রাজ্যের মদতে গরু পাচার, বলছে কেন্দ্র

গো-রক্ষা বির্তকে এ বার মমতার রাজ্যে নজর নরেন্দ্র মোদীর। কেন্দ্রের অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদতেই পশ্চিমবঙ্গের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে দেদার পাচার হয়ে যাচ্ছে গরু। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলছে, প্রায় ১৪ বছর আগে রাজ্য সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সীমান্তের ৮ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা ১৫টি পশু হাট বন্ধ করে দেওয়া হবে।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:২৯
Share:

গো-রক্ষা বির্তকে এ বার মমতার রাজ্যে নজর নরেন্দ্র মোদীর।

Advertisement

কেন্দ্রের অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদতেই পশ্চিমবঙ্গের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে দেদার পাচার হয়ে যাচ্ছে গরু। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলছে, প্রায় ১৪ বছর আগে রাজ্য সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সীমান্তের ৮ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা ১৫টি পশু হাট বন্ধ করে দেওয়া হবে। কিন্তু দুর্নীতি চক্র ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে আজও তা করে উঠতে পারেনি তারা।

উত্তরপ্রদেশে ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই গরু বিতর্কে উত্তাল গোটা দেশ। গো-রক্ষার নামে বিভিন্ন রাজ্যে আইন হাতে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠছে গেরুয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে। এ বার গো-বিতর্কে নাম জড়াল পশ্চিমবঙ্গেরও। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্তের ১৫০-২০০ গজের মধ্যে প্রায় ৩০০টি গ্রাম রয়েছে। যেখানকার গ্রামবাসীদের অধিকাংশের মূল পেশা গরু পাচার ও চোরাচালান। রিপোর্ট বলছে, এদের পিছনে রাজনৈতিক মদত থাকায় এই পাচারকারীরা আইনকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রমরমিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

Advertisement

কেন্দ্রের মতে, গরু পাচার রোখার পথে সবচেয়ে বড় বাধা সীমান্ত সংলগ্ন হাটগুলি। পশ্চিমবঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্তের ৮ কিলোমিটারের মধ্যে ১৫টি পশু হাট রয়েছে। ২০০৩-এ রাজ্য জানিয়েছিল, তারা ওই হাটগুলির লাইসেন্স বাতিল করবে। কিন্তু সেই সব হাট এখনও রমরমিয়ে চালু আছে। অবিলম্বে হাটগুলি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। সীমান্তের ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে ওই ধাঁচের কোনও হাট যাতে না বসে, সে দিকেও দৃষ্টি রাখতে বলেছে কেন্দ্র।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সবচেয়ে অবাক পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ভূমিকায়। তাদের পর্যবেক্ষণ, হরিয়ানা, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, বিহার থেকে গরু এসে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে পৌঁছচ্ছে। সেখান থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত— এই বিস্তীর্ণ পথ পুলিশের প্রত্যক্ষ মদতেই গরুর পাল নিয়ে যাচ্ছে পাচারকারীরা। নির্দিষ্ট একটি রুটও বানিয়ে ফেলেছে তারা। কেন্দ্রের যুক্তি, পুলিশের যোগসাজশ না থাকলে এ ভাবে গরু নিয়ে যাওয়া কোনও ভাবেই সম্ভব নয়।

রাজ্যে ধরা পড়া গরুর সংখ্যা

• ২০১২- ১,২০,৭২৪

• ২০১৩- ১,২২,০০০

• ২০১৪- ১,০৯,৯৯৯

• ২০১৫- ১,৫৩,৬০২

• ২০১৬- ১,৪৬,৯৬৭ (অক্টোবর পর্যন্ত)

গরু আসে - হরিয়ানা, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড

পাচারে শীর্ষে - নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, দক্ষিণ ও উত্তর দিনাজপুর

সমস্যা রয়েছে পাচারের আগে আটক করা গরুর নিলামের ক্ষেত্রেও। সাধারণত, ধরা পড়া গরু নিলাম করে শুল্ক দফতর। এক স্বরাষ্ট্রকর্তা বলেন, ‘‘সেই গরু কিনে নেয় পাচারকারীরাই। তার পর ফের সেগুলিকে পাচার করে ওরা!’’ এই সমস্যা মেটাতে পশ্চিমবঙ্গে ধরা পড়া গরু অন্য রাজ্যে নিলামে ওঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। একই সঙ্গে নিলামে ওঠা গরুর দাম উঁচুতে বাঁধা ও ক্রেতাদের প্যান ও আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করারও সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্তের কাছাকাছি দলে দলে গরু দেখলেই বাজেয়াপ্ত করার কথাও বলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে ভাবে পুলিশ-প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলেছে, তাতে ক্ষুব্ধ রাজ্য সরকার। তাদের বক্তব্য, কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিএসএফের একাংশ অত্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত। তাদের নাকের ডগা দিয়ে পাচার হয়। বিএসএফের প্রত্যক্ষ মদত ছাড়া এ ভাবে পাচার সম্ভব নয়। তা ছাড়া, কেন্দ্রের অধীনস্থ শুল্ক দফতরই নিলামের নামে পাচারকারীদের হাতে ধরা পড়া গরুগুলি তুলে দেয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement