বর্ষশেষের রাতে এমন দৃশ্যই দেখা গেল বেঙ্গালুরুর রাস্তায়। ছবি: সংগৃহীত।
বর্ষশেষের রাতে বেঙ্গালুরুতে যথেচ্ছ যৌন হেনস্থার ঘটনায় কর্নাটকের কংগ্রেস সরকারের ভূমিকার তীব্র নিন্দা করল কেন্দ্র। যদিও মহিলাদের যৌন হেনস্থার ঘটনা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে রাজ্য সরকার। শুধু তা-ই নয়, পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ-প্রশাসনের চূড়ান্ত ব্যর্থতা সত্ত্বেও রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বর একের পর এক দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেন। মঙ্গলবার তার নিন্দায় সরব হন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু। এ দিন টুইট করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে একহাত নিয়েছেন কিরেণ।
বর্ষশেষের রাতে উৎসবের আনন্দ ম্লান হয়ে যায় একাধিক মহিলার যথেচ্ছ যৌন হেনস্থার অভিযোগে। মহিলাদের জন্য তুলনামূলক ভাবে দেশের অন্যান্য শহরের থেকে সুরক্ষিত বলে সুনাম রয়েছে বেঙ্গালুরুর। কিন্তু, বর্ষশেষের রাতে পুরোপুরি পাল্টে গেল সে ছবিটা। এম জি রোড ও ব্রিগেড রোডের মতো শহরের অভিজাত এলাকায় বর্ষবরণের জন্য জমায়েতে একাধিক তরুণী ও মহিলা যৌন হেনস্থার শিকার হন। শহর জুড়ে দেড় হাজারেরও বেশি পুলিশকর্মীর টহলদারি বা সিসিটিভি ক্যামেরার নজরদারির সত্ত্বেও বেলাগাম মত্ত জনতার হাতে হেনস্থা হতে হয় একাধিক মহিলাকে। ভিড়ের সুযোগে শহরের রাস্তায় একাধিক মহিলাকে কটূক্তি-শ্লীলতাহানির শিকার হন। প্রাধমিক ভাবে ঘটনার কথা অস্বীকার করলেও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একের পর এক ছবিতে দেখা যায়, একাধিক মহিলা আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করেছেন, পুলিশের সাহায্য চাইছেন।
আরও পড়ুন
বর্ষশেষের রাতে বেঙ্গালুরুতে বহু মহিলার শ্লীলতাহানি!
ঘটনার দু’দিন পরে এখনও আতঙ্কের রেশ কাটেনি অনেকের। সে দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক মহিলা বলেন, “এক সময় তো মনে হচ্ছিল, পদপিষ্ট হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে যাবে।” ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে বেশ কয়েক মহিলা বেহুঁশ হয়ে পড়েন। শ্লীলতাহানির শিকার এক মহিলা বলেন, “যখনই কোনও মেয়ে ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল ভিড়ের সুযোগে কয়েক জন তাঁদের জাপ্টে ধরছিল, উত্যক্ত করছিল।” তিনি বলেন, “এক-দু’জনের সঙ্গে লড়াই করা যায়। কিন্তু, একটা উন্মত্ত দলের বিরুদ্ধে কী ভাবে লড়বেন আপনি?” তিনি বলেন, “এটা তো গণ-শ্লীলতাহানি!”
কিন্ত, কর্নাটক সরকার সে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পরমেশ্বর একের পর এক দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যের জেরে পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যায়। ওই বিষয়ে পুলিশি ব্যর্থতার প্রসঙ্গ এড়িয়ে তিনি বলেন, “এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকে।” শুধু তা-ই নয়, গোটা ঘটনায় ‘পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ’ বলেও দায় এড়িয়েছেন তিনি। এর পরেই যেন আগুনে ঘি পড়ে। সমালোচনার মুখে পড়ে রাজ্য সরকার। কর্নাটকের সিদ্দারামাইয়া সরকারকে একহাত নিতে ছাড়েনি কেন্দ্র। মঙ্গলবার টুইট করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু বলেন, “কর্নাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করছি।”
সমালোচনার মুখে পড়ে শেষমেশ নড়েচড়ে বসে পুলিশ-প্রশাসন। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পরমেশ্বর। এ দিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু আরও বলেন, “গণ-শ্লীলতাহানির মতো এ ধরনের লজ্জাজনক ঘটনার আমরা ঘটতে দিতে পারি না। এটা সামান্য কোনও ঘটনা বা আইনশৃঙ্খলার বিষয় নয়।”