কিবিথু সেক্টরে হস্তান্তরের সময়ে চিনা ও ভারতীয় সেনার প্রতিনিধির সঙ্গে পাঁচ তরুণ। ছবি সেনার সৌজন্যে।
দশ দিনে তিব্বতের ভিতরে তাঁদের পাড়ি দিতে হয়েছে প্রায় হাজার কিলোমিটার রাস্তা! পার হয়েছেন সিয়াং বা ব্রহ্মপুত্রের উৎস ইয়ারলুং সাংপো নদী। চোখের সামনে ছিল সুউচ্চ নামচা বারোয়া ও বৈরিগা পর্বতশৃঙ্গ। অবশ্য সে সব তাঁরা দেখতে পেয়েছেন না গোটা সফর পার করতে হয়েছে মুখ ঢেকে- তা এখনও জানা যায়নি। কিন্তু নাচো-দাপোরিজো-ইটানগরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা জীবনে প্রথম বিদেশযাত্রাটা বড়ই রোমাঞ্চকর হল পাঁচ তরুণের!
শনিবার পিপলস লিবারেশন আর্মির জিম্মায় থাকা অরুণাচলের পাঁচ জন তরুণকে ভারতীয় সেনার হাতে তুলে দিল চিন। আনজাও জেলায়, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে, কিবিথু সেক্টরে চিনা ভূখণ্ডের ভিতরে দামাই এলাকায় এলাকায় চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি ওই পাঁচ তরুণকে ভারতীয় সেনার হাতে তুলে দেয়।
সীমান্তবর্তী কোনও এক এলাকায় যে ভারতীয় তরুণদের হস্তান্তর হবে, তা গত কালই টুইট করে জানিয়েছিলেন স্থানীয় সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী কিরেণ রিজিজু।
যেখানকার প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে অরুণাচলের পাঁচ জনকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল চিনা সেনা সেই নাচো সেক্টরের আশপাশেই তাঁদের ফের ভারতের হাতে তুলে দেওয়া যেত। তা না করে পাঁচ জনকে তিব্বতের মধ্যে দিয়ে প্রায় হাজার কিলোমিটার রাস্তা পার করে নিয়ে যাওয়া হল একেবারে পূর্ব প্রান্তে!
আরও পড়ুন: উদ্ধবের বাড়িতেও হুমকি ফোন পলাশের, অভিযোগ
২ সেপ্টেম্বর অরুণাচলের আপার সুবনসিরি জেলার নাচো সেক্টরে ওই ৫ তরুণ জঙ্গল শিকার করতে ও খাবার সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। তখনই সেরা-৭ এলাকার জঙ্গলে তাঁরা চিনা সেনার মুখোমুখি হন। পাঁচ তরুণকে নিয়ে যায় চিনা সেনা। তাদের দুই সঙ্গী পালিয়ে এসে সেই খবর জানায়।
প্রথমে চিন জানিয়েছিল, কোনও ভারতীয়কে তারা ধরেনি। পরে ৮ সেপ্টেম্বর সেনার হটলাইনে যোগাযোগের পরে পিএলএ মেনে নেয়, ভারতের ওই তরুণরা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পার করে চিনের ভূখণ্ডে চলে আসায় তাদের আটক করা হয়েছে। লাদাখে যখন দুই তরফের সেনা মুখোমুখি যুযধান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে, তখনই অরুণাচলের এই ঘটনায় উত্তেজনার পারদ আরও চড়ে। ভারতের তরফে অবিলম্বে পাঁচজনকে মুক্ত করার দাবি জানানো হয়।
অবশেষে ১০ দিনের মাথায় মুক্তি পেল তারা। কিন্তু তাদের যে এলাকা থেকে ধরা হয়েছিল, আপার সুবনসিরি জেলার সেই নাচো সেক্টর থেকে ভারতের একেবারে পূর্বপ্রান্তে আনজাও জেলার কিবিথুর দূরত্ব অরুণাচলের ভিতর দিয়ে গেলেই ৭০০ কিলোমিটার।
সেনা সূত্রে খবর, চিনের ভিতরে থাকা সড়কপথ দিয়ে ওই পাঁচ জনকে নিয়ে পিএলএ এই কয়েক দিনের মধ্যে প্রায় হাজার কিলোমিটার সফর করেছে! যেতে হয়েছে নামচা বারোয়া ও বৈরিগা পর্বত ঘেঁষে, মেডগ, নিনচি প্রদেশ হয়ে ইয়ারলুং সাংপো, সাং কু নদী পার করে।
কেন এই দীর্ঘ সফর, কী রয়েছে চিন অধিকৃত তিব্বতের ওপারে- মুক্তি পাওয়া পাঁচ তরুণের কাছ থেকে তা যতটা সম্ভব জানার চেষ্টা করবে সেনাবাহিনী। ওপারের সড়ক ও পরিকাঠামোর বিষয়ে খানিকটা হলেও তথ্য মিলবে আশা করা হচ্ছে।
চিনা সেনার হাত থেকে মুক্তি পেলেও এখনই বাড়ি ফিরতে পারছে না ওই পাঁচ জন। সেনা সূত্রে জানানো হয়, কোভিড সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের ১৪ দিন কোয়রান্টিনে রাখা হবে। তার পরেই তারা পরিবারে কাছে ফিরতে পারবে।
সেনা মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল হর্ষবর্ধন পান্ডের মতে, বিষয়টিকে ‘অপহরণ’ বলে ব্যাখ্যা করা ঠিক হবে না। ওই এলাকার স্থানীয় যুবকরা খাবার, ওষধি গাছ সংগ্রহ করতে দিনের পর দিন জঙ্গলে কাটায়। কখনও-সখনও ভুল করে তারা চিনের দিকে চলে যায়। তখন এমন ঘটনা ঘটে। তিনি জানান. চলতি বছর এই নিয়ে তৃতীয়বার এমন ঘটনা ঘটল।
মার্চে একই জেলার আসাপিলা সেক্টর থেকে ২১ বছরের এক যুবককে ধরে নিয়ে গিয়েছিল পিএলএ। ১৯ দিন পরে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিম সিয়াং জেলাতেও এমন ঘটনা ঘটেছিল।