রাজস্থানে আস্থা-জয় অশোক গহলৌতের। ছবি: পিটিআই
অশান্তির পূর্বাভাস ছিল। রাজস্থান বিধানসভার অধিবেশনের প্রথম দিনেই নির্ভুল ভাবে তা মিলিয়ে দিলেন বিজেপি বিধায়কেরা। স্লোগান, কাগজ ছোড়াছুড়ি, নিরাপত্তারক্ষীদের দিকে তেড়ে যাওয়া— কিছুই বাদ গেল না! তারই মধ্যে শুক্রবার বিধানসভার অধিবেশনে আস্থাভোটে জিতে জয়পুরের কুর্সি নিশ্চিত করলেন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত।
ধ্বনি ভোটে আস্থা-জয়ের পরে মুখ্যমন্ত্রী গহলৌত বলেন, ‘‘আমরা আজ ঐক্যবদ্ধ ভাবে বিজেপির চক্রান্ত ভেস্তে দিয়েছি।’’ আস্থাভোটের পরই স্পিকার সি পি জোশী আগামী ২১ অগস্ট পর্যন্ত বিধানসভার অধিবেশন মুলতুবি করে দেন।
বিদ্রোহে ইতি টেনে সচিন পাইলট-সহ ১৯ জন কংগ্রেস বিধায়কের ‘ঘর ওয়াপসি’র পরেই বিধানসভায় শক্তিপরীক্ষার ফলাফল নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। তবে বিজেপির তরফে অনাস্থা প্রস্তাব আনার কথা ঘোষণার পরে অশান্তির আশঙ্কা তৈরি হয়। রাজস্থান বিধানসভার কর্মীরা বৃহস্পতিবার রাতভর ব্যস্ত ছিলেন রক্তপাতের সম্ভাবনা এড়ানোর কাজে। বিধায়কেরা যাতে চেয়ার তুলে ছোড়াছুড়ি করতে না পারেন সেগুলি শক্ত করে শিকল দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়েছিল!
বিজেপির অনাস্থা প্রস্তাব নয়, মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের পরামর্শ মেনে আজ অধিবেশনের শুরুতে আস্থাভোটের সিদ্ধান্ত নেন রাজস্থান বিধানসভার স্পিকার জোশী। জয়পুরে প্রবল বৃষ্টির কারণে সময় মতো অধিবেশনে পৌঁছতে পারেননি কংগ্রেস বিধায়করা। বিজেপি বিধায়কদের হট্টগোলের মধ্যেই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে অধিবেশন দুপুর ১টা পর্যন্ত মুলতুবি করে দেন স্পিকার।
বিরতির পরে অধিবেশন শুরু হলে স্পিকারের নির্দেশে গহলৌত মন্ত্রিসভার তরফে আস্থা প্রস্থাব পেশ করেন মন্ত্রী শান্তি ধারিওয়াল। আস্থা বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে মুঘল সম্রাট আকবরের তুলনা করেন তিনি। শান্তি বলেন, ‘‘মহারানা প্রতাপ বহিরাগত হামলাকারীকে প্রতিরোধ করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত একই ভাবে বহিরাগত চক্রান্তকারীকে রুখে রাজস্থানকে রক্ষা করলেন।’’ এই মন্তব্যের পরেই বিজেপি বিধায়কেরা সভায় গন্ডগোল শুরু করেন। স্পিকার বার বার সংযত হওয়ার আবেদন জানানোর পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
কংগ্রেসের তরফে আজ দলীয় বিধায়কদের উদ্দেশে আস্থা প্রস্তাব সমর্থনের জন্য হুইপ জারি করা হয়। অন্য দিকে, কংগ্রেসে যোগ দেওয়া ছ’জন বিধায়কের উদ্দেশে আস্থা ভোটে অংশ না নেওয়ার জন্য গতকাল হুইপ জারি করে বিএসপি। যদিও সেই নির্দেশ উপেক্ষা করেই ট্রেজারি বেঞ্চে হাজির হন তাঁরা। ২০০ আসনের রাজস্থান বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য ১০১ বিধায়কের সমর্থন প্রয়োজন। সচিনরা ফিরে আসার পরে অন্তত ১২২টি ভোট পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিন্ত কংগ্রেস শিবির।
আরও পড়ুন: গভীর কোমায় চলে গেলেন প্রণব, রয়েছেন ভেন্টিলেশনেই
বৃহস্পতিবার কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠকে সচিন পাইলটের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেছিলেন গহলৌত। নিজের অনুগামীদের পুরনো ঘটনা ভুলে যাওয়ারও বার্তা দিয়েছিলেন। আজ সকালে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী টুইটারে লেখেন, ‘‘আজ বিধানসভার অধিবেশন শুরু হতে চলেছে। জয় হবে রাজস্থানের জনতার। কংগ্রেস বিধায়কদের ঐক্যে জয় হবে সত্যের। সত্যমেব জয়তে।’’
আরও পড়ুন: সংশয় কার্যকারিতা নিয়ে, ভারতে না-ও মিলতে পারে রাশিয়ার করোনা টিকা
প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সচিন অবশ্য আজ বিধানসভার সামনের সারিতে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে বসেননি। দ্বিতীয় সারিতে বিজেপি বিধায়কদের আসন লাগোয়া এক নির্দল বিধায়কের পাশে চেয়ারে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এ প্রসঙ্গে বিজেপি বিধায়কদের টিপ্পনীর জবাবে সচিন বলেন, ‘‘শক্তিশালী সেনাদের সব সময় সীমান্তেই পাঠানো হয়।’’ সেই সঙ্গে রাহুল গাঁধী ও প্রিয়ঙ্কা বঢরার সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘‘দিল্লিতে ডাক্তার দেখিয়ে ফিরে এসেছি। এখন কোনও সমস্যা নেই।’’