National News

দেশজোড়া উপনির্বাচনে জোর ধাক্কা গেরুয়া রথে, অশনিসঙ্কেত সবচেয়ে বেশি উত্তরপ্রদেশে

দেশ জুড়ে ১০ বিধানসভা এবং ৪ লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন হল। দেশের প্রায় সব প্রান্তেই কোনও না কোনও কেন্দ্রে ভোট হয়েছে। সকাল থেকে গণনার যা গতিপ্রকৃতি, তাতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র খারাপ ফলেরই ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৮ ১২:১১
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

চার বছরের মাথায় পৌঁছে দেশের অধিকাংশ প্রান্তেই স্তিমিত গেরুয়া ঝড়। স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে উপনির্বাচনের ভোটগণনা।

Advertisement

দেশ জুড়ে ১০ বিধানসভা এবং ৪ লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন হল। দেশের প্রায় সব প্রান্তেই কোনও না কোনও কেন্দ্রে ভোট হয়েছে। সকাল থেকে গণনার যা গতিপ্রকৃতি, তাতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র খারাপ ফলেরই ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছে। পঞ্জাবে বিধানসভা আসন হাতছাড়া হচ্ছে বিজেপি-র শরিক অকালি দলের। উত্তরাখণ্ড ও বিহারে নিজেদের হাতে থাকা আসনেই কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এনডিএ প্রার্থীরা। মহারাষ্ট্রে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মুখে মোদী ব্রিগেড। আর সবচেয়ে বড় ধাক্কা উত্তরপ্রদেশে। বিরোধী জোটের সামনে প্রায় নাস্তানাবুদ আদিত্যনাথ।

যে ৪টি লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে ২টি মহারাষ্ট্রে, ১টি উত্তরপ্রদেশে এবং ১টি নাগাল্যান্ডে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি নজর ছিল উত্তরপ্রদেশের কৈরানা লোকসভা কেন্দ্রের দিকেই।

Advertisement

২০১৪ সালে সমস্ত নজির ভেঙে দিয়ে উত্তরপ্রদেশের ৮০টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৭৩টি দখল করে নিয়েছিল বিজেপি। সমাজবাদী পার্টি জিতেছিল ৩টি আসনে। দলের তৎকালীন সুপ্রিমো মুলায়ম সিংহ যাদব নিজে আজমগঢ় ও মৈনপুরী থেকে জিতেছিলেন। পুত্রবধূ ডিম্পল যাদব জিতেছিলেন কনৌজ থেকে। আর কংগ্রেস জিতেছিল ২টি আসনে। রায়বরেলীতে সনিয়া গাঁধী, অমেঠিতে রাহুল গাঁধী। মায়াবতীর বসপা এবং অজিত সিংহের আরএলডি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও বহাল ছিল সেই গেরুয়া ঝড়। সপা-কংগ্রেস জোট গড়েও যোগী আদিত্যনাথকে আটকাতে পারেনি। আলাদা লড়ে বসপা, আরএলডি আরও পিছিয়ে পড়েছিল।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

যত ক্ষণ না সব বিরোধী দল এক হয়ে লড়ছে, তত ক্ষণ আটকানো যাবে না গেরুয়া ঝড়। বুঝে গিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের প্রায় সব অ-বিজেপি নেতাই। মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ এবং উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্যের ছেড়ে দেওয়া দুই লোকসভা কেন্দ্র গোরক্ষপুর এবং ফুলপুরে তাই হাত মিলিয়ে লড়াই করে সপা-বসপা। দুই আসনেই অপ্রত্যাশিত হারের মুখে পড়ে বিজেপি। তার পর থেকেই উত্তরপ্রদেশে আরও গতি পায় জোটের প্রক্রিয়া।

আরও পড়ুন:

লাইভ: লোকসভার আগে বিজেপির রক্তচাপ বাড়িয়ে দিল উপনির্বাচনের ফল

জামাই-কাঁটা উপড়ে মহেশতলায় জয়ী তৃণমূলের দুলাল

কৈরানা লোকসভা কেন্দ্রটিও ২০১৪ সালে বিজেপির হাতেই ছিল। সাংসদ হুকুম সিংহের মৃত্যুতে সেখানে উপনির্বাচন হয়েছে। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের ওই এলাকা আরএলডি-র গড় হিসেবে পরিচিত। তাই ওই আসনে আরএলডি প্রার্থী তবস্সুম হাসানকে সমর্থন করে সপা, বসপা, কংগ্রেস। উল্টো দিকে ছিলেন বিজেপির মৃগাঙ্কা সিংহ। বৃহস্পতিবার সকালে গণনা শুরুর পরে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত মিলছিল। কিন্তু বেলা যত গড়িয়েছে, বিজেপি প্রার্থীকে পিছনে ফেলে ততই এগিয়ে গিয়েছেন আরএলডি-র তবস্সুম।

উত্তরপ্রদেশে একটি বিধানসভা আসনেও উপনির্বাচন হয়েছে। সেই নুরপুরে বিরোধী জোটের তরফ থেকে প্রার্থী দিয়েছিল সপা। হাজার দশেক ভোটে জয়ী হয়েছেন সপা প্রার্থী।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রথমে গোরক্ষপুর-ফুলপুর, তার পরে কৈরানা-নুরপুর— দু’দফার উপনির্বাচনেই স্পষ্ট হয়ে গেল, উত্তরপ্রদেশে বিরোধী শিবির হাত মেলালে বিজেপির জয় প্রায় অসম্ভব। যাঁর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ২০১৪ সালে উত্তরপ্রদেশ থেকে ৭৩টি আসন ঝুলিতে পুরেছিল বিজেপি, সেই অমিত শাহও সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ঘরোয়া আলাপচারিতায় স্বীকার করেছেন, বিরোধী দলগুলি হাত মেলালে, অন্য কোনও রাজ্যে বিজেপি বিপাকে পড়ুক বা না পড়ুক, উত্তরপ্রদেশে পথ কঠিন হবে। পথ যে কঠিন হয়ে গিয়েছে, তা এ বার আরও স্পষ্ট হয়ে গেল।

উপনির্বাচন নিয়ে কী বলছেন সপা সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব? দেখুন:

বিহারেও জোর ধাক্কা খেয়েছে এনডিএ। কয়েক মাস আগের উপনির্বাচনে বিজেপি-জেডি(ইউ) জোটকে হারিয়ে বিহারের অররিয়া লোকসভা এবং জহনাবাদ বিধানসভায় জিতেছিল লালুর আরজেডি। কোনওক্রমে ভভুয়া কেন্দ্রটি ধরে রেখেছিল বিজেপি। এ বার জেডি(ইউ)-এর কব্জায় থাকা জোকিহাট বিধানসভাতেও জয়ী হল আরজেডি।

গত বিধানসভা নির্বাচনে বিহারে আরজেডি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়েছিল নীতীশ কুমারের দল জেডি (ইউ)। বিজেপি তাতে ধরাশায়ী হয়। কিন্তু মাঝপথেই আরজেডি-কংগ্রেসকে ছেড়ে বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে নতুন করে সরকার গড়েন নীতীশ। কিন্তু নীতীশের সেই ডিগবাজির পর থেকে বিহারে যতগুলো উপনির্বাচন হল, তার একটাতেও জেডি(ইউ) প্রার্থীরা জিততে পারলেন না। জেতা আসনও হাতছাড়া হল।

ঝাড়খণ্ডে ২টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন ছিল। ২টিতেই জয়ী হয়েছে বিরোধী দল ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা। আসনগুলি আগেও ওই দলের হাতেই ছিল।

পঞ্জাবে ধাক্কা খেয়েছে এনডিএ। বিজেপির শরিক শিরোমণি অকালি দলের হাতে থাকা শাহকোট আসনের উপনির্বাচনে জয়ী হল সে রাজ্যের শাসক দল কংগ্রেস।

উত্তরাখণ্ডে বিজেপি নিজেদের আসন ধরে রেখেছে। থারালি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে কংগ্রেসকে হারিয়ে জয়ী হয়েছে শাসক দল।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

মহারাষ্ট্রে ২টি লোকসভা কেন্দ্রে এবং ১টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়েছে। বিধানসভা কেন্দ্রটি কংগ্রেসের হাতে ছিল। কংগ্রেসই সেখানে জয়ী হয়েছে। পালঘর ও ভান্ডারা-গোন্ডিয়া লোকসভা কেন্দ্র ছিল বিজেপির হাতে। শরিক শিবসেনার বিরুদ্ধে লড়ে পালঘরে বিজেপি প্রার্থী এগিয়ে রয়েছেন। আর ভান্ডারা-গোন্ডিয়ায় কংগ্রেস সমর্থিত এনসিপি প্রার্থী মধুকর কুকড়ের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে বিজেপি প্রার্থী হেমন্ত পটোলের।

মহারাষ্ট্রে বিজেপির ফলাফল নেতৃত্বের পক্ষে তুলনামূলক ভাবে স্বস্তিদায়ক। শরিক শিবসেনার সঙ্গ ছেড়ে সেখানে একা লড়ছে বিজেপি। তাতেও পালঘর লোকসভা আসন ধরে রাখা প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে তারা। ভান্ডারা-গোন্ডিয়ায় বিজেপি প্রার্থী সামান্য পিছিয়ে রয়েছেন। তবে ওই এলাকার বিজেপি সাংসদ নানা পটোলে দল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পরে যে ধাক্কা বিজেপি-তে লেগেছিল, তাতে ভান্ডারা-গোন্ডিয়া আসনে বিজেপি বিপর্যস্ত হয়ে যাবে বলে বিরোধী দলগুলি দাবি করেছিল। ভান্ডারা-গোন্ডিয়ার প্রাক্তন এনসিপি সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রফুল্ল পটেল এবং পদত্যাগী সাংসদ তথা এলাকার দাপুটে নেতা নানা পটোলে হাত মিলিয়ে ময়দানে নেমেছিলেন এনসিপি প্রার্থী মধুকর কুকড়ের হয়ে। তার পরেও ওই আসনে যে টক্করের ছবি দেখা যাচ্ছে, তাতে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের কিছুটা মুখরক্ষা হয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন।

পশ্চিমবঙ্গে একটি বিধানসভা আসনে নির্বাচন হয়েছে। সেই মহেশতলা আসনে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। তবে কংগ্রেস সমর্থিত বাম প্রার্থীকে পিছনে ফেলে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে।

উত্তর-পূর্ব ভারতে ১টি লোকসভা এবং বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন হয়েছে। মেঘালয়ের আমপাতি বিধানসভা আসন কংগ্রেসের ছিল। কংগ্রেসই জয়ী হয়েছে। আর নাগাল্যান্ড লোকসভা আসনটিতে ২০১৪ সালে এনপিএফ প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন নেফিউ রিও। পরে তিনি এনডিপিপি নামে নতুন দল গড়েন। বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ে বিধানসভা নির্বাচনে লড়েন। তার পরে জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হন এবং সাংসদ পদ ছেড়ে দেন। তাঁর ছেড়ে দেওয়া আসনে তাঁর দলই জিতেছে। আসনটি এনপিএফ ধরে রাখতে পারেনি।

কর্নাটকে রাজরাজেশ্বরীনগর বিধানসভা কেন্দ্রটি গত বার কংগ্রেসের হাতে ছিল। এ বারও সেখানে কংগ্রেসই জয়ী হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement