কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বিক্ষোভ ক্রমশই মোদী সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। রাহুল ভট্টের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আজও পথে নামার পরিকল্পনা করেন কাশ্মীরি পণ্ডিতেরা।
ফাইল চিত্র।
কাশ্মীরে একের পর এক অ-মুসলিমদের হত্যা কী ভাবে রোখা সম্ভব— তার দিশা দেখতে পারছেন না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা। তাঁরা মনে করছেন, উপত্যকায় নয়ের দশকের মতো আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করতে বেছে বেছে হিন্দু ও শিখদের হত্যা করার কৌশল নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি আটকাতে তাঁরা যে কার্যত অসহায়, ঘরোয়া ভাবে তা স্বীকার করে নিচ্ছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও আধাসামরিক বাহিনীর কর্তারা। তবে রাহুল ভট্টের হত্যার পরে যে ভাবে কাশ্মীরি পণ্ডিতেরা পথে নেমেছেন, তাতে বেকায়দায় নরেন্দ্র মোদী সরকার। পণ্ডিতদের বিক্ষোভ কোন পথে থামবে— তার উপায় খুঁজে পাচ্ছে না শাসক শিবির।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের সময় থেকেই উপত্যকাকে নিরাপত্তাবাহিনী দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে। সেই নিরাপত্তার চাদর এখনও রয়েছে। যার ফলে বড় কোনও নিশানায় আঘাত হানার সুযোগ পাচ্ছে না জঙ্গিরা। পরিবর্তে আমজনতার মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করার পথ বেছে নিয়েছে তারা। নিশানা হিসাবে বেছে নেওয়া হচ্ছে শুধুমাত্র অ-মুসলিমদের। অভিযোগ, এই ধরনের হত্যাকাণ্ড চালিয়ে সমাজে বিভাজন ঘটাতে সক্রিয় পাকিস্তান। স্বরাষ্ট্রকর্তারা মেনে নিচ্ছেন, ব্যক্তিকেন্দ্রিক হত্যাকাণ্ড রোখা বেশ কঠিন। কোনও বাহিনীর পক্ষেই এমন আক্রমণ
ঠেকানো মুশকিল।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের মতে, কাশ্মীরের যুবকদের জঙ্গি দলে নাম লেখানো বন্ধ না হওয়াও কেন্দ্রের সব চেয়ে বড় ব্যর্থতা। কোনও ভাবেই স্থানীয় যুবকদের জঙ্গি দলে নাম লেখানো আটকানো যাচ্ছে না। এরা স্থানীয় পর্যায়ে ওই হত্যাকাণ্ডের ইনফর্মার হিসাবে কাজ করছে। রাহুল ভট্ট হত্যাকাণ্ডেও স্থানীয় জঙ্গিদের ভূমিকা ছিল বলে তদন্তে জানতে পেরেছে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। দিন দশেক আগে সেনার এক আধিকারিক দাবি করেছিলেন, কাশ্মীরে এখন শ’দেড়েক জঙ্গি সক্রিয়। সীমান্ত পারে বিভিন্ন লঞ্চপ্যাডে অন্তত দু’শো জঙ্গি এ দেশে প্রবেশের জন্য অপেক্ষায়। ফলে সামগ্রিক ভাবে পরিস্থিতি
জটিল হয়েছে।
অন্য দিকে, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বিক্ষোভ ক্রমশই মোদী সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। রাহুল ভট্টের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আজও পথে নামার পরিকল্পনা করেন কাশ্মীরি পণ্ডিতেরা। সেই চেষ্টা আটকাতে সকাল থেকে পণ্ডিতদের অস্থায়ী শিবিরগুলিতে তালা আটকে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত শিবিরগুলিতে পণ্ডিতদের বিক্ষোভ চলতে থাকে। গোটা ঘটনায় রীতিমতো অস্বস্তিতে জম্মু-কাশ্মীর বিজেপি। কেন উপত্যকার সংখ্যালঘু সমাজকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে কেন্দ্র, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে দলের মধ্যে। বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছে, যে ভাবে পণ্ডিত সমাজ পথে নেমেছে, তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে জম্মুর পণ্ডিত অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে। সার্বিক ভাবে হিন্দু ভোট হারাবে দল।