোষ্ঠী সংক্রমণ রোখা। কারণ একবার গোষ্ঠী পর্যায়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে, তা আটকানো কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে। যেমন হয়েছে ইটালিতে। ভারতে স্টেজ-থ্রি বা গোষ্ঠী সংক্রমণ আটকাতেই গোটা দেশে লকডাউনের ঘোষণা করেছে মোদী সরকার। বেসরকারি হাসপাতালের অনেক চিকিৎসক সে সময়ে দাবি করেছিলেন, অনেক দেরি করে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কারণ দেশে ইতিমধ্যেই গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে। তাঁদের মতে, আরও আগেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। আজ লকডাউনের তৃতীয় দিনে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের পদস্থ কর্তা রমন গঙ্গাখেদকর দাবি করেন, ‘এখনও পর্যন্ত গোষ্ঠী সংক্রমণের কোনও প্রমাণ মেলেনি। লকডাউনের সিদ্ধান্তে অবশ্যই লাভ হয়েছে। কিন্তু কতটা, তা নির্ভর করছে আমরা কতটা নিয়মে চলছি তার উপরে। যদি আমরা নিজেদের ও পরিবারের স্বার্থে ঘরবন্দি হয়ে থাকি, তা হলে লকডাউন থেকে বড় লাভ পাব। তা না হলে নিজেরাই সমস্যা ডেকে আনব।‘ গঙ্গাখেদকর দাবি করেন, লকডাউনের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ায় গোষ্ঠী সংক্রমণ কিছুটা পিছিয়ে দেওয়া গেছে। যত দিন গোষ্ঠী সংক্রমণ রুখে দেওয়া যায়, তত দিনই ভাল। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশের একাধিক গবেষণা সংস্থা করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন বানানোর কাজ করছে। এ দিন গঙ্গাখেদকর বলেন, করোনাভাইরাসের টিকার যে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হবে, তার অংশীদার হতে রাজি হয়েছে ভারত। অতীতে আর্জেটিনা, বাহরাইন, কানাডা, ফ্রান্স, ইটালি, নরওয়ে, স্পেনের মতো দেশ তাদের আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে ওই পরীক্ষামূলক প্রয়োগে রাজি হয়েছিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, ভারতে যে হেতু আক্রান্তের সংখ্যা কম ছিল, সে কারণে এ যাবৎ কোনও আগ্রহ দেখানো হয়নি। কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় অবস্থান পরিবর্তন করেছে সরকার। কেন্দ্রের তরফে আজ দাবি করা হয়েছে, দেশীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে করোনা চিহ্নিতকরণ কিট বানানোর কাজ দ্রুত গতিতে চলছে পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি-তে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement