মুক্তির অপেক্ষায় ‘উরি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’।
হেলিকপ্টার থেকে নেমে আসছেন সেনার কম্যান্ডোরা। নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে রাতের অন্ধকারে পাক-অধিকৃত এলাকায় ঢুকে জঙ্গি শিবির গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
‘উরি: দ্য সার্জিকাল স্ট্রাইক’ মুক্তি পাচ্ছে ১১ জানুয়ারি। ঠিক যে দিন ‘দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’-ও মুক্তি পাবে। একটা ছবিতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনমোহন সিংহকে সনিয়া গাঁধীর হাতের পুতুল রূপে তুলে ধরা। অন্যটিতে সেনার ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’-এর মাধ্যমে মোদী সরকারের সাফল্য প্রচার করে জাতীয়তাবাদ উস্কে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ।
ইন্দিরা গাঁধীর জরুরি অবস্থা জারির সময়কে কেন্দ্র করে গত বছর মধুর ভান্ডারকর তৈরি করেছিলেন ‘ইন্দু সরকার’। তখনও অভিযোগ উঠেছিল, এ সব গাঁধী পরিবারকে বিপাকে ফেলতে বিজেপির কৌশল। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে দুই ছবি ঘিরে নতুন বিতর্কে প্রশ্ন উঠেছে, এ দেশেও কি ক্রমশ রাজনৈতিক প্রচারের মাধ্যম হয়ে উঠছে সিনেমা?
১৯৩৫-এ জার্মানিতে মুক্তি পেয়েছিল ‘ট্রায়াম্ফ অব দ্য উইল’। লেনি রিফেনস্টালের সেই ছবি হিটলারকে কার্যত দেবতার আসনে বসায়। চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘রাজনৈতিক প্রচারমূলক ছবি বা প্রোপাগান্ডা ফিল্মের পর্যায়ে সেটাই প্রথম ছবি। তার পর বিশ্বযুদ্ধকে কেন্দ্র করে এই ধরনের ছবি বহু তৈরি হয়েছে। আমেরিকার মতো দেশে এ সব এখন জলভাত। এ দেশে জরুরি অবস্থার পরেই সিনেমার সঙ্গে রাজনীতির বিতর্ক মিশতে থাকে। প্রচারমাধ্যমের গুরুত্ব টের পাওয়া যায়।’’
আরও পড়ুন: বিজেপির ফাঁদে পা নয়, ছবি বিতর্কে রাহুল
শুধু ‘উরি’ ও ‘অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’ নয়। জানুয়ারিতেই মুর্তি পাচ্ছে ‘ঠাকরে’। বাল ঠাকরের জীবন-ভিত্তিক এই ছবি শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরের ‘আশীর্বাদ’ নিয়েই তৈরি হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, লোকসভা ভোটের আগে জমি আরও মজবুত করতে বালসাহেবকে ঘিরে আবেগ উস্কে দিচ্ছে শিবসেনা। রাজনৈতিক মেরুকরণেরও আশঙ্কা রয়েছে। কারণ ছবির ট্রেলারে দক্ষিণ ভারতীয়দের উদ্দেশে বালসাহেবের মুখে ‘উঠাও লুঙ্গি, বাজাও পুঙ্গি’-র মতো বুলি রয়েছে। দক্ষিণের অভিনেতা সিদ্ধার্থের মতে, এতে হিংসা ছড়াবে। কিন্তু ছবির পরিচালক অভিজিত পানসে-র যুক্তি, ‘‘বালসাহেব এই স্লোগান দিয়েছিলেন। সেটাই ইতিহাস।’’
আরও পড়ুন: মোদীর বিকল্প কি তবে গডকড়ী
এ দেশে জরুরি অবস্থার সময়ে ‘কিসসা কুর্সি কা’ নিষিদ্ধ করা হয়। ইন্দিরা ও সঞ্জয় গাঁধীকে কটাক্ষ করে তৈরি সেই ছবির সমস্ত প্রিন্ট বাজেয়াপ্ত করেছিল সরকার। তার পরেও মণিরত্নমের ‘বম্বে’ থেকে হালফিলের ‘মাদ্রাস কাফে’ বা ‘পরমাণু’-র মতো ছবির পিছনেও রাজনৈতিক অভিসন্ধির অভিযোগ উঠেছে। মধুর ভান্ডারকরের যুক্তি, ‘‘ইন্দু সরকার নিয়েও বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্রে এটা ঠিক নয়। মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা উচিত।’’
ভোটের আগে এ দেশে জাতীয়তাবাদ উস্কে দিতে যেমন সার্জিকাল স্ট্রাইক নিয়ে ছবি তৈরির অভিযোগ, আমেরিকাতেও তেমনই ভিয়েতনাম যুদ্ধের পরে মার্কিনদের মনোবল চাঙ্গা করতে ‘র্যাম্বো’ সিরিজ তৈরি হয়েছিল বলে মনে করিয়ে দিচ্ছেন সঞ্জয়বাবু। তাঁর মতে, উল্টো দিকে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি নিয়ে একের পর এক ছবির পিছনেও বিরোধীদের মদত ছিল বলে মনে করা হয়। তা হলে দিল্লির রাজনীতির সঙ্গে কি মিশে যাচ্ছে মুম্বইয়ের রুপোলি পর্দার জগৎ? সঞ্জয়বাবুর মন্তব্য, ‘‘বাজার অর্থনীতি যখন রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে, তখন সেটাই ভবিতব্য।’’