নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি রূপায়ণে বিশেষ সেল গড়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সম্প্রতি দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দেওয়ায় বিতর্ক চলছে। তার মধ্যেই ইউজিসি একটি চিঠি দিয়ে জানাল, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়, দিল্লি, হায়দরাবাদ, বিশ্বভারতীর মতো কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ভর্তির জন্য অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া হবে। এমনকি প্রাদেশিক, বেসরকারি এবং ডিমড বিশ্ববিদ্যালয়গুলি চাইলে তারাও এই ধরনের অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার বিষয়ে উদ্যোগী হতে পারে বলে জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে।
এই অভিন্ন প্রবেশিকা নিয়েও প্রবল আপত্তি-প্রতিবাদ শুরু হয়েছে রাজ্যের শিক্ষা শিবিরে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বভারতীয় শিক্ষক সংগঠন আইফুকটো-র সভাপতি এবং রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির (ওয়েবকুটা) সাধারণ সম্পাদক কেশব ভট্টাচার্য মঙ্গলবার বলেন, ‘‘এই ভাবে অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রীকরণ করা হচ্ছে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা বিষয়ক স্বাধিকার বলে আর কিছু থাকবে না।’’
দেশের মোট ৪৫টি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পাঠানো চিঠিতে ইউজিসি-র যুগ্মসচিব জিতেন্দ্র কে ত্রিপাঠী লিখেছেন, জাতীয় শিক্ষা নীতিতেই এই অভিন্ন প্রবেশিকার উল্লেখ রয়েছে। এই পরীক্ষা নেবে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি। ওই এজেন্সিই সর্বভারতীয় জয়েন্ট এন্ট্রান্স (জেইই) ও সর্বভারতীয় মেডিক্যালে ভর্তির পরীক্ষা (নিট) নেয়। ইউজিসি-র নির্দেশ, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে অভিন্ন প্রবেশিকার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যেন প্রস্তুতি শুরু করে দেয়। যুগ্মসচিব জিতেন্দ্র লিখেছেন, জেইই এবং নিট নেওয়া হয় ১৩টি ভাষায়। এ ক্ষেত্রেও ন্যূনতম ১৩টি ভাষায় প্রবেশিকা নেওয়া হবে।
প্রথম থেকেই জাতীয় শিক্ষানীতির বিরোধিতা করে আসছে সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটি। কমিটির সম্পাদক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তরুণ নস্করের বক্তব্য, ভর্তির পরীক্ষা নেওয়া যে-কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ নিজস্ব অ্যাকাডেমিক বা পঠনপাঠন সংক্রান্ত বিষয়। পাঠ্যক্রমের বিষয়ে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্বতা থাকে। এ ক্ষেত্রে মান আর চাহিদা কখনওই এক হয় না। একটি বিশ্ববিদ্যালয় কেমন মানের ছাত্রছাত্রী নেবে, তা ঠিক করার দায়িত্ব একান্ত ভাবেই সেই বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় ভাবে ভর্তি-পরীক্ষার মাধ্যমে পড়ুয়া বেছে নেওয়ার ব্যবস্থা চালু হলে সেটা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারের উপরে হস্তক্ষেপ। তা সে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ই হোক বা কোনও প্রাদেশিক বিশ্ববিদ্যালয়।’’