সোমবার চা-চক্রের পর বুধবারের মধ্যাহ্নভোজ। তাতেও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের বিবাদ মিটল না। প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’-এ নেতৃত্ব দেওয়া প্রবীণতম বিচারপতি জাস্তি চেলমেশ্বর এই বৈঠকে গরহাজির রইলেন। সমাধানসূত্র খুঁজতে আগামিকাল ফের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র চার ‘বিদ্রোহী’ বিচারপতির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলে সূত্রের খবর।
প্রধান বিচারপতি অবশ্য তাঁর অবস্থান নরম করছেন। বিচারক ব্রিজগোপাল লোয়ার মৃত্যু নিয়ে তদন্তের দাবি নিয়ে মামলাটি থেকে বিচারপতি অরুণ মিশ্র নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছেন। রাজনৈতিক ভাবে স্পর্শকাতর এই মামলা তাঁর বেঞ্চে পাঠানো নিয়েই শুক্রবার আপত্তি তোলেন ক্ষুব্ধ চার বিচারপতি। বিচারপতি চেলমেশ্বরের নেতৃত্বে তাঁরা সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন, প্রবীণ বিচারপতিদের এড়িয়ে প্রধান বিচারপতি বাছাই করা কয়েকটি বেঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ মামলা পাঠাচ্ছেন।
এর পরেও অবশ্য প্রধান বিচারপতি আধার, ৩৭৭ ধারার মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলার জন্য তৈরি পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে ওই চার প্রবীণ বিচারপতির কাউকেই রাখেননি। কিন্তু গত কাল বিচারক লোয়া-র মামলার শুনানির রায়ে বিচারপতি অরুণ মিশ্র বলেন, ভবিষ্যতে যেন এই মামলাটি উপযুক্ত বেঞ্চে শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত হয়।
সুপ্রিম কোর্ট সূত্রের খবর, নিজেকে এই মামলা থেকে সরিয়ে নিতে চান বিচারপতি অরুণ মিশ্র। তিনি মনে করছেন, গোটা বিতর্কে তাঁর নাম জড়িয়ে যাওয়ায় তাঁর মর্যাদাহানি হচ্ছে। সোমবারের চা-চক্রে তিনি প্রবীণ বিচারপতিদের দিকে কার্যত অভিযোগের আঙুল তুলে বলেন, ওঁরা তাঁর সারা জীবনের অর্জিত সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছেন।
এতেও অবশ্য সুর নরম করছেন না ‘বিদ্রোহী’-রা। সূত্রের খবর, ক্ষুব্ধ বিচারপতিরা প্রধান বিচারপতিকে স্পষ্ট জানিয়েছেন, তাঁদের তোলা অভিযোগের মীমাংসা করতে প্রধান বিচারপতিকে নির্দিষ্ট প্রস্তাব পেশ করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা আজ প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে প্রস্তাব দিয়েছেন, কোন বেঞ্চে কোন মামলা পাঠানো হচ্ছে, সেই রুটিন জনসমক্ষে প্রকাশ করে দেওয়া হোক। যেমনটা দিল্লি হাইকোর্টে হয়।
বিচারপতিদের মধ্যাহ্নভোজেও আজ এ নিয়ে আলোচনা হয় বলে সূত্রের খবর। সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতিরা প্রতি বুধবার একসঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ সারেন। পালা করে এক-এক জন বাড়ি থেকে নিজ রাজ্যের বিশেষ খাবার নিয়ে আসেন। এই বুধবার যেমন ছিল বিচারপতি এন ভি রামান্নার পালা। কিন্তু এ দিন বিচারপতি চেলমেশ্বর না থাকায় মধ্যাহ্নভোজে আলোচনা বেশি দূর এগোয়নি। বিচারপতি চেলমেশ্বরের বেঞ্চে এ দিন কোনও শুনানিও হয়নি।
আইনজীবী মহলের ব্যাখ্যা, মেডিক্যাল কলেজ ঘুষ মামলায় সরাসরি প্রধান বিচারপতির দিকে আঙুল ওঠায় গোটা ঘটনা নতুন মোড় নিয়েছে। সিবিআইয়ের তদন্তে আড়ি পাতার টেপকে হাতিয়ার করে প্রশান্ত ভূষণ প্রশ্ন তুলেছেন, ওডিশা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি আই এম কুদ্দুসির মতো প্রধান বিচারপতিও ওই ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন কি না! প্রধান বিচারপতির পরবর্তী প্রবীণতম পাঁচ বিচারপতির কাছে প্রশান্ত ভূষণ কাল ওই প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেই পাঁচ জনকেই আজ চিঠি দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিকাশ সিংহ জানিয়েছেন, ওই মামলায় প্রধান বিচারপতি অনিয়ম করেননি।
এ দিনই প্রাক্তন বিচারপতি কুদ্দুসি দিল্লি হাইকোর্টে এসে আর্জি জানিয়েছেন, কী ভাবে এই টেপ ফাঁস হল, তার তদন্ত হোক। সিবিআই নিজেই এই টেপ ফাঁস করেছে, নাকি সে’টি চুরি গিয়েছে, তা দেখা দরকার। সিবিআইয়ের হাতে থাকা তথ্য এ ভাবে প্রকাশ্যে এলে সংবাদমাধ্যমই তার বিচার চালাতে পারে— এমন আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন প্রাক্তন বিচারপতি কুদ্দুসি। আদালত সোমবারের মধ্যে সিবিআই-কে তার বক্তব্য জানাতে বলেছে।