জি২০ সম্মেলন উপলক্ষে আলোয় সেজে উঠেছিল দিল্লির ভারত মণ্ডপম। ছবি: পিটিআই।
জি২০ সম্মেলনের আয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৯৯০ কোটি টাকা। তার বদলে মোদী সরকার কেন জি২০ সম্মেলনে ৪,১০০ কোটি টাকা খরচ করেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলল কংগ্রেস, তৃণমূল।
জি২০ সম্মেলনকে অজুহাত করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজের প্রচার করেছেন বলে আগেই বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছিলেন। আজ কংগ্রেসের অভিযোগ, মোদী সরকার মধ্যবিত্ত থেকে কৃষকদের সুরাহার বন্দোবস্ত করে না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি তৈরিতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে।
ভারতের সভাপতিত্বে জি২০ সম্মেলন আয়োজনের জন্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন গত ১ ফেব্রুয়ারি বাজেটে ৯৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলেন। এখন সরকারি মহল থেকে জানা যাচ্ছে, জি২০ সম্মেলনের আয়োজন, দিল্লিকে ঢেলে সাজানোর জন্য ৪,১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। গোটা দিল্লি প্রধানমন্ত্রীর ছবিতে মুড়ে দেওয়া হয়েছে। জি২০ সম্মেলনের সাফল্যের কৃতিত্ব নরেন্দ্র মোদীকে দিতে অমিত শাহ, জে পি নড্ডার নেতৃত্বে বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা মাঠে নেমে পড়েছেন।
পাল্টা আক্রমণে আজ কংগ্রেসের সাংগঠনিক সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল অভিযোগ তুলেছেন, গত বছর ইন্দোনেশিয়ার বালি-তে জি২০ সম্মেলনের জন্য ৩৬৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। মোদী সরকার যা খরচ করেছে, তার দশ ভাগের এক ভাগেরও কম। কোভিড অতিমারির পরে সব সরকারই অনুষ্ঠানের খরচ কাটছাঁট করছে। অথচ মোদী সরকার বাজেটে ৯৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও ৪,১০০ কোটি টাকা ব্যয় করে ফেলেছে। বেণুগোপালের বক্তব্য, “এই সরকার মানুষের জন্য সস্তায় রান্নার গ্যাস, পেট্রল-ডিজেলের বন্দোবস্ত করতে পারে না। চাষিদের ফসল নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করে। হিমাচল প্রদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ক্ষয়ক্ষতি মেরামতে যথেষ্ট তহবিল বরাদ্দ করে না। অথচ ভাবমূর্তি তৈরিতে ১০ গুণ বেশি টাকা খরচ করে। শহরের সৌন্দর্যায়ন করে অর্থনৈতিক দুরবস্থা ঢাকা যাবে না।” একই প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সাকেত গোখলে।
এরপর সরকারি তরফে পাল্টা দাবি করা হয়, জি২০ সম্মেলনে বাজেট বরাদ্দের ৩০০ শতাংশ বেশি খরচ করা হয়েছে বলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। যা খরচ হয়েছে, তার বেসিরভাগটাই স্থায়ী পরিকাঠামো তৈরিতে ব্যয় করা হয়েছে। ফলে তার ব্যবহার শুধুমাত্র জি২০তে সীমাবদ্ধ থাকবে না।
বিজেপি ইতিমধ্যেই জি২০-তে ঘোষণাপত্রে ঐকমত্য তৈরিতে মোদী সরকারের সাফল্য, বিদেশি অতিথিদের প্রশংসা, রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে মোদীর আলাপচারিতার ছবি, ভিডিয়ো নিয়ে প্রচারে নেমে পড়েছে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের বক্তব্য, জি২০ সম্মেলন শেষ হয়ে গিয়েছে। মোদী সরকার এ বার ঘরোয়া সমস্যার দিকে নজর দিক। অগস্টে খাবারের থালির দাম ২৪ শতাংশ বেড়েছে। বেকারত্বের হার ৮ শতাংশ। মোদী সরকারের একের পর এক দুর্নীতি সিএজি প্রকাশ্যে আনছে।
কংগ্রেস আজ জম্মু-কাশ্মীরে জল জীবন মিশনে ১৩ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছে। এই দুর্নীতি প্রকাশ্যে আনার জন্য এক দলিত আইএএস অফিসারকে শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস। খড়্গে বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর পরম বন্ধুরা লুট চালাচ্ছেন। মণিপুরে ফের হিংসা শুরু হয়েছে। মোদী সরকার পর্দা দিয়ে বাস্তব আড়াল করছেন। অন্য দিকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা করছেন। জনতা অবশ্য ২০২৪-এ এদের বিদায়ের রাস্তা তৈরি করছে।”