রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি কংগ্রেস প্রতিনিধিদলের। পিটিআই
গত সপ্তাহে টানা তিন দিন রাহুল গান্ধীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় আজ চতুর্থ দিন ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর ইডি-র তদন্তকারীরা আগামিকালও ফের রাহুল গান্ধীকে তাঁদের দফতরে হাজির হতে বললেন। এ দিন রাত ১২টার পর ইডির দফতর থেকে বেরোন রাহুল।
গত সপ্তাহে রাহুলকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় কংগ্রেসের নেতারা দলের সদর দফতর থেকে ইডি-র দফতর পর্যন্ত মিছিলের চেষ্টা করায় দিল্লির রাস্তায় পুলিশের সঙ্গে তাঁদের খণ্ডযুদ্ধ বেধেছিল। আজ রাহুলের চতুর্থ দিনের জিজ্ঞাসাবাদের সময় কংগ্রেস নেতারা যন্তর মন্তরে সত্যাগ্রহে বসেন। শুধু ‘সিবিআই-ইডি-কে কাজে লাগিয়ে মোদী সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’-র বিরুদ্ধে নয়। সেনায় চুক্তিতে নিয়োগের অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধেও আজ রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে দেখা করে কংগ্রেসের সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল স্মারকলিপি দিয়েছে। সামরিক বাহিনীর সুপ্রিম কমান্ডার হিসাবে রাষ্ট্রপতির কাছে অগ্নিপথ প্রকল্প প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, গত সপ্তাহে কংগ্রেস দফতরে দিল্লি পুলিশের হানা দেওয়া থেকে দলের সাংসদ, নেতাদের আটক করে রাখা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধেও অভিযোগ জানানো হয়েছে রাষ্ট্রপতির কাছে।
এরই মধ্যে অবশ্য যন্তর মন্তরে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুবোধকান্ত সহায়ের মন্তব্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সহায় নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করে তাঁকে হিটলারের সঙ্গে তুলনা করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘হিটলারও সেনার মধ্যে অগ্নিবীরের মতোই আলাদা সংস্থা তৈরি করেছিলেন। যার নাম ছিল খাকি। মোদী হিটলারের রাস্তায় চললে, হিটলারের মতোই মরবেন।’’ এই মন্তব্যে বিতর্ক হতে পারে বুঝেই কংগ্রেসের জনসংযোগ দফতরের প্রধান জয়রাম রমেশ জানিয়ে দেন, দল মোদী সরকারের স্বৈরাচারী মতাদর্শ ও জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে লড়লেও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অমর্যাদাপূর্ণ মন্তব্যের সঙ্গে একমত নয়।
আজকের পরে আগামিকালও ইডি পঞ্চম দিনের জন্য রাহুল গান্ধীকে ডেকে পাঠানোয় কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, এটা জিজ্ঞাসাবাদ নয়। স্রেফ হেনস্থা। ইডি সূত্রের দাবি, ন্যাশনাল হেরাল্ডের প্রকাশ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস ও সনিয়া-রাহুলের মালিকানাধীন ইয়ং ইন্ডিয়া-র মধ্যে লেনদেন নিয়ে প্রশ্ন করতেই রাহুলকে ডাকা হচ্ছে। কংগ্রেস সাংসদ কার্তি চিদম্বরমের বক্তব্য, ব্যাঙ্কের মাধ্যমে এক দশক আগে হওয়া লেনদেন নিয়ে তদন্ত করতে সংস্থার কোনও এক জন ডিরেক্টরকে এত জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন পড়ে না। তা-ও আবার অলাভজনক সংস্থার ক্ষেত্রে। এটা পুরোপুরি হেনস্থা। ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় কোনও দুর্নীতি হয়নি বলে প্রচার করতে কংগ্রেস পোস্টার তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গোটা দেশে যা ছড়িয়ে দেওয়া হবে। অন্য দিনের মতো আজও প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা রাহুলকে বাড়ি থেকে নিয়ে ইডি-র দফতর পর্যন্ত পৌঁছে দেন। সে সময় কংগ্রেসের সমর্থক দীনেশ শর্মা দলের পতাকা হাতে ইডি-র দফতরে ঢুকে পড়েছিলেন। দীনেশ কংগ্রেসের পতাকা, তিরঙ্গা পোশাক পরে সারা দেশে খালি পায়ে ঘুরে বেড়ান। পুলিশ দীনেশকে আটক করে বের করে দিচ্ছে দেখে প্রিয়ঙ্কা তাঁকে নিজের গাড়িতে তুলে যন্তর মন্তর পর্যন্ত নিয়ে যান।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রতিনিধি দল দেখা করার আগে কংগ্রেসের সমস্ত সাংসদরা সংসদ ভবনে বৈঠক করেন। তার পরে সকলে মিলে মিছিল করে রাষ্ট্রপতি ভবন পর্যন্ত যান। মিছিলের মূল দাবি ছিল, অগ্নিপথ প্রত্যাহার। শুধু সত্যাগ্রহ বা মিছিল নয়। কংগ্রেস আজ নিজেদের সংগঠনের শক্তি প্রদর্শন করতে দিল্লির প্রাণকেন্দ্র কনট প্লেসে রাস্তা অবরোধ করেছে। দিল্লির শিবাজী স্টেডিয়ামে ট্রেন অবরোধও করেছে। সাম্প্রতিক অতীতে এই প্রথম কংগ্রেস এ ভাবে দিল্লির রাস্তায় নামল বলে দলের নেতাদের দাবি।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।