মুল্লাপল্লী রামচন্দ্রন। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া
আক্রমণের নিশানায় ছিল কেরলের বাম সরকার। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে ধর্ষণ নিয়ে এমন মন্তব্য করে বসলেন কেরল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মুল্লাপল্লী রামচন্দ্রন, যা ঘিরে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। রাজ্যের বিরোধী জোট সংযুক্ত গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (ইউডিএফ)-এর এক সভায় রামচন্দ্রন বলেন, ‘‘ধর্ষিতা মহিলা হয় মারা যাবেন, নয়তো সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আটকাবেন।’’ পরে এমন মন্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ করলেও বিতর্ক থামেনি। রামচন্দ্রনকে ‘বিপজ্জনক’ বলে তীব্র আক্রমণ করেছেন রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী কে কে শৈলজা।
২০১৩ সালে কেরলে সৌরপ্রকল্প কেলেঙ্কারিতে ৩ বছল জেল খেটেছেন সরিতা নায়ার ও তাঁর স্বামী বিজু রাধাকৃষ্ণন। সেই সময় এই কেলেঙ্কারি কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউডিএফ সরকারের ভাবমূর্তিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। সোলার প্যানেল বিক্রি করেছিল যে সংস্থা সেই আসিএমএস-এর অন্যতম ডিরেক্টর ছিলেন সরিতা। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সেই সরিতা সম্প্রতি এক কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন। রাজ্যের বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এলডিএফ) জোটে তিনি যোগ দিতে পারেন বলেও জল্পনা রয়েছে কেরলের রাজনীতিতে।
সেই সূত্রেই রবিবার ইউডিএফ-এর সভায় সরিতাকে নিশানা করে রামচন্দ্রন বলেন, ‘‘উনি (সরিতা) প্রত্যেক দিন ঘুম থেকে ওঠেন আর দাবি করেন, তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ... আত্মসম্মান আছে, তেমন কোনও মহিলা ধর্ষিতা হলে হয় তিনি মারা যাবেন, নয়তো দ্বিতীয় বার ধর্ষণ আটকানোর চেষ্টা করবেন। কিন্তু উনি শুধু কেঁদে বেড়ান যে, তাঁকে বার বার ধর্ষণ করা হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: শ্রীনগরে জঙ্গি ডেরায় নিরাপত্তা বাহিনীর হানা, নিহত শীর্ষ হিজবুল কমান্ডার
এই মন্তব্যের পরেই তীব্র বিতর্ক শুরু হয়। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং সাত বারের সাংসদ বর্ষীয়ান রামচন্দ্রনের এমন মন্তব্যের সমালোচনায় সরব হয় রাজ্যের সুশীল সমাজের একাংশ। রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী কে কে শৈলজা বলেন, "উনি বলছেন, আত্মমর্যাদা থাকলে ধর্ষিতা মহিলা আত্মহত্যা করবেন। ধর্ষণে অপরাধ কি নারীর? আবার যাঁরা ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করছেন না, তাঁদের কি আত্মসম্মান নেই? ধর্ষকরা অপরাধী। তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় মহিলাদের।" এই ধরনের মন্তব্য বিপজ্জনক মানসিকতার পরিচায়ক এবং অনুচিত বলেও মন্তব্য করেন শৈলজা।
আরও পড়ুন: করোনা পর্বে সবচেয়ে বেশি জিএসটি আদায় হল অক্টোবরেই
বিতর্ক তৈরি হওয়ায় দুঃখপ্রকাশ করছেন রামচন্দ্রন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, "আমার মন্তব্য যদি নির্দিষ্ট কাউকে আঘাত করে, তার জন্য দুঃখিত।’’ তবে একই সঙ্গে সাফাই দিয়েছেন, একটা অংশ এটাকে নারীবিরোধী বলে প্রমাণের চেষ্টা করছেন, সেটা ঠিক নয়। শুধুমাত্র সরকার কতটা নীচে নামতে পারে, সেটা বোঝাতেই তিনি ওই মন্তব্য করেছেন বলেও জানান রামচন্দ্রন।