ছবি: সংগৃহীত।
শেষ পর্যন্ত চিট ফাণ্ড মামলায় সিপিএমকে ছুঁল সিবিআই। বাম শাসিত ত্রিপুরার সমাজকল্যাণ মন্ত্রী তথা সিপিএম নেত্রী বিজিতা নাথকে রোজ ভ্যালি কাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিস দিল তারা। বিজিতাদেবী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘সিবিআই অফিসাররা রোজ ভ্যালি মামলায় আমার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন। আমি কথা বলব। আলাদা করে আমার কোনও প্রতিক্রিয়া নেই।’’
গত কাল বিকেলে রাজ্য বিধানসভায় বিজিতা নাথের নামে সিবিআইয়ের কলকাতা অফিসের ইন্সপেক্টর ব্রতীন ঘোষালের সই করা নোটিসটি এসে পৌঁছয়। বিধানসভার এক আধিকারিক জানান, সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা চিঠিটি মন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেন। সিবিআইয়ের নোটিসে বলা হয়েছে, আগামী ২৯ জুন সকাল ১০টায় তাঁদের একটি দল মন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে গিয়ে তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
রোজ ভ্যালি কাণ্ডে বিজিতা নাথ বহু বার শিরোনামে এসেছেন। বিধানসভায় এবং তার বাইরে তৎকালীন বিরোধী দল কংগ্রেস বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছেন, সিপিএমের এই মন্ত্রী তাঁর পদের অপব্যবহার করে রোজ ভ্যালির হয়ে প্রচার করেছেন। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, তিনি তাঁর মন্ত্রী-পদকে ব্যবহার করে রোজ ভ্যালিকে ত্রিপুরায় চিট ফান্ডের আমানত সংগ্রহ করতে সাহায্য করেছেন। অভিযোগ, তিনি নিজে এই চিট ফান্ডের এজেন্ট ছিলেন। খোদ রাজ্যের মন্ত্রী এজেন্ট থাকায় সাধারণ মানুষ রোজ ভ্যালির উপরে বিশেষ ভরসা করেছিলেন। জমা করেছিলেন আমানত। যদিও মন্ত্রী প্রতি বারই তা অস্বীকার করেছেন।
তবে শেষ পর্যন্ত সিবিআই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাওয়ায় আগামী ভোটের আগে খানিকটা অস্বস্তিতে পড়ল শাসক দল। ত্রিপুরা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর প্রথমে এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি। পরে বলেন, ‘‘সিবিআই যদি কোনও নোটিস দেয় বা কথাবার্তা বলতে চায় তাতে তো কোন অসুবিধা নেই। যা জিজ্ঞাস্য আছে জিজ্ঞাসা করুন।’’
ত্রিপুরায় বিভিন্ন চিট ফান্ডের মোট ১৪ লক্ষ আমানতকারী রয়েছেন। তার মধ্যে বৃহৎ আমানত সংগ্রহকারী রোজ ভ্যালিই। আগরতলা অফিসের কর্তা অশোক সাহা এখন ভুবনেশ্বরের জেলে। সিবিআই তাঁকে আগেই গ্রেফতার করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের বিরুদ্ধেও বহু বার আঙুল তুলেছেন বিরোধী নেতারা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, আগরতলায় রোজ ভ্যালির অ্যামিউজমেন্ট পার্কের উদ্বোধন করতে গিয়ে তাঁর ভাষণে রোজ ভ্যালির কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন মানিকবাবু। বিরোধীদের বক্তব্য, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর এই ‘প্রশংসা’-কে রোজ ভ্যালি তাঁদের আমানত সংগ্রহের কাজে ব্যবহার করেছিল। অর্থাৎ পরোক্ষে মানিকবাবুও রোজ ভ্যালিতে আমানত জমা করতে ত্রিপুরাবাসীকে উৎসাহিত করেছিলেন। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পদস্থ সিপিএম নেতার কথায়, আগামী বছরেই রাজ্যে বিধানসভার ভোট। তার আগে সিপিএমকে হেয় প্রতিপন্ন করতেই বিজেপি সিবিআইকে ব্যবহার করছে।