Coronavirus in India

অনুমতি পেলে ৩ দিনে ছাড়পত্র বিদেশি টিকাকে

বিদেশি সংস্থাগুলি ভারতে তাদের প্রতিষেধকের ছাড়পত্রের জন্য সরাসরি সিডিএসসিও-র কাছে আবেদন জানাতে পারবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৫০
Share:

—প্রতীকী ছবি।

জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমতি পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে বিদেশি প্রতিষেধক দেশে প্রয়োগে ছাড়পত্র দেওয়া হবে বলে জানাল নরেন্দ্র মোদী সরকার। আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, কোনও বিদেশি প্রতিষেধক সংস্থা আবেদন জানালে সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (সিডিএসসিও) সেই আবেদন খতিয়ে দেখে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের প্রশ্নে সবুজ সঙ্কেত দিলে ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই) তিন দিনের মধ্যে ওই সংস্থাকে নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের অনুমতি দেবে ভারতে। তবে সরকার জরুরি ভিত্তিতে ছাড়পত্রের অনুমতি দিলেও এখনও ভারতে প্রতিষেধক বিক্রির প্রশ্নে আগ্রহ দেখায়নি কোনও বিদেশি প্রতিষেধক সংস্থাই।

Advertisement

দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ লাগামছাড়া হওয়ায় মৃত্যুহার কমাতে দেশের বড় সংখ্যক মানুষকে প্রতিষেধকের আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। বর্তমানে কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিনের মাধ্যমে টিকাকরণ চলছে। ওই দু’টি প্রতিষেধকের উৎপাদন ক্ষমতা সীমিত। যার একটি বড় কারণ হল বিশ্ব জুড়ে প্রতিষেধকের কাঁচামালের অপ্রতুলতা। সব মিলিয়ে রাতারাতি নীতি পরিবর্তন করে এ দেশে মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপকে উপেক্ষা করেই দেশবাসীর কাছে সরাসরি প্রতিষেধক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে প্রতিষেধকগুলিকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে তথা আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানের মতো দেশগুলি যে প্রতিষেধকগুলিকে ছাড়পত্র পেয়েছে সেগুলিকে ভারতেও ছাড়পত্র দেবে কেন্দ্র। গত ১৩ এপ্রিল ওই সিদ্ধান্তের পরে আজ এক দফা নির্দেশিকা জারি করে কেন্দ্র জানিয়েছে, প্রতিষেধকের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি ও এ দেশে উৎপাদনের প্রশ্নে নিয়ম সরল করা হয়েছে। যাতে প্রয়োজনে এ দেশে দ্রুত উৎপাদনে সক্ষম হয় সংস্থাগুলি।

আজ নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বিদেশি সংস্থাগুলি ভারতে তাদের প্রতিষেধকের ছাড়পত্রের জন্য সরাসরি সিডিএসসিও-র কাছে আবেদন জানাতে পারবে। আবেদন জানানোর পদ্ধতি সিডিএসসিও-র ওয়েবসাইটে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিদেশি প্রতিষেধক সংস্থাগুলি তাদের ভারতীয় শাখার মাধ্যমে সিডিএসসিও-র কাছে আবেদন জানাতে পারবে। যদি ভারতীয় শাখা না থাকে তা হলে কোনও এজেন্টের মাধ্যমে আবেদন জানাতে পারবে। যে কোনও বিদেশি প্রতিষেধক এ দেশে প্রথম একশো জন স্বেচ্ছাসেবকের উপরে কেমন প্রভাব ফেলে তা খতিয়ে দেখা হবে। যার ফলাফলের ভিত্তিতে চূড়ান্ত ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে ডিসিজিআই। আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, প্রতিষেধক ব্যবহারের প্রশ্নে যে জাতীয় নীতি রয়েছে তা মেনে প্রতিষেধক প্রয়োগ করতে হবে বিদেশি সংস্থাগুলিকে। অনুমতি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে একশো জনের উপরে ওই পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করতে হবে বিদেশি সংস্থাগুলিকে।

Advertisement

স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, প্রতিষেধক সংক্রান্ত জাতীয় নীতি মেনে বিদেশি প্রতিষেধকের ব্যাচকে ছাড়পত্র দেবে কসৌলি-র সেন্ট্রাল ড্রাগস ল্যাবরেটরি (সিডিএল)। সিডিএলের ছাড়পত্র পাওয়া ওই প্রতিষেধক দিয়েই প্রথম একশো জনের উপরে প্রতিষেধক পরীক্ষামূলক ভাবে প্রয়োগ করতে হবে বিদেশি সংস্থাকে। প্রতিষেধক প্রাপ্ত একশো জনকে সাত দিন নজরদারি করার পরে সেই রিপোর্ট জমা পড়বে সিডিএসসিও-র ঘরে। যা ইতিবাচক হলে তবেই বৃহত্তর ক্ষেত্রে প্রয়োগের ছাড়পত্র পাবে ওই সংস্থা।

কিন্তু সরকারের কাছে সমস্যা হল ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার তিন দিন পরেও এখনও এ দেশে প্রতিষেধক বিক্রিতে আগ্রহ দেখায়নি কোনও বিদেশি সংস্থা। ফাইজ়ার, মডার্না ও জনসন এই তিন সংস্থা ভারতে প্রতিষেধক বিক্রি করতে পারে এই আশা করছে কেন্দ্র। কিন্তু এর মধ্যে জনসনের প্রতিষেধকে আমেরিকায় ছয় জন মহিলার শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ায় সে দেশে ওই প্রতিষেধকের ব্যবহার বন্ধ রেখেছে সংস্থা। ফলে সেই জটিলতা না-কাটা পর্যন্ত জনসনের পক্ষে ভারতে পা দেওয়া মুশকিল। সে ক্ষেত্রে প্রশ্নের মুখে পড়বে সরকার। অন্য দিকে মডার্না সংস্থা ইতিমধ্যেই আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, ইজ়রায়েল, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলির সঙ্গে প্রতিষেধক সরবরাহের চুক্তি করে বসে রয়েছে। প্রায় ১০০ কোটি প্রতিষেধক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাঠানোর চুক্তি রয়েছে ওই সংস্থার। তার পরেই ভারতের পালা। যদিও কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক আজ জানিয়েছে, মডার্না প্রতিষেধক হল ম্যাসেঞ্জার আরএনএ বা এমআরএনএ নির্ভর প্রতিষেধক। এর প্রযুক্তি সরল। মডার্না ভারতীয় সংস্থার সঙ্গে হাত মেলালে ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে এ দেশে ওই প্রতিষেধকের উৎপাদন শুরু সম্ভব। কিন্তু প্রশ্ন হল, তত দিন অপেক্ষা করার মতো সময় কি ভারতের হাতে রয়েছে?

অতীতে ভারতের বাজার ধরতে এক বার আবেদন করে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের মধ্যে যেতে হতে পারে শুনে আবেদন প্রত্যাহার করেছিল ফাইজ়ার। সে সময়ে ফাইজ়ার জানিয়েছিল, তাদের প্রতিষেধক ব্যবহারে কারও শারীরিক সমস্যা হলে তার দায় নেবে না ওই সংস্থা। অন্য দেশগুলি রাজি হলেও সে সময়ে ওই দাবি মানতে চায়নি কেন্দ্র। প্রশ্ন হল আজকের আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কি সেই অবস্থানে শক্ত হয়ে থাকতে পারবে নরেন্দ্র মোদী সরকার? না কি অন্য দেশের মতো ফাইজ়ারের ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার শর্ত মেনে নেবে তারা?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement