মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
বিরোধী ঐক্যের সলতে পাকানো শুরু হতে না হতেই মতভেদ দেখা দিল।
কংগ্রেস শীর্ষনেতৃত্ব বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের হাতে তৃণমূল, বিআরএস, আপ-এর মতো দলগুলির সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব তুলে দিতে চাইলেও এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পওয়ার মনে করছেন, এ জন্য বিভিন্ন বিরোধী দলের বাছাই করা কয়েক জনকে নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করা উচিত। তাতে কংগ্রেস, এনসিপি-র সঙ্গে সিপিএম ও সমাজবাদী পার্টির নেতাদের রাখা যেতে পারে।
বৃহস্পতিবার রাতেই শরদ পওয়ার মুম্বই থেকে দিল্লি উড়ে এসে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে ও রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। বৈঠকের পরে নিজেই বলেছিলেন, সবাইকে এককাট্টা করতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরীওয়ালদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। শুক্রবার দুপুরে মুম্বই ফিরে গিয়ে তিনি কর্নাটক নির্বাচনে এনসিপি-র প্রার্থী নামানোর পরিকল্পনা শুরু করেছেন। এর জেরে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কংগ্রেসের ভোটে ভাঙন ধরার আশঙ্কা তৈরি হবে। কিন্তু সদ্য জাতীয় দলের তকমা হারানো এনসিপি-র সুপ্রিমো নিজের দলের ভোটের হার বাড়ানো নিয়ে বেশি চিন্তিত।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, গোড়াতেই এমন বাধা এনে বিরোধী জোট কী ভাবে এগোবে?
নীতীশ কুমার দিল্লিতে মল্লিকার্জুন, রাহুলের সঙ্গে বৈঠকের পরেই অরবিন্দ কেজরীওয়াল, সীতারাম ইয়েচুরিদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। বিজেপি কটাক্ষ করেছিল, নীতীশ আসলে প্রধানমন্ত্রী পদের উচ্চাকাঙ্খা পূরণ করতে মাঠে নেমেছেন। জেডিইউ এত দিন নীতীশকে ‘সুশাসন বাবু’ তকমা দিয়ে তুলে ধরত। দিল্লিতে বিরোধী ঐক্যের বৈঠক সেরে পটনা ফেরার পরে জেডিইউ-র হোর্ডিংয়ে নীতীশকে ‘নীতিকার’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। তকমা জুড়ে দেওয়া হয়েছে। বিরোধী শিবিরে অনেকেরই প্রশ্ন, নীতীশ কি আসলে নিজেকে নরেন্দ্র মোদীর বিপরীতে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরতে আগ্রহী?
ঠিক এই কারণেই নীতীশের বদলে বিরোধী ঐক্যের সমন্বয়ের কাজটি বিরোধী নেতাদের নিয়ে তৈরি কমিটির করা উচিত বলে অনেকের মত। পওয়ার ঘনিষ্ঠ শিবিরে জানিয়েছে, কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব রেখে চলা দলগুলির সঙ্গে কথা বলার জন্য ওই কমিটিতে তাঁর সঙ্গে কংগ্রেসের দিগ্বিজয় সিংহ, সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি, এসপি-র রামগোপাল যাদবের মতো নেতারা থাকতে পারেন। একটি অভিন্ন কর্মসূচি তৈরি করা দরকার। যে সব বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে, তা বাদ দিয়ে যে সব বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে, তার ভিত্তিতে অভিন্ন কর্মসূচি তৈরি করতে হবে।
পওয়ার নিজেই সম্প্রতি রাহুল গান্ধী তথা কংগ্রেসের আদানি-কাণ্ডে জেপিসি তদন্তের দাবি ও বিনায়ক দামোদর সাভারকরকে নিশানা নিয়ে তাঁর আপত্তি জানিয়েছিলেন। একই সঙ্গে বিরোধী ঐক্যের কথাও বলেছেন। তা হলে এনসিপি কেন কর্নাটকে প্রার্থী দিতে চলেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ অধিকাংশ বিরোধী নেতাই মনে করছেন, ২০২৪-এ রাজ্য স্তরে বোঝাপড়া করে প্রতিটি আসনে বিজেপির বিরুদ্ধে সমস্ত ভোট এক বাক্সে এনে ফেলতে হবে। অথচ এনসিপি নেতারা বলছেন, তাঁরা কর্নাটকের ২২৪টি আসনে অন্তত ৪০-৪৫টি আসনে প্রার্থী দিতে চান। মহারাষ্ট্র সীমান্তবর্তী কর্নাটকে ‘মহারাষ্ট্র একীকরণ সমিতি’কে সমর্থন করবে এনসিপি।
শরদ পওয়ারের এই ‘দু’মুখো নীতির’ জেরে এনসিপি সম্পর্কে বিরোধী শিবিরে সংশয় তৈরি হচ্ছে। এমনিতেই মহারাষ্ট্রে শরদ পওয়ারের ভাইপো অজিত পওয়ারের নেতৃত্বে এনসিপি বিধায়কদের একটা বড় অংশ একনাথ শিন্দের শিবসেনা-বিজেপি সরকারের সঙ্গে যোগ দিতে পারে জল্পনা চলছে। উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউতও জানিয়েছেন, বিজেপি শিবসেনার মতো এনসিপি-কে ভাঙানোর পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করেছে। রাজনৈতিক শিবিরের প্রশ্ন, অজিত পওয়ার বিজেপির সঙ্গে হাত মেলালে তাতে কি শরদ পওয়ারের সায় থাকবে!