প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় আজ আদালত থেকে শুরু করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন—সব পক্ষের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ল সিবিএসই।
আদালতের নজরদারিতে প্রশ্ন ফাঁসের তদন্তের দাবি জানিয়ে দিল্লি হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানি ছিল আজ। হাইকোর্ট সিবিএসই কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চায়, দশম শ্রেণির অঙ্ক পরীক্ষা কবে হবে? স্পষ্ট জবাব দিতে পারেনি সিবিএসই কর্তৃপক্ষ। কেন্দ্রীয় বোর্ড আদালতকে জানায়, তদন্ত চলছে। চূড়ান্ত রিপোর্ট এলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে একটি সূত্রের মতে, বোর্ডের বড় অংশ নতুন করে দশম শ্রেণির অঙ্ক পরীক্ষা নেওয়ার বিপক্ষে। কারণ, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, দিল্লি ও হরিয়ানার অল্প সংখ্যক পরীক্ষার্থীর কাছেই ওই প্রশ্নপত্র পৌঁছেছিল। দুই রাজ্যের দু’লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে সেই সংখ্যা নগণ্য। ফলে নতুন করে পরীক্ষা নিলে অহেতুক বিভ্রান্তি ছড়াবে। বিশেষত অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীই যেখানে ফের পরীক্ষার বিপক্ষে, তখন নতুন করে পরীক্ষা নিয়ে বির্তক বাঁধানো কেন?
সিবিএসই এর আগে জানিয়েছিল, যদি অঙ্ক পরীক্ষা হয়, তাহলে তা হবে জুলাইয়ে। দিল্লি হাইকোর্টের কার্যনির্বাহী প্রধান বিচারপতি গীতা মিত্তল ও বিচারপতি হরিশঙ্কর আজ দশম শ্রেণির পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ এ ভাবে ঝুলিয়ে রাখার সমালোচনা করে পর্যবেক্ষণে জানান, দশম শ্রেণির ফলাফলের ভিত্তিতেই ছাত্র-ছাত্রীরা ভবিষ্যতে কী নিয়ে পড়াশুনো করবে, তা ঠিক হয়। কিন্তু প্রায় তিন মাস পরে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তে ওই পরীক্ষার্থীদের একটি বছর নষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলেই মনে করছে আদালত। বিচারপতিদের কথায়, ‘‘দশম শ্রেণির পরীক্ষার্থীদের মাথায় খাঁড়া ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ আগামী ১৬ এপ্রিলের মধ্যে এ নিয়ে নিজেদের চূড়ান্ত অবস্থান জানাতে হবে সিবিএসই-কে। এছাড়া, আদালতের নজরদারিতে তদন্ত হলে সিবিএসই ও কেন্দ্রকে নিজেদের বক্তব্য আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে।
আদালতের নজরদারিতে প্রশ্ন ফাঁসের তদন্ত করার দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে সারা ভারত অভিভাবক সংগঠন। আগামী বুধবার প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বেঞ্চে ওই মামলার শুনানি হবে। ওই মামলাতেও দশম শ্রেণির অঙ্ক পরীক্ষা নিয়ে সিবিএসই কী ভাবছে, তা দ্রুত স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
আরও পড়ুন: প্রশ্ন ফাঁস রুখতে গিয়ে দেরিতে শুরু হল পরীক্ষাই!
ছাত্র-ছাত্রীদের কথা ভেবে সরব জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ মন্ত্রকের স্কুল শিক্ষাসচিব অনিল স্বরূপ ছাড়াও সিবিএসই চেয়ারপার্সন অনিতা করবালকে আজ কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠায় কমিশন। তাতে বলা হয়েছে, ছাত্রছাত্রীদের ভরসার মূল্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে বোর্ড। প্রশ্ন ফাঁস, তারপরে পরীক্ষা বাতিল হওয়ার সিদ্ধান্তে পরীক্ষার্থীদের উপর যে মানসিক চাপ তৈরি হয়েছে, তা কাটাতে কেন্দ্রীয় বোর্ড কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তাও বিস্তারিত ভাবে জানাতে বলেছে কমিশন।
একে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মানসিক চাপ, তার সঙ্গেই পরীক্ষার্থীদের বিপদ বাড়িয়েছে দলিতদের ডাকা ভারত বন্ধ জনিত অশান্তি। আগাম অশান্তির আঁচ পেয়ে আজ রাজ্যে পরীক্ষা বন্ধ রাখার আর্জি জানিয়েছিল পঞ্জাব সরকার। তাই বাকি দেশে আজ দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা হলেও, পঞ্জাবে হয়নি। আজকের পরীক্ষা কবে হবে, তা পরে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সিবিএসই।