শাসাচ্ছে বিধায়কের দল, আদালতকে আগেই জানিয়েছিল উন্নাও-নির্যাতিতার পরিবার

এ দিনও যেমন মেয়েটির পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারের লোকজন যে ক্রমাগত তাঁদের হুমকি দিচ্ছে, প্রাণে মারার ভয় দেখাচ্ছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

লখনউ শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৯ ০৩:১৮
Share:

দুর্ঘটনাগ্রস্ত সেই গাড়ি। ফাইল চিত্র। পিটিআই।

গতকাল রাতেই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যসচিব ঘোষণা করেছিলেন যে, উন্নাও ধর্ষিতার গাড়ি ট্রাকে পিষে দেওয়ার ঘটনায় তাঁরা সিবিআই তদন্তই সুপারিশ করছেন। আজ কেন্দ্রীয় সরকার ওই মামলা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিল।

Advertisement

কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ এবং জন-অভিযোগ মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রবিবারের ঘটনার পিছনে সম্ভাব্য যাবতীয় ‘প্ররোচনা এবং ষড়যন্ত্র’ খতিয়ে দেখবে সিবিআই। ধর্ষিতার পরিবার এবং বিরোধী দলগুলি সিবিআই তদন্তই চাইছিল। কারণ উন্নাওয়ের ঘটনায় ধারাবাহিক ভাবে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উন্নাও ধর্ষণ মামলাটি আগে থেকেই সিবিআইয়ের হাতে রয়েছে।

এ দিনও যেমন মেয়েটির পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারের লোকজন যে ক্রমাগত তাঁদের হুমকি দিচ্ছে, প্রাণে মারার ভয় দেখাচ্ছে, সে কথা এ মাসের ১২ তারিখেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন ধর্ষিতার মা, বোন ও কাকিমা। জানানো
হয়েছিল পুলিশেও। সঙ্গে ছিল একটি ভিডিয়ো-নথিও।

Advertisement

আজ ওই ভিডিয়োটি সংবাদমাধ্যমকে দেখায় মেয়েটির পরিবার। সেখানে দেখা যাচ্ছে, নীল শার্ট পরা একটি লোক ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ধর্ষিতার বাড়ির সামনে। ধর্ষিতার বোন তাকে বারবার বলছেন চলে যেতে। সে নড়ছে না। বোন প্রশ্ন করছেন, ‘‘কেন এমন করছ? আমরা কী করেছি?’’ লোকটি উত্তর দিচ্ছে, ‘‘তোমরা আমার পরিবারকে শেষ করে দিয়েছ।’’ লোকটি উন্নাও ধর্ষণ মামলার অন্যতম অভিযুক্ত শশী সিংহের স্বামী বলে জানা গিয়েছে। শশীই ধর্ষিতাকে কুলদীপের কাছে নিয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ। শশীর ছেলে এবং গাড়িচালকের বিরুদ্ধেও ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। গত বছর থেকে শশী জেলে। ধর্ষিতার পরিবারের তরফে লেখা চিঠিটিতেও শশীর ছেলে-স্বামী, কুলদীপের ভাই মনোজ নিয়মিত শাসাচ্ছে বলে দাবি করা হয়।

আজ সকাল থেকে ধর্ষিতার পরিবারের কয়েক জন লখনউয়ের কিং জর্জ’স মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে ধর্নায় বসেন। ওই হাসপাতালেই চিকিৎসা চলছে ধর্ষিতা তরুণী এবং তাঁর আইনজীবী মহেন্দ্র সিংহের। দু’জনেই রবিবারের ঘটনায় গুরুতর জখম। এই হাসপাতালের মর্গেই রাখা ছিল মৃত দুই মহিলার দেহ। তাঁরা সম্পর্কে ধর্ষিতার কাকিমা এবং কাকিমার বোন। এ দিনের ধর্নায় পরিবারের তরফে দাবি করা হয় যে, ধর্ষিতার কাকাকে রায়বরেলীর জেল থেকে প্যারোল না দেওয়া
পর্যন্ত তাঁরা দেহ নেবেন না, সৎকারও করবেন না।
শেষ পর্যন্ত ইলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চের বিচারপতি মহম্মদ এফ এ খান ধর্ষিতার কাকাকে এক দিনের প্যারোল মঞ্জুর করেন। আদালতের নির্দেশ, স্ত্রীর সৎকার করার পরে এ দিন সন্ধেয় তাঁকে জেলে ফিরতে হবে। রবিবার কাকার সঙ্গে দেখা করার জন্য রায়বরেলী যাওয়ার পথেই ‘আক্রান্ত’ হয় ধর্ষিতার গাড়ি।

প্রসঙ্গত, ধর্ষিতার কাকাকে জেলে পাঠানোর পিছনেও উন্নাও মামলার প্রধান অভিযুক্ত তথা বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারের দলবলের চক্রান্তই দায়ী বলে অভিযোগ। ধর্ষিতার বাবাকে পিটিয়ে মারার মামলায় প্রধান অভিযোগ যার দিকে, কুলদীপের ভাই সেই অতুল সেঙ্গারই ১৯ বছরের পুরনো একটি মামলা খুঁচিয়ে তুলে ধর্ষিতার কাকাকে ফাঁসিয়েছে বলে পরিবারের দাবি। আপাতত কাকা দশ বছরের জেল খাটছেন। নিজেকে নির্দোষ দাবি করে তাঁর আপিল ইলাহাবাদ
হাইকোর্টে বিচারাধীন। অভিযোগ, ধর্ষিতার বাবাকে নৃশংস ভাবে মেরে আধমরা করে ফেলার পরে এই অতুলই একটি পুরনো মামলার সূত্রে তাঁকে গ্রেফতারও করায়। পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু হয় বাবার। উন্নাও মামলা সিবিআইয়ের হাতে যাওয়ার পরে ধর্ষিতার বাবার মৃত্যু সংক্রান্ত চার্জশিটে অতুলের বিরুদ্ধে খুনের চার্জই দেওয়া হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement