কপিল সিব্বল। ফাইল চিত্র।
শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, মোদী সরকারের নিযুক্ত রাজ্যপালেরা বিরোধী দলগুলির শাসিত সব রাজ্যেই অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছেন বলে কংগ্রেস অভিযোগ তুলল। দিল্লিতে আজ এআইসিসি-র মঞ্চ থেকে কপিল সিব্বল বলেন, “অরুণাচল প্রদেশ, গোয়া, কর্নাটকের মতো রাজ্যেও আমরা রাজ্যপালের ভূমিকা দেখেছি। এঁরা নিজেদের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরে রাজ্য সরকারে অস্থিরতা তৈরি করতে চান।” কলকাতাতেও আজ এ বিষয়ে সরব হয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস ও সিপিএমের নেতারা। তবে একই সঙ্গে তৃণমূলকেও বিঁধেছেন তাঁরা।
পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন কলকাতায় বলেন, “অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে রাজ্যপালের অতিসক্রিয়তা আমাদের রাজ্যে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি করেছে। গুজরাত, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে করোনার প্রকোপ অনেক বেশি। সেখানে রাজ্যপালেরা কি সরকারের সঙ্গে এই রকম সংঘাতে নেমে পড়েছেন? এখানে রাজভবন তো রাজনৈতিক দলের দফতরের কাজ করছে!”
দিল্লিতে কংগ্রেসের নেতাদের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি, মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগত সিংহ কোশিয়ারীও কেন্দ্রের রাজনীতির ঘুঁটি হিসেবে কাজ করছেন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার ছ’মাস অর্থাৎ ২৮ মে-র মধ্যে বিধানসভায় বা বিধান পরিষদে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে উদ্ধব ঠাকরেকে। তাঁকে রাজ্যপালের কোটা থেকে বিধান পরিষদে মনোনীত করার জন্য মন্ত্রিসভা প্রস্তাব পাঠিয়েছে। কিন্তু রাজ্যপাল সেই প্রস্তাবে অনুমোদন না-দিয়ে, বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছেন। মুখ্যমন্ত্রী করোনা-মোকাবিলায় ব্যস্ত। রাজ্যপাল অকারণে অনিশ্চয়তা তৈরি করছেন।
আরও পড়ুন: করোনার উপসর্গ সল্টলেকের আরও এক বাসিন্দার
আরও পড়ুন: শিক্ষাবর্ষ হোক সেপ্টেম্বরে, সুপারিশ ইউজিসি কমিটির
সিব্বল বলেন, “এই কারণেই আমি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের ভূমিকায় একেবারেই অবাক হইনি।” কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, অতীতেও কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যে মোদী সরকারের নিযুক্ত রাজ্যপালেরা সরকার ফেলায় ভূমিকা নিয়েছেন। গোয়া, মণিপুরে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সত্বেও কংগ্রেস যাতে সরকার গড়তে না-পারে, তার জন্য রাজ্যপালকে কাজে লাগানো হয়েছে। আদালতও রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
করোনা-মোকাবিলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ তুলেছিলেন। তাঁর দাবি, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল রাজনীতি করছেন। মমতাকে সমর্থন জানিয়ে পুদুচেরির মুখ্যমন্ত্রী, কংগ্রেসের ভি নারায়ণস্বামীও সেখানকার উপরাজ্যপাল কিরণ বেদীর ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ জানান। তাতে অবশ্য সমস্যা মেটেনি। উল্টে মমতার সঙ্গে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের বিবাদ আরও চরমে উঠেছে। রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীকে দীর্ঘ চিঠি লিখে কার্যত রাজনৈতিক আক্রমণ শানিয়েছেন। সিব্বলের কটাক্ষ, “এই সব রাজ্যপালেরা আসলে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচারের কাজ করেন।”
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র অবশ্য তৃণমূলকেও ছাড় দিতে নারাজ। বলেছেন, “বিজেপির সর্বভারতীয় নেতারা মুখে যা বলছেন, কিছু রাজ্যপাল রাজভবনে বসে তা বাস্তবায়িত করছেন, গণতন্ত্র বা সাংবিধানিক রীতিনীতির তোয়াক্কা না-করেই। তবে বাংলার রাজ্যপালের সঙ্গে আচরণে রাজ্য সরকারের সতর্ক থাকা উচিত।” সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর নিশানা কংগ্রেস-বিজেপি-তৃণমূল, তিন দলই। তাঁর কথায়, “বিজেপি জমানায় দেশের সব সাংবিধানিক পদকেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। সংবিধান, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো— কিছুই মানা হচ্ছে না। এ রাজ্যে অতীতেও রাজ্যপালেরা কখনও কেন্দ্রের শাসক, কখনও রাজ্যের বিরোধীদের স্বার্থে কাজ করেছেন। তবে তখন রাজ্যে একটা দৃঢ় সরকার ছিল। এখন তার অভাব।”
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)