নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
দেশ জুড়ে বাড়ছে বেকারত্ব। সমীক্ষা বলছে, নরেন্দ্র মোদীর শাসনে গত চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেড়েছে বেকারত্বের হার। তাই হিমাচল প্রদেশে বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে সরাতে বেকারত্বকেই প্রচারের মূল হাতিয়ার করল কংগ্রেস। আজ নির্বাচনী ইস্তাহারে রাজ্যের যুবকদের বছরে এক লক্ষ চাকরির আশ্বাস দিয়ে যুব সমাজের মন জয়ের কৌশল নিল রাহুল গান্ধীর দল। অন্য দিকে, সোলানে জনসভায় রাজ্যের উন্নয়নে ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারের উপরে ভরসা রাখার আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুধু তাই নয়, যদি জনতা কংগ্রেসকে বেছে নেওয়ার মতো ‘ভুল’ করে, সে ক্ষেত্রে তাঁর পক্ষে দিল্লিতে বসে হিমাচলের জন্য তেমন কিছু করা সম্ভব হবে না বলে রাজ্যবাসীকে কার্যত সতর্কই করলেন প্রধানমন্ত্রী।
গত কয়েক বছর ধরেই দেশের আর্থিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। মূল্যবৃদ্ধি চরমে। কোভিডের কারণে চাকরি খুইয়েছেন বহু মানুষ। উপরন্তু সরকারি চাকরিতে বহু পদ বাতিল করে দেওয়ায় ফি বছর নিয়োগ ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে। সেনাতেও শুরু হয়ে গিয়েছে অস্থায়ী নিয়োগ। তাই হতাশ ও ক্ষুব্ধ যুব সমাজকে বার্তা দিতে কংগ্রেস ইস্তাহারে জোর দিয়েছে যুবকদের রোজগারের বিষয়টি নিশ্চিত করার উপরে। ইস্তাহারে বলা হয়েছে, দল ক্ষমতায় ফিরলে বছরে এক লক্ষ সরকারি চাকরি দেওয়া হবে স্থানীয় যুবকদের। যে যুবকেরা স্টার্ট আপ খুলতে চান, তাঁদের জন্য ৬৮০ কোটি টাকার তহবিল গড়া হবে। যা থেকে স্বল্প সুদে ঋণ পাবেন আগ্রহীরা। এ ছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের মন জয়ে পুরনো পেনশন প্রকল্প ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কংগ্রেস।
হিমাচলপ্রদেশের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে যুক্ত পর্যটন শিল্প। তাই ওই শিল্পকে আরও চাঙ্গা করে তোলার লক্ষ্যে সার্বিক পরিকাঠামো উন্নয়ন, প্রান্তিক এলাকাগুলির মধ্যে সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধি, গ্রামের মানুষ যাতে পর্যটনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়ে রোজগার করতে পারেন, তার জন্য ‘স্মার্ট ভিলেজ’ প্রকল্প গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখিয়েছে প্রধান বিরোধী দল। একই সঙ্গে মহিলাদের মন জয় পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো প্রতি মহিলা পিছু মাসিক ১৫০০ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি, দিল্লি সরকারের ধাঁচে তিনশো ইউনিট বিদ্যুৎ বিনা মূল্যে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কংগ্রেস। এ ছাড়া, গ্রামের মহিলাদের কাছ থেকে প্রতি কেজি গোবর দু’টাকায় কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা। দলীয় নেতা রাজীব শুক্ল বলেন, ‘‘আমরা চাই হিমাচলের মানুষ নিজেদের স্বার্থে কংগ্রেসকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনুক। কারণ, কংগ্রেস যা প্রতিশ্রুতি দেয় তা রক্ষা করে। আমরা বিজেপির মতো জুমলাবাজি করি না।’’ বিজেপি নেতা গৌরব ভাটিয়ার পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘অতীতে যখন কংগ্রেসের সরকার ছিল, তখন ক’জনকে বছরে চাকরি দিতে পেরেছে সেই তথ্য সামনে এলেই প্রকৃত চিত্রটি স্পষ্ট হয়ে যাবে। পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি করতে গিয়ে পঞ্জাব, দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গের মতো একাধিক রাজ্য এখন ঋণের ফাঁদে জর্জরিত। এ বার হিমাচলকেও সেই ফাঁদে ফেলার জন্য সক্রিয় হয়েছে কংগ্রেস।’’
অন্য দিকে প্রচারে নেমে হিমাচলের অনুন্নয়নের জন্য মূলত অতীতের কংগ্রেস সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘দিল্লিতে বসে থাকা কংগ্রেসের কিছু নেতা বরাবরই নিজেদের স্বার্থে হিমাচলপ্রদেশকে অশান্ত করতে চেয়েছেন। তাই রাজ্যের উন্নয়ন থমকে গিয়েছে।’’ তিনি দাবি করেন, ‘‘রাজ্যে ও কেন্দ্রে ডাবল ইঞ্জিন সরকার থাকায় গত পাঁচ বছরে হিমাচলের উন্নয়ন দ্রুত হয়েছে।’’ উদাহরণস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘২০১৪-১৭ সাল পর্যন্ত কংগ্রেসের শাসনে কেন্দ্র টাকা পাঠানো সত্ত্বেও মাত্র ১৫টি বাড়ি বানানো হয়েছিল গোটা রাজ্যে। সেখানে গত পাঁচ বছরে দশ হাজার বাড়ি বানিয়েছে ডাবল ইঞ্জিন সরকার।
বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরলে আগামী দিনে কেন্দ্র হিমাচলের উন্নয়নে আরও বেশি বদ্ধপরিকর থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী।