অন্ধ্রে টালমাটাল এনডিএ। মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু অত্যন্ত অসন্তুষ্ট জেটলির বাজেটে। বলছেন তেলুগু দেশম নেতারা। —ফাইল চিত্র।
সঙ্কট আরও বাড়ল এনডিএ-তে। দক্ষিণ ভারতে বিজেপি-র বৃহত্তম সঙ্গী তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) জোট ভাঙার ইঙ্গিত দিতে শুরু করল। প্রয়োজন পড়লে বিজেপি-র হাত ছাড়তে দ্বিধা করবেন না বলে দলের প্রধান তথা অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু গত সপ্তাহেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। এ বার জোট নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার জন্য তিনি দলের জরুরি বৈঠক ডাকলেন।
টিডিপি সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় বাজেট নিয়ে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট চন্দ্রবাবু। নিজের রাজ্যের জন্য তাঁর যা দাবিদাওয়া ছিল, বাজেটে সে সবের কোনও সংস্থান নেই বলে টিডিপি-র দাবি। এর পরেও বিজেপি-র সঙ্গে জোট বহাল রাখা হবে কি না, সে বিষয়ে চন্দ্রবাবু এ বার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চান বলে জানা যাচ্ছে। সেই কারণেই রবিবার তিনি দলের জরুরি বৈঠক ডেকেছেন।
‘‘আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করতে চলেছি। আমাদের সামনে তিনটি রাস্তা রয়েছে। প্রথম রাস্তা হল, জোট বহাল রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। দ্বিতীয় রাস্তা হল, আমাদের সব সাংসদের পদত্যাগ। আর তৃতীয় রাস্তা হল, জোট ভেঙে দেওয়া। রবিবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’’ দিল্লিতে শুক্রবার সংবাদমাধ্যমকে এমনই বলেছেন টিডিপি সাংসদ টি জি বেঙ্কটেশ।
আরও পড়ুন: বিরোধীদের এক হতে ডাক সনিয়ার
টিডিপি সংসদীয় দলের চেয়ারম্যান তথা মোদী মন্ত্রিসভার সদস্য ওয়াই এস চৌধুরিও মুখ খুলেছেন। অন্ধ্রের শাসক দল কেন বিজেপি-র হাত ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবতে শুরু করেছে, সে কথা খোলখুলিই জানিয়েছেন চৌধুরি। তিনি বলেছেন, ‘‘জনগণ এবং দল কেন্দ্রীয় বাজেটে অত্যন্ত হতাশ।’’ পোলাভরম প্রকল্পের জন্য তহবিল চেয়েছিলেন অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু। তহবিল চেয়েছিলেন অন্ধ্রের নতুন রাজধানী অমরাবতীর জন্যও। কোনও দাবিই পূরণ করেননি জেটলি। অভিযোগ ওয়াই এস চৌধুরির। রাজ্যের দাবিদাওয়াকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অবজ্ঞা করেছেন বলে টিডিপি-র অভিযোগ। তাতে মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু ‘অত্যন্ত হতাশ’ বলেও টিডিপি-র তরফে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: তিনটি আসনেই বিজেপিকে হারাল কংগ্রেস
২০১৪ সালে চন্দ্রবাবু নায়ডু তৃতীয় বারের জন্য অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হন। সরকার গঠনের পর থেকেই বিজেপি এবং টিডিপি-র মধ্যে তিক্ততা বাড়তে শুরু করে অন্ধ্রে। গত চার বছরে মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবুর নানা পদক্ষেপের সমালোচনায় বার বার সরব হয়েছে রাজ্য বিজেপি।
গত সপ্তাহে চন্দ্রবাবু নায়ডু বিজেপি-র বিরুদ্ধে মুখ খোলেন। শনিবার তিনি বলেন, ‘‘জোটধর্মের কারণে আমরা চুপচাপ থাকছি। কিন্তু বিজেপি যদি আমাদের না চায়, তা হলে আমরা তাদের নমস্কার জানিয়ে নিজেদের পথ দেখে নেব।’’ হুঁশিয়ারিতেই যে থেমে থাকছেন না চন্দ্রবাবু, বাজেটকে কেন্দ্র করে তিক্ততা যে আরও বাড়ছে দুই শরিকের মধ্যে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। রবিবারের জরুরি বৈঠকে চন্দ্রবাবু কোনও বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে রাজনৈতিক শিবির মনে করছে।
অন্ধ্রের আগে মহারাষ্ট্রেও ধাক্কা খেয়েছে বিজেপির জোট। সবচেয়ে পুরনো শরিক শিবসেনা বিজেপি-র হাত ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছে সেখানে। মহারাষ্ট্র সরকার থেকে এখনই সমর্থন প্রত্যাহার না করলেও পরবর্তী লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন শিবসেনা একাই লড়বে বলে দলের প্রধান উদ্ধব ঠাকরে জানিয়ে দিয়েছেন। তার পরে দু’সপ্তাহও কাটল না। আরও এক রাজ্যে জোটসঙ্গীর সঙ্গে বিজেপি-র বিচ্ছেদের সম্ভাবনা তৈরি হয়ে গেল।