শিক্ষাবিদ তথা সমাজকর্মী নোম চমস্কি। ছবি: সংগৃহীত।
ভারতে একটি সাহিত্য উৎসবে নোম চমস্কি এবং সাংবাদিক বিজয় প্রসাদের অনলাইন আলোচনা আচমকা বাতিল হয়ে গিয়েছে। শুক্রবার রাত ৯টার সময়ে চমস্কির নতুন বই নিয়ে আলোচনার কথা ছিল। চমস্কি ও প্রসাদ জানিয়েছেন, দুপুর ১টা নাগাদ আচমকাই তাঁদের ইমেলে আলোচনা বাতিলের কথা জানানো হয়। চমস্কি এবং প্রসাদের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘কেন আমাদের আলোচনা বাতিল করা হয়েছে, তা আমরা জানি না। ফলে আমরা কেবল জল্পনা করতে পারি বা প্রশ্ন তুলতে পারি যে এটা সেন্সরশিপ কি না?’’ যদিও এ বিষয়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত মুখ খোলেননি ওই সাহিত্য উৎসবের ডিরেক্টর অনিল ধরকর অথবা উদ্যোক্তাদের কেউই।
শুক্রবার রাত ৯টায় মুম্বইয়ের টাটা লিট ফেস্ট-এর জন্য ভার্চুয়াল মাধ্যমে একটি আলোচনায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল চমস্কির। তাঁর সঙ্গে ওই আলোচনার প্যানেলে ছিলেন বিজয় প্রসাদ। চমস্কির নতুন বই ‘ইন্টারন্যাশনালিজম অর এক্সটিংশন’ নিয়েও তাতে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। ওই আলোচনাচক্র নিয়ে গতকাল সকাল ৯টাতেও দু’জনের সঙ্গে ই-মেল মারফত যোগাযোগ করেছিলেন উদ্যোক্তারা। তবে দুপুর ১টা নাগাদ আচমকাই তাঁদের ইমেল করে জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি’তে ওই আলোচনাচক্র বাতিল ঘোষণা করা হচ্ছে। তবে সেই ‘অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি’ আসলে কী— তা নিয়ে সবিস্তার কিছু জানাননি মুম্বই সাহিত্য উৎসবের উদ্যোক্তারা।
অনুষ্ঠান শুরুর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে তা বাতিল হওয়ার পর তা নিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন চমস্কি এবং বিজয়। তাঁরা লিখেছেন, ‘একটি সাঙ্কেতিক ইমেল পেয়েছি। তাতে লেখা, অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে আমাদের আজকের আলোচনাচক্র বাতিল করতে হচ্ছে। এর জন্য দুঃখিত’। এর পরেই ওই বিবৃতিতে চমস্কিরা লিখেছেন, ‘অনুষ্ঠান বাতিল করা নিয়ে এখনও পর্যন্ত উৎসবের ডিরেক্টর অনিল ধরকর আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি’। গোটা ঘটনা নিয়ে তাঁদের প্রশ্ন, ‘যে হেতু জানি না কেন টাটা এবং ধরকর আমাদের অনুষ্ঠান বাতিল করলেন, সে হেতু আমরা কেবলমাত্র জল্পনাই করতে পারি— এটা কি আসলে সেন্সরশিপ’? দেশে গণতন্ত্রের অবক্ষয় যে একটি গুরুতর বিষয়, এ দিনের বিবৃতিতে তা-ও উল্লেখ করেছেন তাঁরা। সিএএ-এর মতো আইনের মাধ্যমে নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও বিবৃতিতে দাবি চমস্কিদের। পাশাপাশি, তাঁরা মনে করেন, অর্থের মাধ্যমে ভারতীয় ভোটারদের মুখ বন্ধ করার প্রয়াসই আসল সমস্যা। সেই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং আমেরিকার সঙ্গে নিরাপত্তা বিষয়ক বৈঠকে ভারত সরকারের অংশগ্রহণেরও সমালোচনা করেছেন চমস্কিরা।
আরও পড়ুন: কাজের ‘স্বাধীনতা’ চান ক্ষুব্ধ শুভেন্দু, আগামী সপ্তাহে ফের আলোচনায় সৌগত
আরও পড়ুন: রাতভর আলোচনার পর শোভন-বৈশাখী নিয়ে ফের তাল কাটল সকালের এক ফোনে
নিজেদের উপর নিষেধাজ্ঞার খাঁড়া নেমে এল কি না, তা নিয়ে চমস্কিদের প্রশ্ন তোলার আগে থেকেই অবশ্য এই অনুষ্ঠান ঘিরে বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করেছিল। নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধ স্বর হিসেবে পরিচিত চমস্কি এই অনুষ্ঠানে সিএএ-বিরোধী মতামত ব্যক্ত করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছিল। সেই সঙ্গে উৎসবের মুখ্য স্পনশর টাটাদের বিরুদ্ধেও তিনি সরব হতে পারেন বলে মনে করছিলেন অনেকে। ওড়িশা, জগদলপুর বা ছত্তীসগঢ়ের কারখানা গড়ার জন্য সেখানকার ভূমিপুত্রদের উচ্ছেদের অভিযোগ উঠেছে টাটাদের বিরুদ্ধে। সেই টাটাদের অনুষ্ঠান বয়কট করার জন্য আগে থেকেই চমস্কির কাছে আবেদন করেছেন নাগরিক সমাজ তথা বিদগ্ধজনদের একাংশ। তবে তিনি যে অনুষ্ঠান বয়কট করবেন না, তা আগেই জানিয়েছিলেন চমস্কি। যদিও অনুষ্ঠানের শুরুতে এ নিয়ে সরব হতে পারেন বলে জল্পনা তীব্র হচ্ছিল। তবে ওই অনুষ্ঠান বাতিল করে অন্য এক জল্পনার জন্ম দিল সাহিত্য উৎসব!