আস্থা ভোটে সোমবার জয় প্রায় নিশ্চিত ছিল উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হরীশ রাওয়াতের। তার এক দিন আগেই রবিবার নাটকীয়ভাবে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হল এই সীমান্ত-রাজ্যে।
রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করতে গতকাল রাতেই অসম সফর কাটছাঁট করে দিল্লি চলে আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাতে মন্ত্রিসভার জরুরী বৈঠক ডেকে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশও পাঠানো হয়। আজ তাতে সিলমোহর বসার পর বিজেপি বলে, সংবিধান ভেঙ্গে পড়াতেই এই সিদ্ধান্ত। আর তাতে অনুঘটকের কাজ করেছে একটি স্টিং অপারেশন। পশ্চিমবঙ্গে ভোটের মুখে আর একটি স্টিং অপারেশন যে ভাবে বেগ দিচ্ছে তৃণমূলকে, উত্তরাখন্ডে স্টিং অপারেশনকে শেষ হাতিয়ার করেই রাষ্ট্রপতি শাসন লাগিয়ে ফেলল মোদী সরকার। কংগ্রেসের বক্তব্য, হরীশ রাওয়াত সরকার টিকে থাকবে বুঝতে পেরেই গণতন্ত্রকে হত্যা করল মোদী সরকার। রাষ্ট্রপতি শাসনের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে এখন আদালতে যাচ্ছে কংগ্রেস।
রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পর মোদী সরকারের সেনাপতি অরুণ জেটলি বলেন, এ মাসের ১৮ তারিখে বাজেট পেশের আগেই বিজেপি ও কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ বিধায়করা স্পিকারের কাছে লিখিতভাবে ভোটাভুটির দাবি করেন। বাজেট পেশের সময়ও করেন। সে সময় রাওয়াত সরকার সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও স্পিকার তা উপেক্ষা করেন। যার ফলে বাজেট পেশই হয়নি। ১ এপ্রিল থেকে কোনও সরকারি কাজে টাকা আসবে না। কর্মীরা বেতনও পাবেন না। কেন্দ্রকেই এখন সেটি করতে হবে। তারপর স্টিং অপারেশনে স্পষ্ট, মুখ্যমন্ত্রী নিজে বিধায়ক কেনাবেচায় নেমেছেন। সব মিলিয়ে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হওয়ায় সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি উপযুক্ত।
কিন্তু সূত্রের মতে, রাজ্যপাল কৃষ্ণকান্ত পল কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কোনও রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশই করেননি। তা সত্ত্বেও কেন কেন্দ্র রাষ্ট্রপতি শাসনের পথেই হাঁটল। জেটলির ব্যাখ্যা, সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি শাসন রাজ্যপালের সুপারিশ বা সুপারিশ ছাড়াও করা যায়। বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের এক্তিয়ারে। বিজেপি নেতৃত্ব যে রাজ্যপালের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ, তা আজ রাজ্যের নেতা ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভগৎ সিংহ কোশিয়ারির মন্তব্যেই স্পষ্ট। তিনি বলেন, রাজ্যপাল তাঁর ভূমিকা পালন করেননি। বাজেট পাশ না হওয়া সত্ত্বেও স্পিকার সেটি ধ্বনিভোটে পাশ বলে মেনে নেন। রাজ্যপালও তার স্বীকৃতি দেন। তার উপর দীর্ঘ দশ দিনের সময় দেন মুখ্যমন্ত্রীকে আস্থা ভোটের জন্য। যাতে বিধায়ক কেনাবেচা করার সুযোগ পান মুখ্যমন্ত্রী।
হরীশ রাওয়াত অবশ্য আজ সকালেই রাষ্ট্রপতি শাসনের আঁচ পেয়েছিলেন। সকালেই সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি নিজেকে ‘শহিদ’ হিসেবে তুলে আবেগের তাস খেলেন। বলেন, ‘‘এবারে আমি জনতার দরবারে যাব।’’ কিন্তু রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পর গোটা কংগ্রেস নেতৃত্ব আসরে নেমে বলেন, আসলে স্পিকার কংগ্রেসের ন’জন বিক্ষুব্ধ বিধায়ককে বরখাস্ত করার সিদ্দান্ত নিয়েছিলেন। তাঁরা আগামিকাল আস্থা ভোটে আসতে না পারলে হরীশ রাওয়াত অনায়াসে সরকার বাঁচিয়ে নিতেন। কপিল সিব্বলের বক্তব্য, আসলে মোদী সরকার কংগ্রেস-মুক্ত দেশ চান। তাই বেছে বেছে কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিতে অস্থিরতা তৈরি করে সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করছে। অরুণাচলের পর এখন উত্তরাখণ্ড। অদূর ভবিষ্যতে কোপ পড়তে পারে আরও কংগ্রেস শাসিত রাজ্যে। বিজেপির হাজারো স্টিং বাজারে রয়েছে। তারা সেই সময় বিজেপি শাসিত রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন করে না। এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কংগ্রেস হাইকোর্টে যাবে।
আরও পড়ুন:
অসমের চা-ঋণ শুধতে চান মোদী