প্রতীকী ছবি।
সংক্রমণের হিসাবে ওমিক্রন প্রবল শক্তিশালী হলেও মৃত্যুর প্রশ্নে ডেল্টা প্রজাতি অনেক বেশি ঘাতক ছিল বলে আজ পরিসংখ্যান তুলে দাবি করল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। তবে তাদের যুক্তি, তৃতীয় ঢেউয়ের সময়ে দেশের বৃহত্তর জনসংখ্যা প্রতিষেধকের দুই ডোজ় নিয়ে ফেলায় মৃত্যু এ দফায় কম হচ্ছে।
গত মার্চ-এপ্রিলে দেশে দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ তুঙ্গে উঠেছিল। আজ গত বছরের ১ এপ্রিল-৩০ এপ্রিলের সময়কার পরিসংখ্যান তুলে ধরে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণের, গত ৩০ এপ্রিল দেশে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩,৮৬,৪৫২ জন। সব মিলিয়ে ওই সময়ে দেশে সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩১,৭০,২২৮। আর ওই মাসে দেশে করোনা সংক্রমণে মারা যান ৩০৫৯ জন। তুলনায় এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ জানুয়ারির পরিসংখ্যানকে তুলে ধরে রাজেশ ভূষণ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩,১৭,৫৩২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে দেশে সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৯,২৪,০৫১। কিন্তু সেখানে গত কুড়ি দিনে মারা গিয়েছেন ৩৮০ জন। তাঁর দাবি, দৈনিক আক্রান্ত বা মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তুল্যমূল্য হলেও তৃতীয় ঢেউয়ে মৃতের সংখ্যায় একটি বিশাল পার্থক্য দেখা যাচ্ছে।
প্রাপ্তবয়স্কদের দুই ডোজ় টিকাকরণই ওই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে বলে দাবি করেন ভূষণ। তিনি জানান, এপ্রিলে মাত্র দুই শতাংশ দেশবাসী টিকার দুই ডোজ় নিয়েছিলেন। সেখানে জানুয়ারিতে টিকার দুই ডোজ় নিয়েছেন প্রায় ৭২ শতাংশ। ফলে বলা যায়, আক্রান্তদের হাসপাতালে যাওয়া বা মৃত্যু রুখতে অনেকাংশে সফল হয়েছে টিকাকরণ। দিল্লি, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে তৃতীয় ঢেউ দৈনিক সংক্রমণের পরিধিকে বাড়িয়ে চললেও খুব অল্প সংখ্যক আক্রান্তকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে। ভূষণের দাবি, প্রতিষেধক নেওয়ার ফলে এ যাত্রায় অধিকাংশ আক্রান্তের মৃদু বা মাঝারি উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। যাঁদের বড় অংশই বাড়িতে বিচ্ছিন্নবাসে থেকে সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। দেশের অন্তত ৬.৫ কোটি মানুষ সময় পেরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও টিকার দ্বিতীয় ডোজ় নেননি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
দ্বিতীয় টিকা নেওয়ার পরে যাঁদের নয় মাস কেটে গিয়েছে, এমন স্বাস্থ্যকর্মী, ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার ও ষাট বছরের ঊর্ধ্বে থাকা প্রবীণদের গত ১০ জানুয়ারি থেকে বুস্টার ডোজ় দেওয়া চালু করেছে কেন্দ্র। কেন্দ্রের হিসাব মতো, ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩৫ লক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর বুস্টার ডোজ় নেওয়ার কথা। যার মধ্যে গত দশ দিনে ৬১ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী অর্থাৎ ২২.৬৬ লক্ষ জন বুস্টার ডোজ় নিয়েছেন। একই ভাবে ২০ জানুয়ারির মধ্যে প্রায় ৩৩ লক্ষ ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারের মধ্যে এখন পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ১৯.১৪ লক্ষ জন। প্রবীণ ও যাঁরা ক্রনিক রোগে ভুগছেন, এমন প্রায় ৪৮ লক্ষ ব্যক্তির ২০ জানুয়ারির মধ্যে বুস্টার ডোজ় নেওয়ার কথা থাকলেও তাঁদের মধ্যে ১৮.৬৬ লক্ষ জন বুস্টার ডোজ় নিয়েছেন। প্রবীণদের ক্ষেত্রে এখনও ৬১ শতাংশ ব্যক্তির টিকা নেওয়া বাকি রয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। ইতিমধ্যেই ৫২ শতাংশ কিশোর-কিশোরী টিকা নিয়ে ফেলেছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। ১৫ বছরের কম বয়সিদের কবে থেকে টিকাকরণ শুরু হবে তা স্পষ্ট করেননি স্বাস্থ্যসচিব।