প্রতীকী ছবি।
১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের জন্য প্রথম বারের প্রতিষেধক, স্বাস্থ্যকর্মী ও করোনা মোকাবিলায় প্রথম সারির যোদ্ধা এবং গুরুতর রোগে আক্রান্ত ৬০ বছরের বেশি বয়সিদের জন্য সতর্কতামূলক টিকা— এই তিন মিলিয়ে প্রায় ২০ কোটি মানুষের টিকাকরণের বন্দোবস্ত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বড়দিনের রাতে কোভিডের টিকাকরণের নতুন পর্যায় ঘোষণা করার পরে চলতি বছরের বাকি কয়েক দিনের মধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার পুরো রূপরেখা তৈরি করে ফেলতে চাইছে। প্রাথমিক ভাবে দু’টি বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রথম বিষয় হল, ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের জন্য কোন টিকা ব্যবহার করা হবে। ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন ও জ়াইডাস ক্যাডিলার জ়াইকভ-ডি, ১৮ বছরের কম বয়সিদের জন্য এই দুই টিকাই সরকারি ছাড়পত্র পেয়েছে। ২০১১-র জনগণনার ভিত্তিতে সরকারি অনুমান অনুযায়ী, দেশে এখন ১৫-১৮ বছর বয়সিদের সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি। প্রাথমিক ভাবে দু’টি টিকাই কাজে লাগানো হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় বিষয় হল, বয়স্কদের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ডোজ় টিকা নেওয়ার কত দিন পরে সতর্কতামূলক বা প্রিকশনারি ডোজ় দেওয়া হবে? সরকারি অনুমান অনুযায়ী, দেশে ৬০ বছরের বেশি বয়সি মানুষের সংখ্যা এখন ১৩.৮ কোটি। এর মধ্যে সকলেই দু’ডোজ় টিকা পেয়েছেন, এমন নয়। ১২ কোটির মতো প্রবীণ নাগরিক শুধু প্রথম ডোজ় নিয়েছেন। ৯.২ কোটি প্রবীণের দু’ডোজ় টিকাকরণ হয়েছে। তাঁদেরই সতর্কতামূলক ডোজ় দেওয়া হবে। কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার কত দিন পরে সতর্কতামূলক ডোজ় দেওয়া হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
সরকারি সূত্রের খবর, এ বিষয়ে প্রথমে কোভিড টিকাকরণ বিষয়ে তৈরি সরকারের দুই শীর্ষ কমিটি, এনটিএজিআই (ন্যাশনাল টেকনিক্যাল অ্যাডভাইসরি গ্রুপ অন ইম্যুনাইজ়েশন) ও এনইজিভিএসি (ন্যাশনাল এক্সপার্ট গ্রুপ অন ভ্যাক্সিন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ফর কোভিড)-এর বৈঠক বসবে। এই দুই বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের আমলারা বৈঠকে বসবেন। তার পরে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে বৈঠকে পুরো বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রের বক্তব্য, গোটা বিশ্ব ওমিক্রনের চোখ রাঙানিতে বুস্টার ডোজ়ের পথে হাঁটলেও প্রধানমন্ত্রী এ দেশে সতর্কতামূলক বা প্রিকশনারি ডোজ়ের কথা বলেছেন। কারণ স্বাস্থ্যকর্মী, বয়স্ক নাগরিকদের মধ্যে যাঁরা ৬ থেকে ৮ মাস আগে টিকা নিয়ে ফেলেছেন, তাঁদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়েছে বলে আশঙ্কা থেকেই এই টিকা দেওয়া হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যকর্মী, ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার, বয়স্ক মানুষ ও তাঁদের পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক কমবে। ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যকর্মী ও বয়স্ক নাগরিক ছাড়া অন্যান্যদের জন্যও একই ভাবে সতর্কতামূলক ডোজ় দেওয়া হতে পারে।
স্বাস্থ্যকর্মী, ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার ও বয়স্কেরা প্রথমে যে টিকা নিয়েছিলেন, সতর্কতামূলক ডোজ়ের ক্ষেত্রে তাঁদের অন্য কোনও টিকা দেওয়া হবে কি না, তা নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে। তবে কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। বায়োলজিকাল-ই সংস্থার কোরবেভ্যাক্স, সিরাম ইনস্টিটিউটের কোভোভ্যাক্স, ভারত বায়োটেকের ন্যাজ়াল ভ্যাক্সিন ও জেনোভা-র তৈরি প্রথম এম-আরএনএ ভ্যাক্সিন নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে বলে সূত্রের খবর।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সি ১০ কোটি কিশোর-কিশোরীকে টিকা দিতে হবে। তার সঙ্গে দু’ডোজ় টিকা নিয়ে ফেলা ৯.২ কোটি বয়স্কদের মধ্যে কত জন সতর্কতামূলক ডোজ় টিকা নেবেন, তা দেখা হবে। সমীক্ষা অনুযায়ী, বয়স্ক নাগরিকদের ৭৫ শতাংশ মানুষেরই বিভিন্ন রকম রোগ বা কোমর্বিডিটি রয়েছে। এর সঙ্গে প্রায় ৩ কোটি স্বাস্থ্যকর্মী ও ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার রয়েছেন। দেশের প্রায় ১.০৩ কোটি স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে ৯৬ লক্ষ জনের দু’ডোজ় টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে। ১.৮৩ কোটি ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারের মধ্যে দু’ডোজ় টিকা পেয়েছেন ১.৬৮ কোটি জন।