প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা।—ফাইল চিত্র।
প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাকে দিল্লির লোদী এস্টেটের সরকারি বাংলো খালি করে দেওয়ার জন্য নোটিস পাঠাল কেন্দ্র। আজ ওই নোটিস দিয়ে বলা হয়েছে, প্রিয়ঙ্কার নামে এই বাংলোর বরাদ্দ বাতিল করা হচ্ছে। তাঁকে এক মাস সময় দেওয়া হচ্ছে অন্য বাড়ি দেখে নেওয়ার জন্য। পয়লা অগস্টের পরেও বাড়ি খালি না করলে সাজার মুখে পড়তে হবে।
সরকারি নিয়ম মেনেই এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে নোটিসে জানানো হয়েছে। গাঁধী পরিবার এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের উপর থেকে এসপিজি নিরাপত্তা নভেম্বর মাসেই তুলে নিয়েছে কেন্দ্র। সুতরাং এসপিজি নিরাপত্তার অন্তর্গত সুরক্ষাবলয়ে বাংলো পাওয়ার অধিকারও হারাবেন ওঁরা। সেই কারণেই প্রিয়ঙ্কাকে ৩৫ লোদী এস্টেটের ৬বি টাইপ বাংলোটি ছাড়তে হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় আবাসন মন্ত্রক। ১৯৯৭ সাল থেকে এই বাড়িতে রয়েছেন প্রিয়ঙ্কা। তিনি এবং পুরো গাঁধী পরিবার বর্তমানে জ়েড প্লাস নিরাপত্তা পাচ্ছেন। তাতে সরকারি বাংলো পাওয়ার কথা নয়।
গত বছরই এসপিজি আইন পরিবর্তন করে কেন্দ্র। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তখনই এ নিয়ে যথেষ্ট প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। নতুন আইনে বলা হয়, একমাত্র প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সঙ্গে বসবাসকারী তাঁর পরিবারের সদস্য ছাড়া আর কাউকে এসপিজি নিরাপত্তা দেওয়া হবে না। পুরনো আইনে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁদের পরিবারও এই নিরাপত্তা পেতেন।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের সীমান্তকে অস্ত্র করতে কৌশলী চিন
আজ কেন্দ্র যে ভাবে করোনা-পরিস্থিতির মধ্যে প্রিয়ঙ্কাকে বাড়ি খালি করার নোটিস ধরাল, সেটা প্রতিহিংসামূলক মনোভাবের পরিচয় বলেই মনে করছে কংগ্রেস। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংহ আজ নতুন করে গাঁধী পরিবারের জন্য এসপিজি ফেরানোর দাবি তোলেন। তাঁর মতে, গাঁধী পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে আর কোনও আশঙ্কা নেই, এ ধারণা ভুল। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘কংগ্রেস নেতৃত্বের প্রতি বিজেপি ও মোদী সরকারের অন্ধ ঘৃণা ও প্রতিশোধের ভাবনাই এতে স্পষ্ট। বাড়ি খালি করার নোটিসেও মোদীজি-যোগীজির অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। এই তুঘলকি সিদ্ধান্তে আমরা ভয় পাই না।’’ তবে সূত্রের মতে, গাঁধী পরিবারের নির্দেশ মেনে এখন এ নিয়ে খুব উচ্চগ্রামে প্রতিবাদের পথে হাঁটছে না কংগ্রেস। বরং লখনউয়ে গোখলে রোডে ইন্দিরা গাঁধীর মামিমা প্রয়াত শীলা কলের বাড়িটি প্রিয়ঙ্কার নতুন ঠিকানা হতে যাচ্ছে বলে খবর।
আরও পড়ুন: চিনের বিরুদ্ধে ‘আর্থিক ত্রিশূল’ হামলা দিল্লির
২০২২ সালে ভোট উত্তরপ্রদেশে। প্রিয়ঙ্কাই সেখানে কংগ্রেসের মুখ। যোগী আদিত্যনাথের সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার সুর চড়িয়ে চলেছেন তিনি। আজও মোদীর লোকসভাকেন্দ্র বারাণসীর তাঁতিদের জন্য আর্থিক প্যাকেজ চেয়ে সরব হয়েছেন। এখন গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে এক নাগাড়ে আক্রমণ শানিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি প্রিয়ঙ্কাকে অস্বস্তিতে রেখে চলাটা বিজেপির অন্যতম কৌশল, এমনটাই ধারণা রাজনৈতিক শিবিরের। ঘটনাচক্রে এ দিন প্রিয়ঙ্কার স্বামী রবার্ট বঢরার সহযোগী সঞ্জয় ভণ্ডারীর বিরুদ্ধেও মামলা করেছে সিবিআই।
উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেসের নেতারা অবশ্য দমছেন না। তাঁদের মতে, দিল্লির বাংলো ছাড়তে যে হবে, সে তো এসপিজি সরে যাওয়ার পরে জানাই ছিল। প্রিয়ঙ্কাও লখনউয়ে চলে আসবেন বলে ঠিক ছিল। লকডাউন না হলে এত দিনে তিনি নবাবের শহরে চলেই আসতেন! লোদী এস্টেটের বাংলো ছেড়ে গোখলে রোডের নতুন ঠিকানায় প্রিয়ঙ্কাকে স্বাগত জানাতেই কোমর বাঁধছেন উত্তরপ্রদেশের নেতারা।