কেন্দ্রীয় সরকার অন্ধ্রের মানুষের ভাবাবেগকে অসম্মান করছে, অভিযোগ টিডিপি সুপ্রিমো তথা অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডুর। —ফাইল চিত্র।
উত্তর-পূর্বে বিজেপি ঝড়েই মাঝেই দক্ষিণে ফিকে গেরুয়া রং। এনডিএ-র হাতছাড়া হওয়ার মুখে অন্ধ্রপ্রদেশ। বিজেপির জোটসঙ্গী তথা অন্ধ্রপ্রদেশের মূল শাসক দল তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) বেরিয়ে আসছে এনডিএ থেকে। বৃহস্পতিবারই মোদী মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন টিডিপির দুই মন্ত্রী। বুধবার সন্ধ্যায় দলীয় বৈঠকের পর জানিয়ে দিলেন টিডিপি সভাপতি তথা অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু।
অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য ‘স্পেশাল স্টেটাস’ বা ‘বিশেষ মর্যাদা’ দাবি করছেন চন্দ্রবাবু। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার বার বারই জানাচ্ছে, বিশেষ মর্যাদা দেওয়া সম্ভব নয়। এই নিয়েই টানাপড়েন বাড়ছিল দুই শরিকের মধ্যে। অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে তেলঙ্গনা রাজ্য গঠনের জেরে অন্ধ্রের যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি, অন্ধ্রের উন্নয়নে বিশেষ মর্যাদার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, দাবি চন্দ্রবাবুর। সেই প্রতিশ্রুতি এখন কেন্দ্রীয় সরকার পূরণ করতে চাইছে না বলে তাঁর অভিযোগ। তাঁর রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা যদি না দেয় কেন্দ্র, তা হলে বিজেপির সঙ্গে জোট ভেঙে দেবে টিডিপি, বেরিয়ে আসবে কেন্দ্রীয় সরকার ছেড়ে, বেশ কিছু দিন ধরেই চন্দ্রবাবু এই হুমকি দিচ্ছিলেন। বুধবার সন্ধ্যায় অরুণ জেটলি জানান, বিশেষ মর্যাদা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। তার পরেই চন্দ্রবাবু ঘোষণা করেন, বিজেপির সঙ্গে তথা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছে তেলুগু দেশম।
অন্ধ্রপ্রদেশকে কোনও আর্থিক সুবিধা দেওয়া হবে না, এমন কথা অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকার বলেনি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বরং বেশ কিছু দিন ধরেই অন্ধ্রের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের কথা বলছেন। চন্দ্রবাবুর উষ্মার আঁচ পেয়ে বুধবারও জেটলি এ বিষয়ে কেন্দ্রের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘বিশেষ মর্যাদায় যে রকম আর্থিক সুযোগ-সুবিধা মেলে, অন্ধ্রপ্রদেশকে আমরা সেই রকম আর্থিক প্যাকেজই দিতে চলেছি।’’ কিন্তু অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য ‘স্পেশাল স্টেটাস’-এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা সম্ভব নয় বলে তিনি এ দিন জানান। জেটলি বলেন, ‘‘চতুর্দশ অর্থ কমিশনের পর থেকে বিশেষ মর্যাদার আর কোনও সংস্থান নেই।’’ কিন্তু বিভাজনের জেরে অন্ধ্রের যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে দিতে বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন রাজ্যের সমতুল আর্থিক সুযোগ-সুবিধা অন্ধ্রকে দিতে কেন্দ্র প্রস্তুত— জানান জেটলি।
আরও পড়ুন: কর্নাটকে আক্রান্ত লোকায়ুক্ত, পর পর পাঁচ বার ছুরিকাঘাত
আরও পড়ুন: আচ্ছে দিন! দেশে ১৮ জন বিলিয়নেয়ার বাড়ল এক বছরে
জেটলির এই ঘোষণায় চিঁড়ে ভেজেনি। অর্থমন্ত্রীর অবস্থান জেনে নেওয়ার পরে বুধবার চন্দ্রবাবু নায়ডু দলীয় জনপ্রতিনিদিদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেন, তাঁর দল কেন্দ্রীয় সরকার ছেড়ে বেরিয়ে আসবে। মোদী ক্যাবিনেটে টিডিপির যে দুই প্রতিনিধি রয়েছেন, সেই অশোক গজপতি রাজু এবং ওয়াই এস চৌধরি বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজেদের পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেবেন বলে চন্দ্রবাবু জানিয়েছেন।
অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী বুধবার বলেছেন, ‘‘রাজ্যের স্বার্থ রক্ষা করার প্রশ্নে কোনও আপস করতে পারব না। যত কাঠিন্যের সম্মুখীনই হতে হোক, আমরা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তই নেব।’’