প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। —ফাইল চিত্র।
কেন্দ্র কিংবা কোনও রাজ্য সরকারের প্রধানেরা যখন সুপ্রিম কোর্ট কিংবা হাই কোর্টগুলির প্রধান বিচারপতিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তখন তাঁদের মধ্যে কোনও সমঝোতা হয়েছে— এমন ভাবার কারণ নেই। অবসরের কয়েক সপ্তাহ আগে, আজ এই মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। সম্প্রতি গণেশপুজো উপলক্ষে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তা নিয়ে বিতর্কও হয়েছিল। আজ প্রধান বিচারপতির বক্তব্যকে এর জবাব বলেই মনে করা হচ্ছে।
মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মরাঠী সংবাদপত্রের অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, কেন্দ্র কিংবা রাজ্য সরকারের প্রধানেরা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি কিংবা হাই কোর্টগুলির প্রধান বিচারপতিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে থাকেন। কিন্তু সেই সব বৈঠকে তাঁরা রাজনৈতিক পরিপক্কতার পরিচয় দিয়ে থাকেন। বকেয়া মামলা নিয়ে আলোচনা করেন না। প্রধান বিচারপতির কথায়, ‘‘আমরা দেখা করি। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে কোনও সমঝোতা হয়ে গেল। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা চলতে থাকে, কারণ তাঁরাই বিচার ব্যবস্থার বাজেট বরাদ্দ করে থাকেন। আর এই অর্থ বরাদ্দের ব্যাপারটা বিচারপতিদের জন্য নয়।’’ প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের মন্তব্য, ‘‘আমরা যদি দেখা না করি, শুধু চিঠির উপরেই ভরসা রাখি, তাহলে আমাদের কাজ হবে না। বিশ্বাস করুন, আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে পরিপক্কতা রয়েছে, আর আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হল, এই ধরনের বৈঠকে কোনও মুখ্যমন্ত্রীই বকেয়া মামলার কথা তোলেন না।’’
প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বোঝাতে চান, বিচারপতিরা যে ধরনের কাজ রোজ করে থাকেন, তার সঙ্গে সরকার ও বিচারবিভাগের প্রশাসনিক কাজকর্মের ফারাক রয়েছে। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট ও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশাসনিক সম্পর্কের বিষয়টি শীর্ষ আদালতের বিচারের প্রক্রিয়া থেকে একেবারেই আলাদা। কোনও মুখ্যমন্ত্রী ও হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি উৎসবের মরসুমে পরস্পরের সঙ্গে দেখা করবেন, এটা আমাদের ঐতিহ্য। কিন্তু তার সঙ্গে যে বিচার প্রক্রিয়ার কোনও যোগ নেই, সেটা বোঝার মতো ভাবনা আমাদের থাকতে হবে।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘জনগণের সামনে সাক্ষাৎ করছেন যাঁরা, তাঁরা কোনও বিষয়ে সমঝোতা করবেন, এমনটা ভাবার কারণ নেই।’’ প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের মতে, সরকারের প্রধানদের সঙ্গে বিচারপতিদের আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে, সেটা মেনে নিতে হবে। বিচারপতিরা স্বাধীন ভাবে যে ধরনের কাজ করে থাকেন, তার সঙ্গে একে মেলালে চলবে না।
বিচারপতিদের ছুটি নিয়ে সমালোচনা প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাব দেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। জানান, তিনি নিজে রাত সাড়ে ৩টের সময় কাজ শুরু করেন। তাঁর মতে, কাজ নিয়ে বিচারপতিদের প্রবল চাপের মধ্যে থাকতে হয়। ফলে সবাইকে বুঝতে হবে বিচারপতিদেরও নিজস্ব কিছু সময়ের প্রয়োজন, যখন তাঁরা আইনের বিষয়ে ভাবতে পারেন। বিচারপতিদের দেওয়া রায় যেহেতু সমাজের ভবিষ্যতের সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে, সেজন্য তাঁদের সেই ভাবনার জরুরি। তাঁর যুক্তি, আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা বছরে ১৮১টি মামলার রায় দেন। অথচ ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা একটা সোমবারেই ১৮১টি মামলায় নিজেদের মতামত জানান।