মন্ত্রক নিয়ে কাড়াকাড়ি, দর্শক মোদী

অবস্থাটা এমন যে, নরেন্দ্র মোদীর  মন্ত্রিসভায় এখন কে কোন কাজটা করছেন আর আদতে কার কী দায়িত্ব, বোঝা দায়!  মোদী চান কাজে গতি আসুক। অথচ সমন্বয়হীনতায় ভুগছেন তাঁর মন্ত্রীরাই।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৮ ০৪:৪৯
Share:

নরেন্দ্র মোদী

অসুস্থ অরুণ জেটলির জায়গায় অর্থমন্ত্রী হয়েছেন পীযূষ গয়াল। কিন্তু জেটলি হুটহাট উপস্থিত হচ্ছেন মন্ত্রকের বৈঠকে। সশরীরে নয়। ভিডিয়োর পর্দায়।

Advertisement

প্রাক্তন বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষের হাতে এখন অর্থ ও রেল মন্ত্রকের দায়িত্ব। অথচ গ্রামে-গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার সাফল্য দাবি করে বিবৃতি, বিজ্ঞাপন দিয়ে বসেছেন তিনি। আর কে সিংহ, দায়িত্বপ্রাপ্ত বিদ্যুৎমন্ত্রী কিন্তু তা নিয়ে ঘোর অন্ধকারে।

পীযূষের মতোই পুরনো মায়ায় জড়িয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। বিমান মন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়িত্বও তাঁর। এয়ার ইন্ডিয়ার ক্রেতা ধরতে ব্যর্থ হলে কী হবে, শনিবার ডেকে নিলেন রেল-সাংবাদিকদের। বললেন, ‘‘তিন মাস অন্তর আড্ডা মারব আপনাদের সঙ্গে।’’ রেলে ফিরছেন? মিটিমিটি হাসলেন সুরেশ।

Advertisement

অবস্থাটা এমন যে, নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভায় এখন কে কোন কাজটা করছেন আর আদতে কার কী দায়িত্ব, বোঝা দায়! মোদী চান কাজে গতি আসুক। অথচ সমন্বয়হীনতায় ভুগছেন তাঁর মন্ত্রীরাই।

যেমন খাতায়-কলমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। ক’দিন আগেই কাশ্মীর গিয়েছিলেন সংঘর্ষবিরতি নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে। অথচ কেন্দ্রের একাংশের মতে, রাজ্যপাল শাসন জারির ব্যাপারে অন্ধকারে ছিলেন তিনি নিজেই। কাশ্মীর প্রশ্নে রাজনাথকে এখন আর দেখা যাচ্ছে না। জম্মু গিয়ে সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানিয়ে এসেছেন দলের সভাপতি অমিত শাহ।

রেল প্রতিমন্ত্রী মনোজ সিন্‌হার হাতে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রকের স্বাধীন দায়িত্ব। কিন্তু কল ড্রপের চেয়ে নিজের এলাকায় রেল ডিভিশন গঠনেই মন তাঁর। উত্তরপ্রদেশে তাঁর গ্রাস কেড়ে নিয়েছেন যোগী আদিত্যনাথ। মনোজ সেই জমি মেরামতিতেই ব্যস্ত।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আবার সোশ্যাল মিডিয়া সামলাচ্ছেন। তিনি প্রতিরক্ষার চেয়েও বিরোধীদের আক্রমণের অভিমুখ ঠিক করতে ব্যস্ত। জেটলিও ঘরে বসে সারাদিন রাহুলের কাজকর্ম অনুসরণ করে টুইট বা ব্লগ লিখছেন। বকলমের অর্থমন্ত্রী পীযূষ যেন রামায়ণের ভরত। ধনুর্ভাঙা পণ করেছেন জেটলির চেয়ারে বসবেন না। জেটলি সশরীরে মন্ত্রকে কবে হাজির হবেন জানেন না কেউই। কংগ্রেস এখন ব্লগমন্ত্রী বলে ডাকছে জেটলিকে। অস্বস্তির গুঞ্জন রুখতে আজ জেটলির প্রশংসায় মুখর পীযূষ।

অথচ অনেক দিন পর্যন্ত মোদীর মন্ত্রীরা পোশাকআশাক থেকে প্রোটোকল, সব নিয়েই তটস্থ থাকতেন। কে কী বলছেন, কোথায় যাচ্ছেন, সবই নিয়ন্ত্রণ করতেন মোদী। সেই সরকারের ছন্নছাড়া হাল কেন?

সূত্রের দাবি, পরপর নির্বাচনে বিজেপি যত জমি হারাচ্ছে ততই নিয়ন্ত্রণ শিথিল হচ্ছে মোদী-শাহের। অভিমুখের অভাবেই দিশেহারা দলের মন্ত্রীরা। মাথা তুলছেন বরং রামবিলাস পাসোয়ান, উপেন্দ্র কুশহাওয়ার মতো শরিকরা। সেই সঙ্গে রাহুল এখন এত সক্রিয় যে দিনভর সেই আক্রমণ সামলাতে কালঘাম ছুটছে। অমিত শাহের সমবায় ব্যাঙ্কে সবচেয়ে বেশি বাতিল নোট জমার অভিযোগ উঠতেই নজর ঘোরাতে তড়িঘড়ি আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদকে দিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করানো হল। কাশ্মীর প্রশ্নে কংগ্রেসের আক্রমণের জবাব দিলেন। প্রাক্তন বিচারপতি চেলমশ্বরের অবসরের দিন ছুটলেন বিজেপির সদর দফতরে। কংগ্রেসের মুখপাত্র পবন খেড়ার তাই কটাক্ষ, ‘‘মন্ত্রীরা কাজ করবেন কী করে! তাঁরা তো একে অপরকে বাঁচাতে ব্যস্ত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement