নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকের ফল ফলতে শুরু করেছে।
বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক বিরোধের কথাবার্তা জারি রেখেও প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সংস্কারের কর্মসূচিতে সমর্থন দিতে শুরু করেছে তৃণমূল। কয়েক দিন আগেই রাজ্যসভা থেকে ওয়াকআউট করে বিমা বিল পাশে সুবিধা করে দিয়েছিল তারা। আজ এক কদম এগিয়ে রাজ্যসভায় কয়লা ও খনি বণ্টন বিলগুলিতে সরকারকে সরাসরি সমর্থন দিয়েছে মমতার দল। কংগ্রেস ও বামেরা বিরোধিতা করলেও রাজ্যসভায় বিলগুলি আটকানো যায়নি। তৃণমূল ছাড়া সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, এনসিপি-ও বিলে সমর্থন দিয়েছে। ওয়াকআউট করেছে জেডিইউ।
তবে এ দিন কংগ্রেস যখন সরকারের বিরোধিতা করছে, তখন রাজ্যসভায় অনুপস্থিত ছিলেন তাদের ১৪ জন সাংসদ। এ নিয়ে দলের মধ্যে হইচই শুরু হয়ে যায়। পরে দেখা যায়, দলের সাংসদদের সংসদে হাজির থাকার জন্য হুইপ জারি করতেই ভুলে গিয়েছেন নেতা সত্যব্রত চতুর্বেদী! খনি বিল এ বার পেশ হবে লোকসভায়। যেখানে বিল পাশ করানোর ক্ষেত্রে তেমন কোনও সমস্যাই নেই সরকারের।
জমি বিল নিয়ে সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বে সংসদ থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন পর্যন্ত পদযাত্রায় বিরোধী দলগুলির ঐক্য ফুটে উঠেছিল। এ দিন যদিও খনি ও কয়লা খনি বণ্টন বিলে একেবারে উল্টো ছবি। ফলে শুরু হয়েছে দোষারোপ। জমি অর্ডিন্যান্স রুখে দিতে সংসদে বিরোধী ঐক্যের জন্য তৃণমূলকে এখনও প্রয়োজন সনিয়া গাঁধীর। কিন্তু খনি ও কয়লা খনি বণ্টন বিলে তৃণমূল সায় দেওয়ায় আজ তাঁদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা। দিগ্বিজয় সিংহের অভিযোগ, “কয়লা ও খনি বিল নিশ্চিত ভাবেই রাজ্যের অধিকারকে খর্ব করছে। কিন্তু সব জেনেও রাজনৈতিক কারণে কেন্দ্রের সঙ্গে আপস করল তৃণমূল।”
বিলগুলি সমর্থনের প্রশ্নে তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের যুক্তি, “সিলেক্ট কমিটির সুপারিশ অনেকটাই মেনে নিয়েছে সরকার। বিষয়টা দু’ভাবে দেখা যেতে পারে। গ্লাস অর্ধেক ভর্তি বা অর্ধেক খালি।
আমরা গ্লাস অর্ধেক ভর্তি ধরে নিয়েই সমর্থন জানালাম।” তবে ঘরোয়া আলোচনায় তৃণমূল সাংসদরা স্বীকার করছেন, মোদীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকের পরেই তৃণমূলের কেন্দ্র-বিরোধিতার মাত্রার পরিবর্তন হয়েছে। খনি ও খনিজ পদার্থ বিল এবং কয়লা খনি বণ্টন বিলে সায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত দলের সর্বোচ্চ স্তরে তখনই নেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী দিল্লিতে থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রী পীযূষ গয়াল।
কংগ্রেসের দাবি, কয়লা খনি বণ্টনের ফলে রাজ্যের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। আনন্দ শর্মা, প্রদীপ ভট্টাচার্য অভিযোগ আনেন, সরকার ঘুরপথে কয়লা খনির বেসরকারিকরণ করেছে। ফলে খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের পরে তার ব্যবহার নিয়ে রাজ্যের কোনও বক্তব্য গ্রাহ্য হবে না। কী কাজে ওই কয়লার ব্যবহার হবে, তা কেন্দ্র স্থির করবে। রাজ্য শুধু খনি অঞ্চলের আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্বে থাকবে। পাশাপাশি, নিলামের আগে খনিগুলিতে যে শ্রমিকরা কাজ করছেন, নতুন মালিক তাঁদের কাজে নিতে বা বকেয়া পাওনা মেটাতে দায়বদ্ধ থাকবেন না। কংগ্রেস মনে করছে, যে হেতু কয়লার বাণিজ্যেও সরকার অনুমতি দিয়েছে এবং মূল্য নির্ধারণের জন্য কোনও নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করেনি, তাই সাধারণ মানুষ এবং ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
খনি বিলে এবং কয়লা খনির ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণে কী ব্যবস্থা হবে, তা স্পষ্ট করা হয়নি বলেই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছে কংগ্রেস। যদিও ইউপিএ জমানার জমি আইনে বলা হয়েছিল, কয়লা বা অন্য খনির ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণে মূল জমি আইনের শর্ত অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ
দিতে হবে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আজ বলেন, “কংগ্রেস চায় দেশ ও দেশের মানুষ চিরকাল গরিব থাকুক। সে জন্য এই সব সংস্কারে বাধা দিচ্ছে।” কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের পাল্টা দাবি, সাধারণ মানুষের বদলে কর্পোরেটের সুবিধা করে দিতেই মরিয়া মোদী সরকার। তাই কয়লা ও খনি বিল দু’টি নিয়েও এখন সরকার-বিরোধী প্রচার চালাবে কংগ্রেস।