রাজীব-কাণ্ডে ‘তাড়াহুড়ো’ কেন, সুপ্রিম কোর্টে শুনানির আগে প্রশ্ন সিবিআইয়েই

সিবিআইয়ের আইনি অফিসারদের আশঙ্কার কারণ হল, সুপ্রিম কোর্ট ২০১৮-র জুলাইতেই বলে দিয়েছিল রাজ্য প্রশাসন তদন্তে বাধা দিলে সিবিআই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:২৭
Share:

—ফাইল চিত্র।

তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে তার খেসারত দিতে হবে না তো! আগামিকাল সুপ্রিম কোর্টে শুনানির আগে এই চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছে সিবিআইয়ের অন্দরমহলে।

Advertisement

সিবিআইয়ের আইনি অফিসারদের আশঙ্কার কারণ হল, সুপ্রিম কোর্ট ২০১৮-র জুলাইতেই বলে দিয়েছিল রাজ্য প্রশাসন তদন্তে বাধা দিলে সিবিআই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে। কিন্তু কলকাতার পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে হানা দেওয়ার আগে তাঁর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যায়নি সিবিআই। রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার কথাও এর আগে কোনও আদালতে তোলা হয়নি।

আজ নতুন সিবিআই ডিরেক্টর ঋষিকুমার শুক্ল দায়িত্ব নেওয়ার পরে অন্যান্য শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে নয়া ডিরেক্টর জানিয়ে দিয়েছেন, অফিসারদের রুলবুক মেনে কাজ করতে হবে। মাথার রাখতে হবে সিবিআইয়ের গৌরবোজ্জ্বল অতীত রয়েছে। এই সংস্থার কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। তাই পেশাদারি দক্ষতার সঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন। ওই বৈঠকে কলকাতার প্রসঙ্গ নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টে সিবিআইয়ের মামলা

• রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পুলিশের ডিজি, এডিজি, কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে নিয়ে ধর্নায় বসেছেন। পুলিশ অফিসারদের উর্দিতে ধর্নায় বসা প্রমাণ করে কলকাতায় নৈরাজ্য চলছে
• কলকাতার পুলিশ কমিশনার সমনে সাড়া দেননি, তিনি প্রমাণ লোপাট করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে
• সিবিআইয়ের কাছে পুলিশ কমিশনারকে কোনও পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতার করার যথেষ্ট তথ্য রয়েছে
• রাজ্যে সাংবিধানিক তন্ত্র ভেঙে পড়ার প্রমাণ হল, পুলিশ কমিশনারের বাসভবনে যাওয়া ২৫ জন সিবিআই অফিসারকে বেআইনি ভাবে আটক করে রাখা ও তাঁদের মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া
• অসাংবিধানিক আঘাত করে সিবিআইয়ের যুগ্ম-অধিকর্তা পঙ্কজ শ্রীবাস্তবের বাড়ি ঘিরে ফেলে কলকাতা পুলিশ, বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও কন্যাও ছিলেন

সিবিআইয়ের আর্জি

• রাজীব কুমারকে আত্মসমর্পণ বা সিবিআইয়ের সামনে হাজির হওয়ার নির্দেশ
• রাজীব কুমারকে তদন্তে সহযোগিতার নির্দেশ
• সুপ্রিম কোর্টের রায় মানার নির্দেশ

সিবিআই সোমবার সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ তুলেছে। যুক্তি হল, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শুরু হওয়া সারদা-রোজ ভ্যালির তদন্তে বাধা দিচ্ছে রাজ্য। কিন্তু রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধেই পাল্টা আদালত অবমাননার অভিযোগ তুলতে চলেছে। রাজ্যের অভিযোগ, কলকাতার পুলিশ কমিশনার তথা অন্য পুলিশ কর্তাদের পাঠানো সিবিআইয়ের নোটিসে কলকাতা হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ জারি করেছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও সিবিআই রাজীব কুমারের বাড়িতে হানা দিয়েছে। আজ সুপ্রিম কোর্টে রাজীব কুমারের আইনজীবী অভিষেক মনুসিঙ্ঘভি জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘কলকাতা হাইকোর্টের রায় আমার পক্ষে রয়েছে।’’ সিবিআইয়ের আর্জি ঠিক সময়ে হাতে না পাওয়ায় রাজ্য আজ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রিতে নালিশ জানিয়েছে।

আরও পড়ুন: মমতাকে রাস্তার লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনা খুব বড় ভুল হল না তো? চিন্তায় বিজেপি

রাজ্যের আইনজীবীদের যুক্তি, কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্যের পুলিশ কর্তাদের পাঠানো সিবিআইয়ের সমস্ত নোটিসে স্থগিতাদেশ জারি করেছে। সূত্রের খবর, এই বিষয়ে দিল্লিতে সিবিআইয়ের আইনজীবীদের কাছে কোনও তথ্যই ছিল না। মনুসিঙ্ঘভি এ কথা বলার পরেই খোঁজ পড়ে। কলকাতা থেকে জানানো হয়, স্থগিতাদেশ থাকলেও তা অন্য পুলিশ কর্তাদের বিষয়ে। অন্য মামলায়। তার সঙ্গে এই মামলার কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু রাজ্যের আইনজীবীদের দাবি, হাইকোর্টের রায় রাজীব কুমারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি অরুণ মিশ্রের বেঞ্চের ২০১৮-র ১৬ জুলাইয়ের রায়ও রাজ্যের বড় হাতিয়ার। সরকারি সূত্রের দাবি, সিবিআই কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। সিবিআই ও রাজ্য পুলিশকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলে, ‘রাজ্যের তরফে কোনও বাধা এলে সিবিআই কলকাতা হাইকোর্টে যেতে পারে।’ রাজ্যের যুক্তি হল, রাজীব কুমারের নাম কোনও এফআইআর-এ নেই। তাঁকে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৬০ ধারা অনুযায়ী সাক্ষী হিসেবে ডাকা হয়েছিল। তিনি না গেলে সিবিআই আদালতে যেতে পারত। সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ খাড়া করতে হাতে রয়েছে বিধাননগর পুলিশের তদন্তকারী অফিসারদের বয়ান। যাঁরা বলেছিলেন, সমস্ত নথি তাঁরা সিটের প্রধানের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের বয়ানও রয়েছে। যাকে হাতিয়ার করে বিজেপি দাবি করেছে, একটি লাল ডায়েরি ও পেন ড্রাইভ তিনি পুলিশকে দিয়েছিলেন। কিন্তু দেবযানী নিজেই অন্যতম অভিযুক্ত বলে সেই যুক্তি কতখানি টিকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement