মনমোহনকে ফের বিঁধতে তৈরি সিবিআই

মোটেই ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাননি মনমোহন সিংহ। চাইলেই তাঁকে নিশানা করে কংগ্রেসকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে সিবিআই। মোদী সরকার ও সিবিআই-এর অন্দরমহলের খবর, কয়লা কেলেঙ্কারিতে মনমোহনের গায়ে ছেটানোর মতো কালি এখনও মজুত রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৭ ০৩:২০
Share:

মোটেই ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাননি মনমোহন সিংহ। চাইলেই তাঁকে নিশানা করে কংগ্রেসকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে সিবিআই। মোদী সরকার ও সিবিআই-এর অন্দরমহলের খবর, কয়লা কেলেঙ্কারিতে মনমোহনের গায়ে ছেটানোর মতো কালি এখনও মজুত রয়েছে।

Advertisement

সোমবারই কয়লা কেলেঙ্কারি মামলায় প্রাক্তন কয়লাসচিব এইচ সি গুপ্তকে কারাদণ্ড দিয়েছে বিশেষ সিবিআই আদালত। মধ্যপ্রদেশের একটি কয়লাখনি বেসরকারি সংস্থাকে বরাদ্দ করা নিয়ে দুর্নীতিতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তিনি। সে সময় মনমোহনের হাতেই কয়লা মন্ত্রকের ভার ছিল। কিন্তু আদালত রায় দিয়েছে, মধ্যপ্রদেশের ওই খনি বণ্টন নিয়ে গুপ্ত মনমোহনকে অন্ধকারে রেখেছিলেন। তাঁকে ভুল পথে চালিত করেছিলেন।

আদালতের এই রায়ের পরেই কংগ্রেস নেতারা বলছে শুরু করেছেন, সত্যেরই জয় হল। মনমোহন সিংহর পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তিতে কালি ছেটানোর চেষ্টা করেছিল বিজেপি। কিন্তু প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী যে দুর্নীতিমুক্ত, তা ফের প্রমাণিত হল।

Advertisement

মোদী সরকারের কর্তাব্যক্তিরা অবশ্য এই যুক্তি মানতে নারাজ। একই মত সিবিআই অফিসারদেরও। তাঁদের মতে, কয়লা খনি বণ্টনের দুর্নীতিতে মনমোহন সিংহের বিরুদ্ধে আসল মামলার এখনও ফয়সালাই হয়নি। মনমোহনের বিরুদ্ধে আসল মামলাটি হল ওড়িশার একটি কয়লা খনি হিন্দালকো সংস্থাকে দেওয়া নিয়ে। ওই খনিটি প্রথমে অন্য সংস্থাকে বরাদ্দ করা হলেও, শিল্পপতি কুমারমঙ্গলম বিড়লা চিঠি লিখে মনমোহনকে অনুরোধ জানান, সেটি হিন্দালকো-কে বরাদ্দ করা হোক। মনমোহন তা তৎকালীন কয়লাসচিব পি সি পারেখের কাছে পাঠিয়ে দেন। তার পরেই হিন্দালকো-র জন্য খনিটি বরাদ্দ হয়।

আরও পড়ুন: মোদী,পলানী কী কথা, জারি জল্পনা

ওই মামলায় সিবিআই আদালত মনমোহনকে সশরীরে কোর্টে হাজির হওয়ার জন্য সমনও পাঠিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে আদালতে হাজিরা থেকে রেহাই পেয়েছেন মনমোহন। কিন্তু মামলায় তাঁর নাম এখনও রয়েছে। সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, কয়লা কেলেঙ্কারির তদন্তকারী দলকে মনমোহন সিংহ জানিয়েছেন, তিনি কুমারমঙ্গলম বিড়লার চিঠি শুধুমাত্র কয়লা মন্ত্রকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কও সুপারিশ করেছিলেন। তা-ও তিনি কয়লা মন্ত্রকে পাঠিয়ে দেন। এ বিষয়ে কোনও চাপাচাপি তিনি করেননি।

ইউপিএ-সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি এলে তিনি তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকে পাঠিয়ে দেন। এটাই নিয়ম। তার জন্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করা চলে না। প্রাক্তন কয়লাসচিব এইচ সি গুপ্তও দাবি করেছিলেন, মধ্যপ্রদেশের কয়লাখনি বণ্টনে মনমোহন সিংহই চূড়ান্ত ছাড়পত্র দিয়েছেন। কিন্তু আদালতে তা ধোপে টেকেনি। হিন্দালকো-র ক্ষেত্রেও আদালত একই অবস্থান নিতে পারে বলে আশা কংগ্রেস নেতাদের।

সিবিআই কর্তাদের যুক্তি, মনমোহন নিজের বক্তব্য জানিয়েছেন। আদালতেও সব তথ্য জমা পড়েছে। কিন্তু শুনানিতে সিবিআই মনমোহনের বিরুদ্ধে কতখানি কড়া অবস্থান নেবে, সে বিষয়ে অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনৈতিক স্তরেই সিদ্ধান্ত হবে। তবে কয়লা কেলেঙ্কারিতে সিবিআই যে রাশ আলগা করছে না, তার প্রমাণ মিলেছে। মঙ্গলবার মধ্যপ্রদেশের একটি কয়লা খনি বণ্টন নিয়ে প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ নবীন জিন্দলের বিরুদ্ধে ফের চার্জশিট পেশ করেছে সিবিআই। যাঁর ভিত্তিতে আদালত তাঁকে সমনও পাঠিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement