Manipur Violence

পুলিশের ‘পরামর্শ’ মেনে কপ্টারে চড়ে রাহুল গেলেন মণিপুর হিংসায় ঘরছাড়াদের শিবিরে

রাহুলের সফরের মধ্যেই বৃহস্পতিবার নতুন করে হিংসা ছড়িয়েছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যে। কাঙ্গোকপি জেলার হারাওথেল গ্রামে দুষ্কৃতীদের গুলিতে কয়েক জন আহত হয়েছেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

ইম্ফল শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২৩ ১৭:০৫
Share:

মণিপুরে রাহুল গান্ধী (ডানদিকে)। ছবি: পিটিআই।

সড়কপথে নয়, হেলিকপ্টারে যান। রাহুল গান্ধীর কনভয় আটকে বৃহস্পতিবার এই ‘পরামর্শ’ দিল মণিপুর পুলিশ! জানানো হল, তাঁর উপর হামলার আশঙ্কার কারণেই সড়কপথে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে। সেই ‘পরামর্শ’ মেনে বৃহস্পতিবার বিকেলে কপ্টারে চূড়াচাঁদপুর জেলার কয়েকটি শরণার্থী শিবিরে ঘরছাড়াদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন রাহুল। ঘটনাচক্রে, রাহুলের সফরের মধ্যেই বৃহস্পতিবার নতুন করে হিংসা ছড়িয়েছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যে। কাঙ্গোকপি জেলার হারাওথেল গ্রামে দুষ্কৃতীদের গুলিতে কয়েক জন আহত হয়েছেন।

Advertisement

মণিপুরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওকরাম ইবোবি সিংহ, এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক অজয় সিংহ-সহ কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে নিয়ে ইম্ফল থেকে চূড়াচাঁদপুরের শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার পথে বিষ্ণুপুর এলাকায় রাহুল এবং তাঁর সঙ্গীদের পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয়। এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক কেসি বেণুগোপাল জানান, ইম্ফল থেকে ২০-২৫ কিলোমিটার দূরে বিষ্ণুপুর এলাকায় কনভয় আটকে দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, চূড়াচাঁদপুরেই গত দু’মাসে সবচেয়ে বেশি হিংসার ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, কনভয়ে হামলা হতে পারে বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর এসেছিল। ঘটনাচক্রে, বুধবারই রাহুলের সফরের বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছিল কট্টরপন্থী মেইতেই সংগঠন মণিপুর পেট্রিয়টিক পার্টি। তারা অভিযোগ করে, কংগ্রেসের আমলেই মণিপুরে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। কংগ্রেস সরকারই ১৯৪৯ সালে স্বাধীন মণিপুরকে জোর করে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করেছিল! মণিপুরবাসী সেই একত্রকরণ মানতে পারেনি বলেই দীর্ঘ সশস্ত্র সংগ্রামের সূচনা হয়। ওই সংগঠনের দাবি, কংগ্রেস বরাবর কুকিদের ভোট ব্যাঙ্কের স্বার্থে ব্যবহার করেছে এবং পৃথক কুকিল্যান্ডের স্বপ্ন দেখিয়েছে। তার জেরেই আজ পাহাড় থেকে মেইতেইদের বহিষ্কার করে পৃথক রাজ্যের দাবি তুলছে কুকিরা।

Advertisement

পেট্রিয়টিক পার্টির আরও অভিযোগ, কুকি জঙ্গিদের দমন না করে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি করার আড়ালে কংগ্রেস সরকার আসলে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নাগা এবং মেইতেইদের বিরুদ্ধে কাজে লাগিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে রাহুলের সফর পূর্বনির্দিষ্ট সূচির মেনে হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। প্রসঙ্গত, মণিপুরে দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ধারাবাহিক হিংসায় নিহতের স‌ংখ্যা দেড়শো ছুঁতে চলছে। ঘরছাড়া প্রায় ৫০ হাজার মানুষ! প্রায় ৩০০টি শিবিরে তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন। গত শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদল বৈঠক করলেও তার পরেও হিংসার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। এই আবহে জাতীয় স্তরের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে রাহুলই প্রথম মণিপুরে গেলেন।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ দিল্লি থেকে বিমানে মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলে পাড়ি দেন রাহুল। সাড়ে ১১টা নাগাদ পৌঁছন ইম্ফলে। দু’দিনের মণিপুর সফরে একাধিক কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। কংগ্রেসের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বৃহস্পতিবার লামকা (চূড়াচন্দ্রপুর), বিষ্ণুপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার কথা রাহুলের। রাতে তিনি থাকবেন মৈরাংয়ে। শুক্রবার রাজধানী ইম্ফলের কয়েকটি শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার পাশাপাশি, যুযুধান মেইতেই জনগোষ্ঠী এবং কুকি এবং নাগা জনজাতির নাগরিক সমাজের সঙ্গেও বৈঠকে বসার কথা তাঁর। দিল্লি ফেরার আগে শুক্রবার, প্রদেশ কংগ্রেস ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করতে পারেন তিনি।

গত ৩ মে মণিপুরের জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর বিক্ষোভ-মিছিল ঘিরে উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্যে অশান্তির সূত্রপাত। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূচনা হয় সেখানে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement