National News

বেজায় ক্ষোভ পাকিস্তানে, করিডরের নাম বদলের প্রস্তাব সরিয়ে দিল চিন

দিন কয়েক আগে নায়িদিল্লিতে নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূত প্রস্তাব দিয়েছিলেন, ভারতের জন্য চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের (সিপিইসি) নাম বদলে দিতেও প্রস্তুত বেজিং। ভারত যাতে সিপিইসি-র অঙ্গ হতে তথা চিনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ (ওবিওআর) উদ্যোগের শরিক হতে রাজি হয়, তার জন্যই এমন প্রস্তাব রেখেছিলেন চিনা দূত লুও ঝাওহুই।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৭ ২১:৪২
Share:

—প্রতীকী ছবি।

দিন কয়েক আগে নায়িদিল্লিতে নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূত প্রস্তাব দিয়েছিলেন, ভারতের জন্য চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের (সিপিইসি) নাম বদলে দিতেও প্রস্তুত বেজিং। ভারত যাতে সিপিইসি-র অঙ্গ হতে তথা চিনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ (ওবিওআর) উদ্যোগের শরিক হতে রাজি হয়, তার জন্যই এমন প্রস্তাব রেখেছিলেন চিনা দূত লুও ঝাওহুই। কিন্তু ভারতে নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূতের এই প্রস্তাব তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে পাকিস্তানে। সিপিইসি-তে ভারতের অন্তর্ভুক্তির কথা কেন বলা হল? প্রশ্ন তুলেছে ইসলামাবাদ। তার পরই নয়াদিল্লির চিনা দূতাবাস নিজেদের ওয়েবসাইট থেকে লুও ঝাওহুই-এর প্রস্তাবের সংশ্লিষ্ট অংশ সরিয়ে দিয়েছে।

Advertisement

ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার-সহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সবক’টি দেশের সঙ্গে সড়ক ও রেলপথে নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তুলতে চাইছে চিন। আফগানিস্তান, ইরান-সহ মধ্য এশিয়ার কয়েকটি দেশকেও এই উদ্যোগের আওতায় আনতে চায় তারা। এই উদ্যোগেরই নাম দেওয়া হয়েছে ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড (ওবিওআর)। ১৪ মে বেজিং-এ শুরু হচ্ছে ওবিওআর শিখর সম্মেলন। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ তাতে অংশ নিচ্ছে। কিন্তু নয়াদিল্লি জানিয়ে দিয়েছে, ওই শিখর সম্মেলনে ভারত কোনও প্রতিনিধি পাঠাবে না। পাক-অধিকৃত কাশ্মীর যে ভারতের অংশ, সে কথা ভারত একাধিক বার জানিয়েছে। কিন্তু চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর ওই অঞ্চলের মধ্যে দিয়েই গিয়েছে। এতে তীব্র আপত্তি রয়েছে নয়াদিল্লির। পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে সিপিইসি-কে নিয়ে যাওয়ার আগে ভারতের সার্বভৌমত্বের কথা ভাবা উচিত ছিল বেজিং-এর। মত নয়াদিল্লির। অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে চিনের অবস্থানও ভারত একেবারেই পছন্দ করছে না। তাই চিনের ওবিওআর উদ্যোগে সামিল হতে নয়াদিল্লি আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ভারতের সেই অনাগ্রহই ভাবিয়ে তুলছে চিনকে।

ওবিওআর শিখর সম্মেলন আসছে। তার আগে ব্যানারে সেজেছে বেজিং-এর রাস্তা। ছবি: এএফপি।

Advertisement

চিনের দাবি, ওবিওআর উদ্যোগের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে যে নিবিড় যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে, তার সুবাদে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক আদানপ্রদান অনেক বাড়বে। কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি যদি সত্যিই করতে হয়, তা হলে ভারতকে এই উদ্যোগে সামিল করা যে অপিরহার্য, তা বেজিং জানে। ভারতকে বাদ দিলে দক্ষিণ এশিয়ার বাজার বলতে আর কতটুকু অবশিষ্ট থাকে, তা চিনের অজানা নয়। সেই কারণেই নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূত গত সপ্তাহখানেক ধরে ভারতকে খুশি করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে ওয়াকিবহাল মহলের মত। সেই চেষ্টার অঙ্গ হিসেবেই গত শুক্রবার দিল্লির ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউশনে ভাষণ দিতে গিয়ে সিপিইসি-র নাম বদলে তাতে ভারতের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব রাখেন চিনা দূত। রবিবার সেই ভাষণ নয়াদিল্লির চিনা দূতাবাসের তরফে প্রকাশও করা হয়।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানে ঢুকে আঘাত হানব: এ বার চরম হুঁশিয়ারি ইরানের

কিন্তু ভারতকে খুশি করতে গিয়ে পাকিস্তানকে চটিয়েছে চিন। অর্থনৈতিক করিডরে ভারতের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব এবং প্রয়োজন হলে করিডরের নাম বদলে দেওয়ার প্রস্তাব পাকিস্তান মোটেই হজম করতে পারছে না। পাক মিডিয়া সূত্রের খবর, নওয়াজ শরিফের সরকার চিনের কাছ থেকে লুও ঝাওহুই-এর এই মন্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে যে করিডর চিন গড়ে তুলেছে, সেই করিডরে ভারতকে সামিল করার প্রস্তাব চিনা কূটনীতিক একতরফা ভাবে কী করে দিলেন, সেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে বলে পাক সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর।

পাকিস্তানের এই প্রতিক্রিয়া দেখে চিন ফের ভারসাম্যের খেলায়। ভারতকে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা থেকে চিন সরে আসার কথা ঘোষণা করেনি। কিন্তু লুও ঝাওহুইয়ের ভাষণের যে প্রতিলিপি নয়াদিল্লির চিনা দূতাবাসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছিল, সেখান থেকে সিপিইসি-র নাম বদলের প্রস্তাব সংক্রান্ত অংশ চুপচাপ সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement