National News

চাকমা-হাজংদের নাগরিকত্ব মানবে না অরুণাচলবাসী, কেন্দ্রকে চিঠি পেমার

সম্প্রতি রাজনাথ সিংহ অরুণাচলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু ও অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে দিল্লিতে বৈঠক করেন। সেখানেও পেমা চাকমা-হাজংদের নাগরিকত্বের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রের আপোস প্রস্তাব ছিল, চাকমা-হাজংদের নাগরিকত্ব দিলেও জমির অধিকার দেওয়া হবে না। কাজ করা ও থাকার জন্য তাঁদের ইনারলাইন পারমিট ধাঁচের কোনও পারমিট দেওয়া হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১৭:১৬
Share:

—নিজস্ব চিত্র।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ও কেন্দ্রের চাপের পরেও রাজ্যবাসীর আপত্তিতে চাকমা-হাজং শরণার্থীদের নাগরিকত্বে বেঁকে বসলেন অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু। বিজেপি শাসিত রাজ্য, শরিকদের বোঝাও ঘাড়ে নেই, কিন্তু তার পরেও পেমা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের নির্দেশ পালন করতে পারছেন না। কারণ, রাজ্যের সব দল-সংগঠন চাকমা-হাজং শরণার্থীদের বোঝা বইতে নারাজ। এই পরিস্থিতিতে জোর করে চাকমা-হাজং শরণার্থীদের অরুণাচলের নাগরিক হিসেবে চাপিয়ে দিলে ফল বিপরীত হবে। হাত শক্ত হবে কংগ্রেসের। তাই সব দিক বিবেচনার জন্য রাজনাথকে চিঠি পাঠিয়েছেন পেমা খান্ডু। গোপন চিঠি নয়, চিঠির প্রতিলিপি সংবাদমাধ্যমকেও পাঠিয়ে দেন তিনি।

Advertisement

সম্প্রতি রাজনাথ সিংহ অরুণাচলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু ও অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে দিল্লিতে বৈঠক করেন। সেখানেও পেমা চাকমা-হাজংদের নাগরিকত্বের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রের আপোস প্রস্তাব ছিল, চাকমা-হাজংদের নাগরিকত্ব দিলেও জমির অধিকার দেওয়া হবে না। কাজ করা ও থাকার জন্য তাঁদের ইনারলাইন পারমিট ধাঁচের কোনও পারমিট দেওয়া হবে। বৈঠকের পরে চাকমা-হাজংদের নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে মন্ত্রকের তরফে জানিয়েও দেওয়া হয়। রিজিজু কংগ্রেসের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের ২০১৫ সালে দেওয়া নির্দেশ মানতে কেন্দ্র বাধ্য। তদনীন্তন ‘নেফা’য় শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে কংগ্রেসই রাজ্যবাসীর ঘাড়ে বোঝা চাপিয়ে গিয়েছে। তার ফল ভুগতে হচ্ছে এখন।”

চাকমারা থেরবাদি বৌদ্ধ। আগে তিব্বতি ভাষা বলা চাকমারা এখন চট্টগ্রামের ভাষায় কথা বলেন। ইন্দো-তিব্বতীয় জনগোষ্ঠীর হাজংরা অনেক আগে থেকেই অসম, মেঘালয়ে থাকেন। বাংলাদেশেও তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। তাঁরা হিন্দু। ১৯৬৪-১৯৬৯ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম পার্বত্য এলাকা থেকে আসা ২,৭৪৮টি পরিবারের ১৪,৮৮৮ জন চাকমা-হাজং শরণার্থী চাংলাং জেলার বরদুমসা ও পাপুম পারে জেলার কোকিলায় ঘাঁটি গেড়েছিলেন। কিন্তু শেষ সুমারিতে তাদের সংখ্যা ছিল ৬৪ হাজারের বেশি। বর্তমানে তা লাখখানেকের কাছাকাছি। অরুণাচল ছাড়াও ত্রিপুরা, অসম, মিজোরাম, মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশে তারা আশ্রয় নেয়।

Advertisement

আরও পড়ুন

পিয়ংইয়ংকে পাক সাহায্য? তদন্তের দাবি সুষমার

সমালোচনায় ভীত নই, রোহিঙ্গা সংকটে মুখ খুললেন সু চি

পেমা গত কাল রাজনাথ সিংহকে পাঠানো চিঠিতে লেখেন, এত মানুষকে রাজ্যে পাকাপাকি বাসিন্দার মর্য্যাদা দিলে ১৮৭৩ সালের ‘বেঙ্গল ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রেগুলেশন অ্যাক্ট’-এর দুই ও সাত নম্বর ধারা অমান্য করা হবে। যেখানে বলা আছে, অরুণাচলের ভূমিপুত্র উপজাতিদের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে বহিরাগতদের সেখানে জমির অধিকার, সম্পত্তির অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার দেওয়া যাবে না। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বহিরাগতদের অরুণাচলের সীমানায় ঢোকাও মানা।

পেমা উল্লেখ করেন, “দিল্লির বৈঠকেও আমি জানিয়েছিলাম রাজ্যবাসী তাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ, সাংবিধানিক নিয়মভঙ্গ কিছুতেই মেনে নেবে না। চাকমা-হাজংদের নাগরিকত্ব দিলে-তা রাজ্যের জনবিন্যাস, উপজাতি চরিত্রে আঘাত হানতে পারে। রাজ্য সরকারকে যে কোনও মূল্য উপজাতি স্বার্থ রক্ষা করতেই হবে। তাই কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হোক।” ২০০৫ সালে নির্বাচন কমিশন চাকমাদের নাম ভোটার তালিকায় ঢোকায়। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে ভোটার তালিকা থেকে শরণার্থীদের নাম বাদ দেওয়ার আবেদনও রেখেছে।

রিজিজু জানিয়েছেন, কেন্দ্রও অরুণাচলবাসীর উপরে কোনও বোঝা চাপাতে চায় না। অরুণাচলবাসীর বক্তব্য ও রাজ্য সরকারের সমস্যার কথা উল্লেখ করে কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টকে নির্দেশ অদল-বদলের আর্জি জানাবে। চাকমা-হাজংদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিবাদে আজ অরুণাচলপ্রদেশ ছাত্র সংগঠন রাজ্যজুড়ে বন্ধ ডেকেছে।

আপসুর ডাকা বন্ধের জেরে এ দিন রাজ্যের বিভিন্ন অংশে বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনা ঘটে। ইটানগরে বনধ সমর্থকরা একাধিক বাস ও গাড়ি ভাঙে। পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। রাজ্যের সর্বত্র বন্ধ ছিল সর্বাত্মক। আপসু সভাপতি টোবোম দাই বলেন, “রাজ্যের মানুষের মতামতের তোয়াক্কা না করে এ ভাবে শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার অধিকার কারও নেই। ভূমিপুত্রদের স্বার্থ রক্ষায় আমরা যে কোনও লড়াইয়ের জন্য তৈরি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement