এক লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার কোটি টাকার সামনে অঙ্কটা খুবই কম!
কিন্তু রিপোর্টটা সিএজি-র। অভিযোগ, দুর্নীতির। মহারাষ্ট্রের পূর্তি শর্করা কারখানার বিরুদ্ধে এই রিপোর্ট হাতে নিয়েই কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর পদত্যাগের দাবি তুলল কংগ্রেস।
কেন্দ্রে অন্যতম বিরোধী দলের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভোট প্রচারের কথা এখনও দেশের মানুষের কানে বাজছে, ‘‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা।’’ তাই যদি হয়, তা হলে ‘দুর্নীতিপরায়ণ’ মন্ত্রীকে কেন রাখা হবে মন্ত্রিসভায়? সনিয়া গাঁধীর দল বলছে, এর পরেও যদি কোনও পদক্ষেপ না করেন মোদী, তা হলে বুঝতে হবে, এই সরকার স্যুট বুটের পাশাপাশি লুঠের সরকারও বটে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অপ্রচলিত শক্তি মন্ত্রকের কার্যকলাপ নিয়ে সিএজি-র একটি রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ২০০২ সালে মহারাষ্ট্রের পূর্তি শর্করা কারখানা অপ্রচলিত শক্তি উৎপাদনের জন্য আই আর ই ডি এ (ইন্ডিয়ান রিনিউয়েবল এনার্জি ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি) থেকে ৮৪ কোটি টাকা ঋণ নেয়। কিন্তু শর্ত মতো সেই টাকা দিয়ে তারা ২০০৪ সালে কাজ শুরু করেনি। ওই টাকা ব্যবহার করে পরেও অপ্রচলিত শক্তি উৎপাদন করা হয়নি। তা ছাড়া, ঋণের টাকাও ফেরত দিতে টালবাহানা করায় তা আই আর ই ডি এ-র অনাদায়ী ঋণে পরিণত হয়েছিল। পরে দেখা যায়, আরও কিছু ব্যাঙ্কের থেকে এ ভাবে টাকা ঋণ নিয়েছিল পূর্তি। আই আর ডি ই এ-র কাছ থেকে টাকা নিয়ে সেই ঋণ এককালীন মীমাংসা হিসেবে পূর্তি পরিশোধ করে। কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আজ বলেন, শেষমেশ আই আর ডি ই এ ৭১ কোটি টাকা উদ্ধার করতে পারলেও, ১২.৭৭ কোটি টাকা জলাঞ্জলি দিতে হয়। আর ঋণের উপর সুদ হিসেব করলে আই আর ডি ই-এর ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় আরও বহু কোটি টাকা। কংগ্রেসের বক্তব্য— শুধু সরকারি টাকা তছরুপ নয়, এ ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে।
কিন্তু গডকড়ীর সঙ্গে পূর্তির সম্পর্ক কী? পূর্তি যে আদতে গডকড়ীরই সংস্থা, তা মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে সুবিদিত। অভিষেক আজ বলেন, গডকড়ী শুধু পূর্তির প্রতিষ্ঠাতা বা ডিরেক্টর ছিলেন না, মহারাষ্ট্রে নিতিন গডকড়ী ও পূর্তি নামটি কার্যত সমার্থক। সুতরাং তাঁকে ইস্তফা দিতে হবে। টু-জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারিতে সিএজি-র রিপোর্টকে অস্ত্র করেই ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের অনাস্থা তৈরিতে সফল হয়েছিল বিজেপি। এ ক্ষেত্রে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে ক্ষতি হয়েছে বলে দুর্নীতির যে অভিযোগ, তা ভারতীয় রাজনীতিতে বফর্স পর্বের মতোই কিংবদন্তি হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু কংগ্রেস এখন সিএজি রিপোর্টকেই পাল্টা হাতিয়ার করতে চাইছে। তাদের মতে, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেও সিএজি বহু দুর্নীতির অভিযোগ তুলে রিপোর্ট দিয়েছে। এমনকী নরেন্দ্র মোদী যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী, তখন তাঁর সরকারের বিরুদ্ধেও সিএজি-র অনেক রিপোর্ট ছিল। অথচ সেগুলি বিধানসভায় কখনও আলোচনা করতেও দেননি মোদী। তবে সে দিন বিষয়গুলিকে জাতীয় রাজনীতিতে জোরালো ভাবে তুলে ধরতে না পারার ব্যর্থতাও মানছে কংগ্রেস।
তবে সেই অস্ত্রই এ বার ব্যুমেরাং করে বিজেপির দিকে ফেরাতে চায় তাঁরা। মোদীকে বিপাকে ফেলতে সংসদে বিষয়টি টেনে এনে সরকারের জবাব চাওয়া হবে।