নজরদারি: বিক্ষোভের আশঙ্কায় টহল নিরাপত্তা বাহিনীর। নিছিতপুর স্টেশনে। ছবি: চন্দন পাল।
রেক একটি। দাবিদার ২০ লক্ষ যাত্রী। ট্রেনের নাম ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস। তাকে নিয়ে দু’টি এলাকার ওই যাত্রীদের মধ্যে চলছে দাবির দ্বৈরথ।
খনির আগুনে মাটি ঝুরঝুরে হয়ে রেললাইনে বিপদের আশঙ্কা থাকায় ধানবাদ-চন্দ্রপুরা রুট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেই অচল লাইনের বাতিল ট্রেনের রেক কারশেডে ফেলে না-রেখে খড়্গপুর-মেদিনীপুর-বাঁকুড়া-পুরুলিয়া রুট দিয়ে রাঁচী পর্যন্ত চালানোর দাবি তুলেছেন বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার যাত্রীরা। আবার ধানবাদের চন্দ্রপুরা, কতরাসগড় এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, রেকটিকে গোমো দিয়ে চালানো হোক। রেল প্রশাসনের অনুমতি পাওয়া গেলে এবং ওই লাইনের ক্ষমতা থাকলে ট্রেনটি সেখানে চালানোর কথা ভাবা হবে বলে জানান দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ।
প্রশ্ন উঠছে, অন্যদের দাবির কী হবে? হাওড়া-রাঁচী ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস তিন দিন খড়্গপুর-টাটানগর-মুড়ি হয়ে চলাচল করে। অন্য তিন দিন চলাচল করত হাওড়া-আসানসোল-ধানবাদ-চন্দ্রপুরা হয়ে। এই রুটটিই বন্ধ করে দিয়েছে রেল প্রশাসন। ফলে এই ট্রেনের রেকটি তিন দিন বসিয়ে না-রেখে সেটি হাওড়া-খড়্গপুর-মেদিনীপুর-বাঁকুড়া-আদ্রা-ভজুডি-তালগেড়িয়া-জামুরিয়া-বোকারো-ঝালদা-মুড়ি হয়ে রাঁচী পর্যন্ত চালানোর দাবি উঠছে।
চন্দ্রপুরা এলাকার বাসিন্দাদের এক অংশের দাবি, অচল হয়ে যাওয়া ওই রুটের ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস গোমো দিয়ে চালানো হোক। ধানবাদ-চন্দ্রপুরা রেললাইন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে রাঁচী শতাব্দী এক্সপ্রেস এখন ধানবাদ থেকে গোমো হয়ে রাঁচী যাচ্ছে।
চন্দ্রপুরার যাত্রীরা চান, ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসকে সেই পথেই তিন দিন চালানো হোক। তা হলে চন্দ্রপুরা, কতরাস এলাকার বাসিন্দারা সহজেই আসানসোল, দুর্গাপুর, বর্ধমান বা হাওড়ায় যেতে পারবেন। ওই এলাকার বাসিন্দারা ধানবাদ স্টেশনে ডিআরএমের কাছে শুক্রবার এই মর্মে দাবিপত্রও পেশ করেছেন।
যাত্রীদের কথা মাথায় রেখেই বাতিল হয়ে যাওয়া ভাগলপুর-রাঁচী বনাঞ্চল এক্সপ্রেসকে ধানবাদ-গোমো দিয়ে চালানোর কথা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে। ধানবাদ-গোমো লাইনে এমনিতেই ট্রেনের খুব ভিড়। এই অবস্থায় ইন্টারসিটিকে আবার ওই রুটে চালানো যাবে কি না, সেটাই প্রশ্ন। ধানবাদের ডিআরএম মনোজ কৃষ্ণ আখোরি বলেন, ‘‘গোমো দিয়ে সর্বাধিক যত ট্রেন চালানো সম্ভব, তাই চালানো হচ্ছে। রেলের পরিভাষায় এটাকে বলে, রুটের ‘সম্পৃক্ত অবস্থা’। এর পরে নতুন কোনও ট্রেন ওই লাইনে চালানো যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার যাত্রীদের বক্তব্য, ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস ওই রুটে চললে তাঁরা একটি নতুন ট্রেন পাবেন। সে-ক্ষেত্রে যে-রুটে ট্রেন বন্ধ হয়ে গিয়েছে, সেই কতরাস এলাকার বাসিন্দারাও তালগেড়িয়ায় নেমে বাসে কতরাস যাওয়ার সুযোগ পাবেন। বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার বাসিন্দারা কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর ট্রেন চাইছেন দীর্ঘদিন ধরে। ওই দুই জেলার যাত্রীদের এই চাহিদা যে অমূলক নয়, তা স্বীকার করছেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্তারাও। অনুমতি পেলে নতুন রুটে ট্রেন চালু করা যেতে পারে বলে জানান তাঁরা।