এনসিবি-কর্তা সমীর ওয়াংখেড়ের বিদেশে থাকা-খাওয়া-ঘোরার খরচের হিসাব খুঁজছে সিবিআই। ফাইল চিত্র।
পাঁচ বছরে ছ’বার বিদেশভ্রমণ। তালিকায় রয়েছে ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড, পর্তুগাল, দক্ষিণ আফ্রিকা, মলদ্বীপ। সব মিলিয়ে ৫৫ দিন বিদেশে কাটানো। তা-ও একা নন, সপরিবার। অথচ খরচ মাত্র ৮ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা! যা দিয়ে শুধু মাত্র বিমানের টিকিটের দাম কোনও রকমে মেটানো সম্ভব। তা হলে বিদেশে থাকা-খাওয়া-ঘোরার খরচের হিসাব কোথায়?
আর এই সূত্রেই নিজের দফতরের রিপোর্টে বিদ্ধ হয়েছেন মাদক মামলায় শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খানকে গ্রেফতার করে রাতারাতি শিরোনামে উঠে আসা এনসিবি-কর্তা সমীর ওয়াংখেড়ে। আরিয়ানকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে শাহরুখের কাছ থেকে ২৫ কোটি টাকা আদায়ের চেষ্টা করেছিলেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তদন্তে নেমেছে সিবিআই। একাধিক জায়গায় সমীরের সম্পত্তিতে তল্লাশিও হয়েছে। তারই সূত্র ধরে এনসিবি-রিপোর্টেও সামনে এসেছে তাদের এক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত আধিকারিকের সম্পত্তির পরিমাণ। তার সঙ্গে তাঁর বিদেশভ্রমণের তথ্য সামনে আসায় চোখ কপালে তদন্তকারীদের।
এনসিবি রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ওয়াংখেড়ের একাধিক দামি ঘড়ি রয়েছে। যার মধ্যে রোলেক্সের একটি ঘড়িও আছে। সেটির বাজারদর ২২ লক্ষ টাকা হলেও সমীর তা মাত্র ১৭ লক্ষ টাকায় কিনেছিলেন বলে দাবি। মহারাষ্ট্রের ওয়াসিমে ৪১ হাজার একরের বেশি জমি আছে। পাশাপাশি মুম্বইয়ে এই সরকারি কর্তার চারটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট থাকা সত্ত্বেও গোরেগাঁওয়ে আরও একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন সমীর। সেটির বাজারদর ২.৪৫ কোটি টাকা হলেও তিনি মাত্র ৮২.৮ লক্ষ টাকায় তা কিনেছেন বলে দাবি। বিয়ের আগেও সমীর এবং তাঁর স্ত্রী ১.২৫ কোটি টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। সমীর ও তাঁর স্ত্রীর আয়কর রিটার্নের হিসাব অনুযায়ী, দু’জনে মিলিত ভাবে বছরে উপার্জন করেন ৪৫ লক্ষ ৬১ হাজার ৪৬০ টাকা। তা হলে এত টাকা তাঁর কাছে কোথা থেকে এল, উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পাঁচ বছরে ছ’বার বিদেশ ভ্রমণ। তার মধ্যে শুধু লন্ডনেই ১৯ দিন। অথচ খরচ মাত্র ১ লক্ষ টাকা! মলদ্বীপে নিজের পরিবারের পাশাপাশি বন্ধু বিরল জামালুদ্দিন ও তাঁর পরিবার এবং কাজের লোকেদেরও নিয়ে গিয়েছিলেন সমীর। ছিলেন বিলাসবহুল তাজ এক্সোটিকা হোটেলে। তদন্তকারীদের ধারণা, এই সব ভ্রমণে যা খরচ হয়েছে, তার থেকে বহু গুণ কমিয়ে দেখিয়েছেন সমীর। আর সন্দেহটা সেখানেই। ফলে উঠছে প্রশ্নও। শাহরুখ-পুত্র গ্রেফতারের পরে সমীর এবং তাঁর আয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন এনসিপি নেতা নবাব মালিক। অল্প দিনের মধ্যেই তাঁকে একটি দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করা হয়। নবাব এখনও জেলে। নবাব সেই সময় যে সব প্রশ্ন তুলেছিলেন, তার অনেকগুলিই তদন্তে উঠে এসেছে।