সংসদে ঢাক পিটিয়ে বিদেশমন্ত্রী বলেছেন ভুটানের সঙ্গে ভারতের ‘বিশেষ এবং অনন্য’ সম্পর্কের কথা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এত দিনের পরম মিত্র ভুটানও যে সাউথ ব্লকের হাত থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে যাচ্ছে, তা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
গত ৩০ জুন ভারত জানিয়েছিল, ডোকলামে চিনের সড়ক তৈরির বিষয়টি ভুটানই দিল্লিকে জানিয়েছে এবং সেনা পাঠাতে অনুরোধ করেছে। কিন্তু এই বক্তব্য উড়িয়ে দিয়ে দিল্লির চিনা দূতাবাস আজ দাবি করেছে, এ ব্যাপারে ভুটানের কোনও ভূমিকাই নেই। ভারত নিজে থেকেই ওখানে সেনা মোতায়েন করেছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গোপাল ওয়াগলে এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি। শুধু বলেছেন, ‘‘ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’’
কূটনীতিকরা বলছেন, বেজিংয়ের সঙ্গে থিম্পুর ঘনিষ্ঠতা বেশ কিছু দিন ধরেই স্পষ্ট হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সাধের বিবিআইএন মোটর ভেহিক্যাল চুক্তিতে ভুটানই জল ঢেলে দিয়েছে। চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের পাল্টা হিসেবে সার্কভুক্ত বাকি দেশগুলির মধ্যে এই যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়তে উদ্যোগী হয়েছিল মোদী সরকার। কিন্তু বাগড়া দিয়েছে ভুটানের ন্যাশনাল কাউন্সিল। সাউথ ব্লক এর পিছনে বেজিংয়ের হাত দেখছে।
আরও পড়ুন: এফবিআই জালে ওয়ানাক্রাই-হিরো
আগামী বছর ভুটানের ‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি’-র নির্বাচন। তার আগে সে দেশে প্রভাব বাড়াতে সক্রিয় বেজিং। চলতি বছরের গোড়ায় এ ব্যাপারে হাতেনাতে প্রমাণ পেয়েছে সাউথ ব্লক। ভারতের কাছে নির্দিষ্ট খবর আছে ড্রুক ফেংসাম সোগপা (ডিপিটি) যাতে ফের ভোটে জেতে তার জন্য কলকাঠি নাড়ছে বেজিং। ২০০৮ সালে ডিপিটি জিতে আসার পরে প্রধানমন্ত্রী জিগমে থিনলে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির কাজ শুরু করেন। ২০১১-তে ভুটানে বিদেশি রাষ্ট্রদূতের অফিস ছিল ২৫টি। সেটি বেড়ে হয় ৫৩। ভুটানে এখনও চিনা দূতাবাস না থাকলেও তৎকালীন চিনা প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও-এর সঙ্গে তারা তখনই বৈঠক শুরু করে।
চিনা প্রভাব ঠেকাতে ভুটানকে বিপুল অর্থসাহায্য দিয়েছে ভারত। পাশাপাশি, চিন-ভুটান ঘনিষ্ঠতার কী প্রভাব ভারতের নিরাপত্তায় প়ড়বে, তা-ও বোঝানো হয়েছে। কিন্তু তাতে কাজ কতটা হবে, চিন্তায় দিল্লি।