নীতীশ কুমার ও গিরিরাজ সিংহ।
‘লাভ জেহাদ’ নিয়ে সুর চড়ালেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিহারের বিজেপি নেতা গিরিরাজ সিংহ। সামাজিক ঐক্যের পক্ষে লাভ জেহাদ ‘ক্যানসার’ বলে মনে করেন তিনি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মতে, ‘লাভ জেহাদ’ রুখতে বিহারে আইন প্রণয়ন করা উচিত। বিহারে বিজেপির শরিক তথা মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের দল জেডিইউ অবশ্য গিরিরাজের বক্তব্যকে আমল দিতে রাজি নয়। আর তা নিয়েই শুরু হয়েছে দুই শরিকের মনোমালিন্য।
তথাকতিত ‘লাভ জেহাদ’ রুখতে আইন আনার তোড়জোড় শুরু করেছে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, কর্নাটকের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্য। বিহারেও সেই পথে হাঁটতে চাইছে পদ্ম-শিবির। নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র বেগুসরাইয়ে গত কাল গিরিরাজ বলেন, “লাভ জেহাদ দেশের সামনে বিপদ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আজ সামাজিক ঐক্য রক্ষার পক্ষে এটা ক্যানসারের মতো। অনেক রাজ্যই এর বিরুদ্ধে আইন আনতে চলেছে। ‘লাভ জেহাদ’ রুখতে বিহার সরকারেরও আইন আনা উচিত।” গিরিরাজের মতে, লাভ জেহাদ-বিরোধী আইনকে কখনওই সাম্প্রদায়িক তকমা দেওয়া উচিত নয়। এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দাবি, “সকলকেই বুঝতে হবে, শুধু হিন্দুরা নন, ‘লাভ জেহাদ’ অ-মুসলিম সব সম্প্রদায়ের কাছেই বিপদ।”
গত কয়েক বছর ধরে বিহারের কট্টরপন্থী বিজেপি নেতারা অভিযোগ তুলছেন, নীতীশ কুমার সরকার মুসলিম তোষণ করছে। কারও নাম না-করে গিরিরাজ বলেছেন, “সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মান্তরের মূলে রয়েছে তোষণ নীতি। এই নীতির মূলে আঘাত করতে হবে।” তিনি মনে করেন, বিহার সরকারের উচিত জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণেও আইন প্রণয়ন করা।
লাভ জেহাদ নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ জেডিইউ। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জেডিইউ নেতা বশিষ্ঠনারায়ণ সিংহ বলেছেন, “এ ব্যাপারে আলোচনার প্রয়োজন নেই। অনেকেই অনেক সময় নানা ধরনের মন্তব্য করেন। তা নিয়ে চর্চা করতে হবে এমন নয়।”
বিধানসভা নির্বাচনে আসনপ্রাপ্তির নিরিখে বিহারে এনডিএ-র বড় শরিকের তকমা হারিয়েছে জেডিইউ। তা সত্ত্বেও নীতীশকেই পটনার কুর্সিতে বসিয়েছে বিজেপি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, এ বার নীতীশকে চলতে হবে বিজেপির অঙ্গুলিহেলনে। নিজেদের নীতিগুলি কার্যকর করতে তাঁর উপর চাপ বাড়েবেন বিজেপি নেতারা। শপথ গ্রহণের এক সপ্তাহের মধ্যেই সেই কাজ শুরু করে দিলেন গিরিরাজ। বিজেপির অন্দরে তিনি কট্টর হিন্দুত্ববাদী এবং নীতীশ-বিরোধী হিসেবে পরিচিত।
গিরিরাজের মন্তব্য নিয়ে বিজেপিকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি ছত্তীসগঢ়ের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বঘেল। তাঁর কটাক্ষ, “বিজেপি নেতাদের পরিবারের অনেকেও ভিন্ন ধর্মে বিয়ে করেছেন। বিজেপি নেতাদের কাছে জানতে চাই, ওই বিয়েগুলিও ‘লাভ জেহাদ’ তো?”