রেফ্রিজারেটরে দুধ ফুরিয়ে গিয়েছে। আপনি খেয়াল করার আগেই রেফ্রিজারেটর নিজেই সেই তথ্য জানিয়ে দিল দুধের দোকানে। দোকান থেকে মোবাইলে বার্তা এল, বাড়িতে দুধ পাঠিয়ে দেব? আপনি সম্মতি জানাতেই দুধ পৌঁছে গেল বাডি়র দরজায়।
কল্পবিজ্ঞান নয়। খুব শীঘ্রই এমন দিন যে আসতে চলেছে, সে বিষয়ে একমত তথ্যপ্রযুক্তি মহলের সকলেই। নাসকম-এর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট কিরণ কার্ণিক বলছেন, ‘‘এখন আমরা যন্ত্রের সাহায্যে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। খুব শীঘ্রই যন্ত্রই অন্য যন্ত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। কারণ তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সব কিছু একে অপরের সঙ্গে জুড়ে যাচ্ছে।’’ একই কথা বলেছেন এরিকসন গ্লোবাল সার্ভিসেস ইন্ডিয়া-র এমডি অমিতাভ রায়ও। যিনি বলছেন, তাঁরা মার্সিডিজ বেঞ্জ ও ভলভো-র সঙ্গে একটি গাড়ির সঙ্গে অন্য গাড়িকে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে জুড়ে দেওয়ার কাজ চলছে। যাতে গাড়িগুলি নিজেরাই রাস্তায় একে অন্যের সঙ্গে নিরাপদ দূরত্ব রেখে চলতে পারে। একইভাবে রাস্তার পরিস্থিতি মেনেই গাড়ি চলতে পারবে। যাকে সমর্থন জানিয়ে কার্ণিক বলছেন, আগামী দিনে গাড়ির চালক বলে আর কোনও পেশা থাকবে না। ঠিক যেভাবে স্টেনোগ্রাফার বা টেলিফোন অপারেটরের পেশা উঠে গিয়েছে।
বিশ্ব জুড়ে এই সংযোগ বা ‘কানেক্টেড ওয়ার্ল্ড’-ই এ বার ‘থিম’ এবিপি গোষ্ঠী আয়োজিত দিল্লির ইনফোকমে। এ বারই প্রথম রাজধানীতে এই ‘বিজনেস-টেকনোলজি-লিডারশিপ’ সম্মেলনের আয়োজন হয়েছে। আজ ইনফোকম-এর উদ্বোধন করে তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রকের সচিব আর এস শর্মা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ডিজিটাল ইন্ডিয়া প্রকল্পের সূচনা করেছেন। একদিকে ডিজিটাল পরিকাঠামো তৈরি করে আমরা নাগরিক পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। আগে সাক্ষরতা মিশন হয়েছে। এবার সাধারণ মানুষের মধ্যে ন্যূনতম ডিজিটাল সাক্ষরতা দরকার। যাতে তাঁরা ডিজিটাল সরকারি পরিষেবা পেতে পারেন।’’
ত্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে একদিকে যেমন সকলের সঙ্গে সকলের সংযোগ হচ্ছে, যন্ত্রগুলি যন্ত্রের সঙ্গে জুড়ে যাচ্ছে, তেমনই বিপদও বাড়ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়। তাঁর যুক্তি, ডিজিটাল সুবিধা নিতে গিয়ে সাধারণ মানুষের অজ্ঞাতে ব্যক্তিগত তথ্যও প্রকাশিত হয়ে যাচ্ছে। একদিকে সেই তথ্য যেমন ব্যবসায়িক সংস্থা নিজেদের লাভের জন্য ব্যবহার করতে পারে, তেমনই তথ্য চুরি করে হ্যাকিং, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরিয়ে নেওয়া বা অন্য কোনও সংস্থা বা দেশের গোপন তথ্য চুরির মতো সাইবার অপরাধও বাড়ছে। পূর্ণেন্দুর বক্তব্য, এ’টি একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জ, তেমনই নতুন গবেষণার ক্ষেত্রও। সাইবার অপরাধ রোখার জন্য ভারতীয় সংস্থাগুলি গবেষণা করতে পারে। সেই গবেষণার ফসলের ‘পেটেন্ট’ নেওয়াকর জন্যও দেশের তথ্যপ্রযুক্তি জগতকে আহ্বান জানিয়েছেন পূর্ণেন্দু। কারণ এই ‘পেটেন্ট’ আয়ের উৎস খুলে দিতে পারে।
এবিপি-র এমডি ও সিইও তথা ইনফোকমের চেয়ারম্যান ডি ডি পুরকায়স্থ বলেন, ‘‘আগামী এক দশকে এই শিল্পের মূল্য এক লক্ষ কোটি ডলার বাড়তে চলেছে। সে কথা মাথায় রেখেই এই ইনফোকমের মঞ্চ। যেখানে তথ্যপ্রযুক্তি জগতের পেশাদার, ক্রেতা-বিক্রেতা, কর্পোরেট জগতের প্রথম সারির ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদ, চিন্তাবিদ এবং সরকারি নীতি নিয়ন্ত্রকরা হাজির হতে পারছেন। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের ভবিষ্যৎ সেদিকেই যাচ্ছে। এবার থেকে আমরা নিয়মিত দিল্লিতে ইনফোকমের আয়োজন করব।’’